Home ধর্মীয় প্রশ্ন-উত্তর ফতোয়া: শরীয়তের আলোকে ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন’কে যাকাত দেওয়া যাবে কি?

ফতোয়া: শরীয়তের আলোকে ‘বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন’কে যাকাত দেওয়া যাবে কি?

প্রশ্ন: বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সুবিধা বঞ্চিত শিশুদের জন্য খাবার, বইপত্র ও চিকিৎসাসেবামূলক কিছু কাজ করার দাবি করে। মাঝে মাঝে তাদের এই ধরণের কাজের সচিত্র সংবাদও আমরা দেখতে পাই। তাদের কার্যক্রম সকল ধর্ম-বর্ণ ও নারী-পুরুষের অবাধ অংশগ্রহণে পরিচালিত হয়।

কিশোর কুমার দাশ নামের একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বী কর্তৃক বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন ২০১৩ সালের ২২ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৪ সালের মার্চ মাসে চট্টগ্রাম শাখা এবং সবশেষে ২০২১ সালে খাগড়াছড়িতে বিদ্যানন্দের দ্বাদশ শাখা চালু করা হয়। বর্তমানে দেশব্যাপী বিদ্যানন্দের মোট ১৭টি শাখা রয়েছে।

সংস্থাটির কার্যক্রম ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে শুরু থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন স্তর থেকে ব্যাপক সন্দেহ ও সংশয়মূলক উক্তি শোনা যায়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- সংগঠনটি মূলত: একদিকে সেবার আড়ালে সুকৌশলে হিন্দুত্ববাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ প্রতিষ্ঠা, অন্যদিকে মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদা, ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি ও চেতনাবোধ উৎখাত এবং ইসলাম অসমর্থিত নারী-পুরুষের অবাধ চলাচলে উৎসাহ দান অন্যতম। এছাড়া বহু পর্যায় থেকে এমন সন্দেহও শোনা যায়, সংস্থাটি সেবার আড়ালে কার্যত: ভারতের চরম মুসলিমবিদ্বেষী গোঁড়া হিন্দুত্ববাদি বিজেপি সরকারের হয়ে বাংলাদেশে গোয়েন্দাবৃত্তির কাজই করছে।

এ পর্যায়ে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন কর্তৃক তাদের কথিত সেবামূলক কাজ পরিচালনার লক্ষে দেশের মুসলমানদের প্রতি চলতি মাহে রমজানে যাকাতের অর্থ প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়েছে। কিশোর কুমার দাশের প্রতিষ্ঠিত এবং ব্যাপক সন্দেহ ও সংশয়যুক্ত সংস্থা বিদ্যানন্দে মুসলমানদের যাকাতের অর্থ দেওয়া যাবে কি যাবে না; এই নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে বর্তমানে ব্যাপক বিতর্ক চলছে।

বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন ও সর্ববৃহৎ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার পক্ষ থেকে সমাধান চাচ্ছি যে, মুসলমানদের যাকাতের টাকা বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনে দেওয়া যাবে কিনা? কেউ এই সংস্থায় যাকাতের টাকা দিলে উক্ত ব্যক্তির যাকাত আদায় হবে কিনা?

জবাব বা ফতোয়া

যাকাতের গুরুত্ব শরীয়তে অপরিসীম। যাকাত অনাদায়কারীদের বিরুদ্ধে শরীয়ত কার্যত: যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। যাকাত সম্পূর্ণই একটি মৌলিক ইবাদত। এ জন্য যাকাত মুসলমানের সম্পদে ফরয হয়।

