।। বিনতে জাহাঙ্গীর ।।
রমাদানুল মুবারাক। এ মুবারাক মাস আরো মহিমান্বিত হয়েছে কুরআনি পরশে। স্তরে স্তরে আয়াতে কারীমার অপূর্ব রত্নখনির গ্রন্থ আল কুরআন।
রমাযান মাসে কুরআনি সুরের অপার্থিব ঢেউ-সরোবরে আন্দোলিত হয়ে উঠে মুমিন-হৃদয়। কারণ, স্বীয় হাবীব সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হৃদয় মুবারকও আবেগাপ্লুত হয়ে পড়তো রমাদানে! কুরআনী সুরের হিল্লোল বয়ে যেত হৃদয়-বীণায়…।
কুরআনের দাওর করতেন জিবরীল আমীনের সাথে। নবীজি পড়তেন, জিবরীল আমীন শোনতেন। জিবরীল আমিন পড়তেন হাবীব সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শোনতেন। কি অপূর্ব আত্মনিবেদন, মালিকের কালামের প্রতি! সুবহানাল্লাহ!
রমাদানের এ কুরআনী মৌসুমে আমরা তিনভাবে কুরআন পড়তে পারি।
১. খতমে তিলাওয়াত
শুধু তিলাওয়াত করা খতমের নিয়তে। সাওয়াবের জন্য অর্থ বোঝা শর্ত নয়। তিলাওয়াতই যথেষ্ট।
২. অনুবাদ তিলাওয়াত।
কোনো আলিমের সোহবতে কুরআনের তরজমা-অনুবাদ পড়া।(জেনারেলদের জন্য আমি মুফতি তাকি উসমানি লিখিত “তাওযিহুল কুরআন” তাফসিরটি পাঠের পরামর্শ রাখব। পাশাপাশি কোনো বিজ্ঞ আলেম হতে বুঝে নেয়া। অনেকসময় নিজের বুঝ ভুলও হতে পারে।
৩. অযীফা তিলাওয়াত।
কুরআনের অনেক সূরা আছে, যেগুলো পাঠের আলাদা ফযীলত আছে। সেগুলো আমরা সম্ভব মতো বাড়াতে পারি। যেমন-
সূরা ইয়াসীন- * সকালে পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা তার সকল হাজত পূরণ করে দিবেন। (সুনানে দারেমি- ৪৩১৮)। * ইখলাসের সাথে সন্ধ্যায় পাঠ করলে তাকে ক্ষমা করা হবে। (ইবনে- হিব্বান- ২৫৭৮)।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
সূরা ওয়াকিআহ- * রাতে পাঠ করলে দারিদ্র্যতায় পতিত হবে না (শুআবুল ঈমান- ২৪৯৯)।
সূরা কাহাফ- * প্রতিদিন ৩ আয়াত পাঠ করলে দাজ্জালের ফেতনা হতে মুক্তি পাবে। (তিরমিযী)। * জুমআর দিন পুরাটা পাঠ করলে পরবর্তী জুমআ পর্যন্ত নূর হবে। (শুআবুল ঈমান- ২৪৪৪)।
সূরা বাকারাহ’র আয়াতুল করসি- * প্রতি ওয়াক্ত নামাযের ফরয-এর পরে পাঠ করলে তিলাওয়াতকারী পরবর্তী নামায পর্যন্ত আল্লহর যিম্মায় থাকবে। (তাবারানী- ২৪০৬)। মৃত্যুর সাথে সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (ইবনে হিব্বান- ২৪০৫)। * রাতে পাঠ করলে একজন হিফাযতকারী ফিরিশতা নিযুক্ত থাকবে, শয়তান কাছে আসবে না। (বুখারী)।
বাকারাহ-এর শেষ দু আয়াত (আমানার রসূল….)- * রাতে যে পাঠ করবে, তার জন্য তা শয়তান হতে হেফাজতের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে (বুখারী, মুসলিম)।
সূরা হাশরের শেষ ৩ আয়াত- “আঊ-যুবিল্লা-হিস সামী-য়িল আলী-মি মিনাশ শাইত্ব-নির রাজী-ম” সকালে ৩ বার পড়ে আয়াত তিনটি পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা ৭০ হাজার ফিরিশতা নিযুক্ত করে দিবেন, যারা সন্ধ্যা পর্যন্ত রহমাতের দুআ করতে থাকে ও মারা গেলে শাহাদাতের মৃত্যুর সমতূল্য। একইভাবে সন্ধ্যায় পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত একই ফযীলত। (তিরমিযী)।
মুসাব্বিহাত সূরাসমূহ- নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসাব্বিহাত সূরাসমূহ রাতে না পাঠ করে বিছানায় যেতেন না। তিনি বলতেন, এগুলোর মধ্যে এমন একটি আয়াত আছে, যা হাজার আয়াতের চেয়েও বেশি উত্তম (আবূ দাউদ, তিরমিযী)।
*বি:দ্র: মুসাব্বিহাত সূরাসমূহ “সূরা বনী ইসরাইল, হাদীদ, হাশর, সাফ, জুমআ, তাগাবুন ও আ’লা”।
রমাদান হল ইবাদাতের বাৎসরিক আমাল ট্রেনিং-এর মাস। যে যত ইবাদাতে ট্রেনিং পোক্ত করব, বছরজুড়ে আমালের সৌরভে জীবনটা তত মাধুর্যময় হবে, ইনশাআল্লহ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে রমাদানের রাহমাহ, বারাকাহ ও নাযাত দ্বারা পূর্ণ উপকৃত হওয়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