(2/4) بدائع الصنائع في ترتيب الشرائع
وَمِنْهَا الْبُلُوغُ عِنْدَنَا فَلَا تَجِبُ عَلَى الصَّبِي وَهُوَ قَوْلُ عَلِي وَابْنُ عَبَّاسٍ فَإِنَّهُمَا قَالَا: ” لَا تَجِبُ الزَّكَاةُ عَلَى الصَّبِي حَتَّى تَجِبَ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ ” …. وَمِنْ أَصْحَابِنَا مَنْ بَنَى الْمَسْأَلَةَ عَلَى أَصْلِ وَهُوَ أَنَّ الزَّكَاةَ عِبَادَةٌ عِنْدَنَا، وَالصَّبِيُّ لَيْسَ مِنْ أَهْلِ وُجُوبِ الْعِبَادَةِ فَلَا تَجِبُ عَلَيْهِ كَمَا لَا يَجِبُ عَلَيْهِ الصَّوْمُ وَالصَّلَاةُ وَعِنْدَ الشَّافِعِي حَقُّ الْعَبْدِ وَالصَّبِي مِنْ أَهْلِ وُجُوبِ حُقُوقِ الْعِبَادِ كَصَمَانِ الْمُثْلَفَاتِ، وَأَرُوشِ الْجِنَايَاتِ، وَنَفَقَةِ الْأَقَارِبِ وَالزَّوْجَاتِ، وَالْخَرَاج، وَالْعُشر وَصَدَقَةِ الْفِطْرِ، وَلَإِنْ كَانَتْ عِبَادَةً فَهِيَ عِبَادَةٌ مَالِيَّةٌ تُجْرَى فِيهَا النِّيَابَةُ حَتَّى تَتَأَدَّى بِأَدَاءِ الْوَكِيلِ، وَالْوَلِيُّ نَائِبُ الصَّبِيَ فِيهَا فَيَقُومُ مَقَامَهُ فِي إِقَامَةِ هَذَا الْوَاجِبِ بِخِلَافِ الْعِبَادَاتِ الْبَدَنِيَّة؛ لأنَّها لا تَجْرِي فِيهَا النِّيَابَةُ وَمِنْهُمْ مَنْ تَكَلَّمَ فِيهَا ابْتِدَاءً.

অন্যান্য ইবাদতের ন্যায় যাকাতের এই ইবাদতও আদায় হওয়ার জন্য কিছু শর্ত রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হল- যাকাতের অর্থ শরীয়ত কর্তৃক সুনির্ধারিত খাতসমূহে প্রদান করা। যাকাত যথাযথ খাতে প্রদান করা এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, আল্লাহ তাআলা বান্দাকে শুধু যাকাত আদায়ের নির্দেশ দিয়েই ক্ষান্ত হননি; বরং যাকাত ব্যয়ের খাতসমূহ স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে নির্ধারণ করে দিয়ে সুস্পষ্টভাবে ইরশাদ করেন-

إِنَّمَا الصَّدَقْتُ لِلْفُقَرَاءِ وَ الْمَسْكِينِ وَ الْعَمِلِينَ عَلَيْهَا وَ الْمُؤلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَ فِي الرِّقَابِ وَ الْغَرِمِيْنَ وَ فِي سَبِيلِ الله وَ ابْنِ السَّبِيْلِ فَرِيْضَةً مِنَ اللَّهِ وَ اللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ.

অর্থাৎ- যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাত উসূলকারী ও যাদের চিত্তাকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস মুক্তির জন্যে, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে (জিহাদকারীদের জন্য) এবং মুসাফিরদের জন্যে। এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও প্রজ্ঞাময়। (সূরা তাওবা- ৬০)।

এই আয়াতে যাকাতের আটটি খাত নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তা হল-

১. ফকীর।
২. মিসকীন।
৩. আমিলীন (ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান কর্তৃক যাকাত উসূলের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ)।
৪. আলমুআল্লাফা কুলুবুহুম।
৫. আলগারিমীন (ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি)।
৬. রিকার (দাস মুক্তকরণ)।
৭. ফী সাবীলিল্লাহ (আল্লাহর পথে জিহাদকারী)।
৮. ইবনুস সাবীল (নিঃস্ব মুসাফির)।

যাকাত প্রদানকারী মুমিনের কর্তব্য হল, এ সকল বিধি-বিধান জেনে সে অনুযায়ী যাকাত আদায় করা। যেন সম্পদের যাকাত কুরআন-সুন্নাহে বর্ণিত যথাযোগ্য খাতে যথাযোগ্যভাবে ব্যয়িত হয় এবং ফরয দায়িত্ব থেকে মুক্ত হওয়া যায়।

যেমনিভাবে যাকাত শুধু মুসলমানের সম্পদে ফরয হয়; ঠিক তেমনিভাবে যাকাতের অর্থ যাকাতের উপযুক্ত শুধু গরীব মুসলমানদেরকেই মালিক বানিয়ে দিলে যাকাত আদায় হবে। আমুসলমানদেরকে যাকাত দেওয়া যায় না। হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান বা অন্য কোনো অমুসলিমকে যাকাত দেওয়া হলে যাকাত আদায় হবে না।

الھدایۃ امع فتح القدیر 2/266
(وَلَا يَجُوزُ أَنَّهُ يَدْفَعُ الزَّكَاةَ إِلَى ذِمّي) لِقَوْلِهِ – عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ – لِمُعَادٍ – رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ –
خُذْهَا مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ وَرُدَّهَا فِي فُقَرَائِهِمْ». فتح القدير للكمال ابن الهمام (٢/ ٢٦٦)
(قَوْلُهُ لِقَوْلِهِ – صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – لِمُعَاذٍ إِلَخْ) رَوَاهُ أَصْحَابُ الْكُتُبِ السِّتَّةِ مِنْ حَدِيثِ ابْنِ عَبَّابٍ قَالَ: قَالَ – عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ – إِنَّكَ سَتَأْتِي قَوْمًا أَهْلَ كِتَابٍ، فَادْعُهُمْ إِلَى شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنِّي رَسُولُ اللَّهِ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي كُلِ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَأَعْلِمْهُمْ أَنَّ اللَّهَ افْتَرَضَ عَلَيْهِمْ صَدَقَةً تُؤْخَذُ مِنْ أَغْنِيَائِهِمْ فَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ، فَإِنْ هُمْ أَطَاعُوا لِذَلِكَ فَإِيَّاكَ وَكَرَائِمَ أَمْوَالِهِمْ وَاتَّقِ دَعْوَةَ الْمَظْلُومِ فَإِنَّهُ لَيْسَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ اللَّهِ حِجَابٌ

এক্ষেত্রে একটি বিষয় স্মরণ রাখা খুবই জরুরী। তা হল- যাকাত এবং নফল দান-সদকার মাঝে পার্থক্য। সাধারণ দানের জন্য কোনো নেসাব ও বর্ষপূর্তির দরকার হয় না এবং যে কোনো সম্পদই দান করা যায়। কিন্তু যাকাতের বিষয়টি তেমন নয়। যাকাত সব ধরনের সম্পদের উপর ফরয নয়। বরং বিশেষ বিশেষ সম্পদের উপর শর্তসাপেক্ষে যাকাত ফরয হয়। হাদীস ও আসারে যার বিস্তারিত উল্লেখ আছে এবং সে অনুযায়ী ফিকহ-ফতোয়ার কিতাবেও সবিস্তার মাসআলা লিপিবদ্ধ রয়েছে ।

আরও পড়তে পারেন-

তদ্রূপ যাকাত যে কোনো খাতে ব্যয় করা যায় না। যে কোনো ব্যক্তিকে দেওয়া যায় না। যাকাতের খাত সুনির্ধারিত। নির্ধারিত খাতেই কেবল যাকাত আদায় করা যায়। এর বাইরে অন্যত্র যাকাতের সম্পদ ব্যয় করা হলে ফরয দায় থেকে মুক্ত হওয়া যায় না। নফল দান সদকা অমুসলিমদেরকেও দেওয়া যায়। তবে তাও অভাবী মুসলমানগণকে প্রদান করা উত্তম। পক্ষান্তরে যাকাতের বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্ন ।

الھدایۃ امع فتح القدیر 2/266
قَالَ (وَيَدْفَعُ مَا سِوَى ذَلِكَ مِنْ الصَّدَقَةِ) وَقَالَ الشَّافِعِيُّ – رَحِمَهُ اللَّهُ -: لَا يَدْفَعُ وَهُوَ رِوَايَةٌ عَنْ أَبِي يُوسُفَ – رَحِمَهُ اللَّهُ – اعْتِبَارًا بِالزَّكَاةِ. وَلَنَا قَوْلُهُ – عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ – «تَصَدَّقُوا عَلَى أَهْلِ الْأَدْيَانِ كُلِّهَا وَلَوْلَا حَدِيثُ مُعَادٍ – رَضِيَ اللَّهُ تَعَالَى عَنْهُ – لَقُلْنَا بِالْجَوَازِ فِي الزَّكَاةِ. (فتح القدير للكمال ابن الهمام- ٢/ ٢٦٧)
(قَوْلُهُ وَيُدْفَعُ لَهُمْ) أَيْ لِأَهْلِ الذِّمَّةِ مَا سِوَى ذَلِكَ كَصَدَقَةِ الْفِطْرِ وَالْكَفَّارَاتِ، وَلَا يُدْفَعُ ذَلِكَ لِحَرْبِيَ وَمُسْتَأْمَنِ، فُقَرَاءُ الْمُسْلِمِينَ أَحَبُّ
(قَوْلُهُ وَلَوْلَا حَدِيثُ مُعَاذٍ لَقُلْنَا بِالْجَوَازِ) أَيْ بِجَوَازٍ دَفْعِ الزَّكَاةِ إِلَى الذّمِّي، لَكِنَّ حَدِيثَ مُعَادٍ مَشْهُورٌ فَجَازَتْ الزِّيَادَةُ بِهِ عَلَى إِطْلَاقِ الْكِتَابِ أَعْنِي إِطْلَاقَ الْفُقَرَاءِ فِي الْكِتَابِ أَوْ هُوَ عَامٌ خُصَّ مِنْهُ الْحَرْبِيَّ بِالْإِجْمَاعِ مُسْتَنِدِينَ إِلَى قَوْله تَعَالَى {إِنَّمَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ قَاتَلُوكُمْ فِي الدِّينِ} الممتحنة: ۹] فَجَازَ تَخْصِيصُهُ بَعْدُ بِخَبَرِ الْوَاحِدِ

অতএব, একটিকে অন্যটির সাথে গুলিয়ে ফেললে হবে না। যাকাতের টাকা যাকাতের হক্বদারদের নিকট পৌঁছে দিতে হবে। দান যে কাউকে দেওয়া যায়। কিন্তু যাকাত যে কাউকে দেওয়া যায় না । দান আপনি আপনার বিধর্মী ভাইকে করতে পারেন। কিন্তু যাকাত নয়। কাকে যাকাত দেওয়া যাবে, কাকে দেওয়া যাবে না- এর বিস্তারিত বিবরণ কুরআন মাজীদ ও হাদীস শরীফে আছে।

البحر الرائق شرح كنز الدقائق ومنحة الخالق وتكملة الطوري (١/216)
ذَكَرَ الزَّكَاةَ بَعْدَ الصَّلَاةِ؛… وَفِي الْغَايَةِ أَنَّهَا فِي اللُّغَةِ بِمَعْنَى النَّمَاءِ، وَبِمَعْنَى الطَّهَارَةِ وَبِمَعْنَى الْبَرَكَةِ … وَفِي اصْطِلَاحِ الْفُقَهَاءِ مَا ذَكَرَهُ الْمُصَنِّفُ (قَوْلُهُ هِيَ تَمْلِيكُ الْمَالِ مِنْ فَقِيرِ مُسْلِمٍ غَيْرِ هَاشِمِي، وَلَا مَوْلَاهُ بِشَرْطِ قَطْعِ الْمَنْفَعَةِ عَنْ الْمُمَلِكِ مِنْ كُلِ وَجْهِ لِلَّهِ – تَعَالَى -) لِقَوْلِهِ تَعَالَى {وَآتُوا الزَّكَاةَ} [البقرة: ٤٣] وَالْإيتَاءُ هُوَ التَّمْلِيكُ وَمُرَادُهُ تَمْلِيكُ جُزْءٍ مِنْ مَالِهِ، وَهُوَ رُبْعُ الْعُشْرِ أَوْ مَا يَقُومُ مَقَامَهُ عَاا

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হলো যে, বিদ্যানন্দ সংগঠনকে যাকাত আদায়ের উদ্দেশ্যে কেউ যাকাতের অর্থ প্রদান করলে তার যাকাত আদায় হবে না। কারণ, যাকাতের খাত সুনির্দিষ্ট। বিদ্যানন্দ সংগঠনে যাকাত প্রদান করা হলে তা পবিত্র কুরআনে কারীমে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত যাকাতের খাতসমূহে পৌঁছার কোন নিশ্চয়তা নেই। আর এভাবে কেউ যাকাতের নামে সমুদয় সম্পদও দান করলে যাকাত আদায় হবে না ।

কেননা এই ফাউন্ডেশনের আর্থিক ফান্ডের টাকা ইফতারের উদ্দেশ্যে গরিবের জন্য যেমন ব্যায় হয়, আবার পূজার সময় বিভিন্ন ধর্মের মানুষকেও সহায়তা করা হয়। বলা হয়ে থাকে, এক টাকায় আহার সাত টাকায় পূজার বাজার ।

فتح القدير للكمال ابن الهمام (259/2)
فتح القدير ( قَوْلُهُ الْأَصْلُ فِيهِ) أَيْ فِيمَنْ يَجُوزُ الدَّفْعُ إِلَيْهِ وَمَنْ لَا قَوْله تَعَالَى {إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ} [التوبة: ٦٠] الْآيَةَ فَمَنْ كَانَ مِنْ هَؤُلَاءِ الْأَصْنَافِ كَانَ مَصْرِفًا وَمَنْ لَا فَلَا لِأَنَّ إِنَّمَا تُفِيدُ الْحَصْرَ فَيَثْبُتُ النَّفْيُ عَنْ غَيْرِهِمْ.

পূর্বে বলা হয়েছে যে, যাকাত আর নফল সদকা সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন। কেননা যাকাত অমুসলিমকে কিছুতেই প্রদান করা যাবে না। ইচ্ছায় প্রদান করুক কিংবা অনিচ্ছায় প্রদান করুক, কিছুতেই তার সম্পদের যাকাত আদায় হবে না। হযরত আবু বকর (রাযি.) হযরত ওমর (রাযি.)এর প্রতি ওসিয়তে বলেন-

مَنْ أَدَى الزَّكَاةَ إِلَى غَيْرِ أَهْلِهَا لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ زَكَاةٌ، وَلَوْ تَصَدَّقَ بِالدُّنْيَا جَمِيعِهَا.

যে ব্যক্তি যাকাত গ্রহণের উপযুক্ত নয় এমন কাউকে যাকাত প্রদান করল তা গ্রহণযোগ্য হবে না; যদিও সে দুনিয়ার সকল সম্পদ দান করে দেয়। (আলমুহাল্লা বিল আসার, ইবনে হাযাম ৪/২৭৬, বর্ণনা- ৭২১; মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, বর্ণনা- ৬৯৩৪)।

এছাড়া যাকাতের ক্ষেত্রে জরুরী হল, ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়া। যাকাত আদায় হওয়ার জন্য যাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তিকে যাকাতের অর্থের সম্পূর্ণ মালিক বানিয়ে দিতে হবে। যেন যাকাতের সম্পদে তার একচ্ছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবে যে, সে চাইলে তা নিজে ভোগ করতে পারে, চাইলে সে বিক্রিও করে দিতে পারে, আবার কাউকে দানও করে দিতে পারে। এভাবে মালিক বানিয়ে দিলে যাকাত আদায় হবে। অন্যথায় হবে না ।

بدائع الصنائع في ترتيب الشرائع (٢/ ٣٩)
(فصلٌ:)
وَأَمَّا رُكْنُ الزَّكَاةِ فَرُكْنُ الزَّكَاةِ هُوَ إِخْرَاجُ جُزْءٍ مِنْ النِّصَابِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى، وَتَسْلِيمُ ذَلِكَ إِلَيْهِ يَقْطَعُ الْمَالِكُ يَدَهُ عَنْهُ بِتَمْلِيكِهِ مِنْ الْفَقِيرِ وَتَسْلِيمِهِ إِلَيْهِ أَوْ إِلَى يَدِ مَنْ هُوَ نَائِبٌ عَنْهُ وَهُوَ الْمُصْدِقُ وَالْمِلْكُ لِلْفَقِيرِ يَثْبُتُ مِنْ اللَّهِ تَعَالَى وَصَاحِبُ الْمَالِ نَائِبٌ عَنْ اللَّهِ تَعَالَى فِي التَّمْلِيكِ وَالتَّسْلِيمِ إِلَى الْفَقِيرِ وَالدَّلِيلُ عَلَى ذَلِكَ قَوْله تَعَالَى: {أَلَمْ يَعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ هُوَ يَقْبَلُ التَّوْبَةَ عَنْ عِبَادِهِ وَيَأْخُذُ الصَّدَقَاتِ} [التوبة: ١٠٤] ، وَقَوْلُ النَّبِيِّ – صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – «الصَّدَقَةُ تَقَعُ فِي يَدِ الرَّحْمَنِ قَبْلَ أَنْ تَقَعَ فِي كَتِ الْفَقِيرِ» وَقَدْ أَمَرَ اللَّهُ تَعَالَى الْمُلَّاكَ بِإِيتَاءِ الزَّكَاةِ لِقَوْلِهِ عَزْو جَلَّ: {وَآتُوا الزَّكَاةَ} [البقرة: ٤٣] وَالْإِيتَاءُ هُوَ التَّمْلِيكُ؛ وَلِذَا سَمَّى اللَّهُ تَعَالَى الزَّكَاةَ صَدَقَةً بِقَوْلِهِ عَزَّ وَجَلَّ {إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ} [التوبة: ٦٠] وَالتَّصَدُّقُ تَمْلِيكٌ فَيَصِيرُ الْمَالِكُ مُخْرِجًا قَدْرَ الزَّكَاةِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى بِمُقْتَضَى التَّمْلِيكِ سَابِقًا عَلَيْهِ؛

এই জন্য যাকাতের অর্থ জনকল্যাণমূলক কাজ করার উদ্দেশ্যে প্রদান করা হলে যাকাত আদায় হবে না। কারণ, শিক্ষা-দীক্ষার জন্য স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা, রাস্তা-ঘাট ও হাসপাতাল নির্মাণ, পানির কূপ, জলাধার খনন বা মানব সেবামূলক কোন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি জনকল্যাণমূলক কাজ দ্বারা ধনি-দরিদ্র সব শ্রেণির মানুষ উপকার লাভ করে বটে, কিন্তু তা দরিদ্র শ্রেণির মালিকানাধীন সম্পদ নয়। তাই যাকাতের অর্থ এসব জনকল্যাণমুখী কাজে ব্যয় করার কোনোও সুযোগ নেই।

সুতরাং কোনো প্রতিষ্ঠান বা জনকল্যাণমুখী কাজ যাকাতের খাত নয়। সেখানে যাকাত দেওয়া যাবে না। ঐ কাজগুলো হয়তো রাষ্ট্র আঞ্জাম দেবে, নতুবা মুসলমানদের স্বতঃস্ফূর্ত অনুদান থেকে তার ব্যবস্থা করা হবে।

অতএব, বিদ্যানন্দ সংগঠনে জনকল্যাণ মূলক কাজের জন্য যাকাতের অর্থ প্রদান করা শরীয়ত অনুমোদন করে না। এতে যাকাত আদায় হবে না; যদিও যাকাত প্রদানকারী তার সমূদয় সম্পদ বিদ্যানন্দ ফাউন্ডশনে প্রদান করুক। কারণ, কোন সংগঠনকে যাকাতের টাকা প্রদান করলেই যাকাত আদায় হবে না- যতক্ষণ না যাকাতের উপযুক্ত পূর্বোক্ত আট প্রকারের কারো হাতে না পৌঁছায়। আর আমাদের জানামতে উক্ত ফাউন্ডেশনে যাকাত খাতে জমাকৃত টাকার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসাব সংরক্ষণ ও যাকাতের উপযুক্ত খাতে ব্যায় করনণর শরয়ী, সঠিক ও আস্থাশীল কোন ব্যাবস্থাপনা নেই।

এছাড়া এমন একটি সংগঠনের ক্ষেত্রে যাকাতের উক্ত টাকাগুলো সঠিকখাতে প্রয়োগ করার জন্য বিজ্ঞ কোন শরয়ী আলেমে দ্বীনের পরিপূর্ণ তত্ত্বাবধান অতিব জরুরী। বলাবাহুল্য যে, এধরনের কোন আলেমের উপস্থিতি ওখানে নেই।

অনেক সময় কিছু নামধারী আলেম ও ইসলামী ব্যাক্তিত্বের সেখানে সম্পৃক্ত দেখা গেলেও তাদের কোনো কার্যকারী ভূমিকা এক্ষেত্রে নেই। বস্তুত এদের সম্পৃক্ততা নিজেদের প্রচার-প্রসার ও মিডিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হওয়া।

এছাড়া এ সংগঠন ভবিষ্যতে কখনও উপযুক্ত খাতে যাকাত ব্যায়ের নিশ্চয়তা দিলেও ইসলামী শরিআহ মতে উক্ত সংগঠনের মাধ্যমে যাকাত আদায় করা সঠিক হবে না।

প্রথমত: যাকাত ইসলামের পবিত্র একটি বিধান। এটির পবিত্রতা রক্ষা করা ও সর্বোত্তম পদ্ধতিতে আদায় করা আদায়কারীর উপর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

যাকাতের পবিত্র এ বিধান পালনের ক্ষেত্রে উক্ত সংগঠনের কিছুমাত্র সহযোগিতা গ্রহণ করাও যাকাতের পবিত্রতা পরিপন্থী। কারণ, এটি ধর্মহীন তা নাস্তিক্য চিন্তাচেতনাধারী মানবীয় একটি সংগঠন যার কোনটিই ইসলাম সমর্থন করে না ।

প্রথম আলোর একটি সাক্ষাৎকারে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়্যারম্যানকে ‘সংগঠনের চরিত্র কেমন হওয়া প্রয়োজন’ বিষয়ক প্রশ্ন করলে তিনি উত্তরে যা বলেন তার একটি অংশ এখানে তুলে ধরা হল- আর সংস্থাগুলোতে যে সেচ্ছাসেবকেরা দায়িত্ব পালন করবেন, তাঁদেরও পার্থিব- অপার্থিব কোনো কিছু পাওয়ার আশায় কাজটা করা যাবে না। (তথ্য সুত্র ৩১ জানুয়ারী ২০২১ ইং)।

প্রতিষ্ঠাতা চেয়্যারম্যানের উক্ত ব্যক্তব্যটি সংগঠনটি ধর্মহীন হওয়াকে সমর্থন করে। অথচ যাকাত একটি ইবাদত। এটি অপার্থিব নেকী অর্জনের জন্যই করতে হবে। নিয়্যাত ছাড়া কেউ যাকাত প্রদান করলে তার যাকাত আদায় হবে না ।

بدائع الصنائع في ترتيب الشرائع (٢/ ٣٩)
… وَلِأَنَّ الزَّكَاةَ عِبَادَةٌ عَلَى أَصْلِنَا وَالْعِبَادَةُ إخْلَاصُ الْعَمَلِ بِكُلِّيَّتِهِ لِلَّهِ تَعَالَى وَذَلِكَ فِيمَا قُلْنَا: إِنَّ عِنْدَ التَّسْلِيمِ إِلَى الْفَقِيرِ تَنْقَطِعُ نِسْبَةُ قَدْرِ الزَّكَاةِ عَنْهُ بِالْكُلِيَّةِ وَتَصِيرُ خَالِصَةً لِلَّهِ تَعَالَى وَيَكُونُ مَعْنَى الْقُرْبَةِ فِي الْإِخْرَاجِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى بِإِبْطَالِ مِلْكِهِ عَنْهُ لَا فِي التَّمْلِيكِ مِنْ الْفَقِيرِ بَلْ التَّمْلِيكِ مِنْ اللَّهِ تَعَالَى فِي الْحَقِيقَةِ وَصَاحِبُ الْمَالِ نَائِبٌ عَنْ اللَّهِ تَعَالَى غَيْرَ أَنَّ عِنْدَ أَبِي حَنِيفَةَ الرُّكْنُ هُوَ إِخْرَاجُ جُزْءٍ مِنْ النِّصَابِ مِنْ حَيْثُ الْمَعْنَى دُونَ الصُّورَةِ وَعِنْدَهُمَا صُورَةً وَمَعْنًى لَكِنْ يَجُوزُ إِقَامَةُ الْغَيْرِ مَقَامَهُ مِنْ حَيْثُ الْمَعْنَى.

দ্বিতীয়ত: বিধর্মী কোন লোক বা ধর্মহীন কোন সংস্থাকে যাকাতের এ পবিত্র ইবাদাত আদায় করার দায়িত্ব দেয়া ইবাদাতে আদায়ে মারাত্মক অবহেলা ও চরম দায়িত্বহীনতার বহি:প্রকাশ। আর ইবাদাতে দায়িত্বহীনদের ব্যাপারে কুরআনে কারীমে ভয়াবহ ধমকি এসেছে।

فَوَيْلٌ لِّلْمُصَلِّيْنَ (4) اَلَّـذِيْنَ هُـمْ عَنْ صَلَاتِـهِـمْ سَاهُوْنَ (5) اَلَّـذِيْنَ هُـمْ يُرَآءُوْنَ (6) وَيَمْنَعُوْنَ الْمَاعُوْنَ (7)

তৃতীয়ত, উক্ত সংগঠনে যাকাতের টাকা প্রদান করা প্রকারান্তরে শিরক কুফরকে সহোযগিতা করার নামান্তর। কেননা যাকাতের এই অর্থ হিন্দুকর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সংগঠনের প্রচার-প্রসারে ভূমিকা রাখবে। এতে ইসলামের বিপরীতে শিরক ও কুফরের দাওয়াতে ব্যাপকতা লাভ করবে। একজন মুসলমানের অর্থ বিসম্পদ; বিশেষত যাকাতের এ পবিত্র অর্থ এধরনের শিরক-কুফরের সয়লাবে এতটুকু সম্পৃক্ততাও শরীয়ত কিছুতেই সমর্থন করে না ।

{وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ (۲) } [المائدة: ٢]
فَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ خَيْرًا يَرَهُ (۷) وَمَنْ يَعْمَلْ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ شَرًّا يَرَهُ (۸) ]سورة الزلزال ۷-۸[

চতুর্থত: বিধর্মী কোন লোক বা ধর্মহীন কোন সংস্থাকে যাকাতের অর্থ বিলির দায়িত্ব প্রদান করা তাদের এই ধর্মহীনতাকে সম্মান ও সমর্থন করার নামান্তর। ইসলামী শরীয়ত এটিকে কিছুতেই সমর্থন করে না। বরং এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

«حاشية ابن عابدين – رد المحتار ط الحلبي (2/ 309):
مطلب لا يجوز اتخاذ الكافر في ولاية (قوله هو حر (مسلم) فلا أن يكون عبدا لعدم يصح الولاية ولا يصح أن يكون كافرا ؛ لأنه لا يلي على المسلم بالآية بحر عن الغاية والمراد بالآية قوله تعالى {ولن يجعل الله للكافرين على المؤمنين سبيلا} [النساء: 141] (قوله: بهذا إلخ) أي باشتراط الإسلام للآية المذكورة، زاد في البحر ولا شك في حرمة ذلك أيضا اهـ: أي لأن في ذلك تعظيمه وقد نصوا على حرمة تعظيمه بل قال في الشرنبلالية وما ورد من ذمه أي العاشر فمحمول على من يظلم كزماننا وعلم مما ذكرناه حرمة تولية الفسقة فضلا عن اليهود والكفرة.
قلت: وذكر في شرح السير الكبير أن عمر كتب إلى سعد بن أبي وقاص ولا تتخذ أحدا من المشركين كاتبا على المسلمين، فإنهم يأخذون الرشوة في دينهم ولا رشوة في دين الله تعالى قال وبه نأخذ فإن الوالي ممنوع من أن يتخذ كاتبا من غير المسلمين {لا تتخذوا بطانة من دونكم} [آل عمران: 118] . اهـ»

বিভিন্ন মহল ও ব্যক্তিবর্গের ধারণা, বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশন বাহ্যিকভাবে মানব সেবা মূলক সংগঠন বলে প্রচারণা চালালেও মূলত এটি একটি হিন্দুত্ববাদী ও নাস্তিক্য চিন্তা-চেতনাধারী সংগঠন। তার ভিতরগত কার্যক্রম ও কর্মকান্ড ইসলাম বিদ্বেষী। সাধারণ মুসলমানগণকে প্রতারিত করার জন্য সেবার লেবেল দিয়েছে মাত্র। এই ধারণা যদি সঠিক প্রমাণিত হয় তাহলে বিদ্যানন্দ ফাউন্ডশনে যাকাতা দেওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। এ ধরণের ফাউন্ডেশন ও তার কর্মকান্ড থেকে দূরে থাকা প্রতিটি মুসলমানের ঈমানী ও ধর্মীয় কর্তব্য ও দায়িত্ব হবে। এবং সবাইকে তার থেকে সতর্ক ও দূরে থাকার আহ্বান করতে হবে।

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ تُلْقُونَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَقَدْ كَفَرُوا بِمَا جَاءَكُمْ مِنَ الْحَقِّ يُخْرِجُونَ الرَّسُولَ وَإِيَّاكُمْ أَنْ تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ رَبِّكُمْ إِنْ كُنْتُمْ خَرَجْتُمْ جِهَادًا فِي سَبِيلِي وَابْتِغَاءَ مَرْضَاتِي تُسِرُّونَ إِلَيْهِمْ بِالْمَوَدَّةِ وَأَنَا أَعْلَمُ بِمَا أَخْفَيْتُمْ وَمَا أَعْلَنْتُمْ وَمَنْ يَفْعَلْهُ مِنْكُمْ فَقَدْ ضَلَّ سَوَاءَ السَّبِيلِ (۱) إِنْ يَثْقَفُوكُمْ يَكُونُوا لَكُمْ أَعْدَاءً وَيَبْسُطُوا إِلَيْكُمْ أَيْدِيَهُمْ وَأَلْسِنَتَهُمْ بِالسُّوءِ وَوَدُّوا لَوْ تَكْفُرُونَ (٢) لَنْ تَنْفَعَكُمْ أَرْحَامُكُمْ وَلَا أَوْلَادُكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَفْصِلُ بَيْنَكُمْ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ (۳) قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ إِلَّا قَوْلَ إِبْرَاهِيمَ لِأَبِيهِ لَأَسْتَغْفِرَنَّ لَكَ وَمَا أَمْلِكُ لَكَ مِنَ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ رَبَّنَا عَلَيْكَ تَوَكَّلْنَا وَإِلَيْكَ أَنَبْنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ (٤) رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِلَّذِينَ كَفَرُوا وَاغْفِرْ لَنَا رَبَّنَا إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (٥) } [الممتحنة: ١ – ٥]

শেষকথা হল, কুরআন-সুন্নাহের সুস্পষ্ট বক্তব্য এবং সালাফ ও মুজতাহিদ ইমামগণের উক্তির আলোকে এটি প্রমাণিত যে, যাকাত একটি ইবাদত। এ ইবাদত থেকে দায়মুক্তি তখনই সম্ভব হবে, যদি তা যথাযথভাবে সঠিক খাতে ব্যয় করা হয়। অন্যথায় যাকাতের দায় থেকে মুক্ত হওয়া যাবে না। অতএব, যাকাত তার সঠিক খাতে যথাযথভাবে আদায়ের জন্য বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনে যাকাত প্ৰদান করা যাবে না। এ থেকে নিজেও বিরত রাখতে হবে এবং অন্যদেরকেও বিরত থাকার আহ্বান জানাতে হবে। মনে রাখা চাই, যাকাত একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যাকাতের প্রকৃত খাত সমূহে যথাযথ নিশ্চয়তার সাথে প্রদান করতে হবে।

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান এবং আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

ফতোয়া দিয়েছেন- হযরত আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন (দা.বা.)

মুফতি, মুহাদ্দিস, মুফাসসির এবং সহযোগী পরিচালক- আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।