Home মহিলাঙ্গন মুসলিম নারীদের সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের দৃষ্টান্ত (২)

মুসলিম নারীদের সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের দৃষ্টান্ত (২)

।। আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন ।।

[পূর্ব প্রকাশিতের পর]

হযরত আয়েশা (রাযি.) এক মহিলাকে হজরে আসওয়াদ চুম্বন করা থেকে বারণ করা

হযরত ইমাম বুখারী (রাহ.) হযরত আতা (রহ.) থেকে নকল করে বর্ণনা করেন যে, একবার হযরত আয়েশা (রাযি.) লোকজন থেকে দূরে সরে কা’বা শরীফের তাওয়াফ করছিলেন। ইত্যবসরে এক মহিলা বললেন, হে উম্মুল মুমিনীন! আসুন হজরে আসওয়াদ চুম্বন করি। উত্তরে হযরত আয়েশা (রাযি.) বললেন, তুমি চুম্বন কর।

উপরোক্ত ঘটনার দ্বারা আমরা উপলব্ধি ও এটাই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি যে-

১। মহিলাদের জন্য পুরুষদের সাথে মেলা মেশা থেকে একেবারেই বাঁচা উচিত।

২। যতই ভাল কাজ হোক না কেন, যদি উক্ত ভাল কাজ আদায় করতে গিয়ে পুরুষের সাথে মেলা মেশা হওয়ার আশংকা থাকে, তাহলে তা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং নফল নেক কাজকেও ছেড়ে দিবে।

যদিও আয়েশা (রাযি.) বাহ্যিক দৃষ্টিতে উক্ত মহিলাকে চলে যাওয়ার আদেশ করেছেন। কিন্তু তার মুখ্য উদ্দেশ্য তাকে চুম্বন করা থেকে বারণ করা।

হযরত হাফছা (রাযি.) কর্তৃক নিজের ভাইয়ের প্রতি বিবাহ করার আদেশ

হযরত ইমাম শাফেয়ী (রাহ.) আমর ইবনে দিনার থেকে বর্ণনা করেন যে, ইবনে ওমর (রাযি.) বিবাহ না করার ইচ্ছা করেছিলেন। আর এটাও মন্তব্য করেছিলেন যে, পুরো জীবন আল্লাহর ইবাদতের মধ্যে কাটিয়ে দিবেন। হাফসা (রাযি.) তাকে বললেন যে, হে ইবনে ওমর! তুমি অবশ্যই বিবাহ করে নাও। কারণ তোমার ওরশে যদি কোন বাচ্চা পয়দা হয়, তাহলে সে তোমার জন্য দোয়া করবে। কারণ, রাসুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যখন মানুষ মরে যায়, তখন তার স্বজন ছেলে সন্তানের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি জিনিসের সম্পর্ক বাকি থাকে- (১) ঐ ব্যক্তির সাদকায়ে জারিয়া। (অর্থাৎ দান-খায়রাত এবং মাদ্রাসা মসজিদ বানিয়ে দেওয়া)। (২) ঐ ইলম, যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়েছে ও হচ্ছে। (৩) এমন নেক্কার সন্তান, যারা তার জন্য দোয়া করে থাকে।

হযরত আয়েশা (রাযি.)এর নিষেধাজ্ঞা সাদ ইবনে হিশামের অবিবাহিত অবস্থায় থাকার প্রতি

ইমাম আহমদ (রাহ.) হাসান থেকে, তিনি সা’দ ইবনে হিশাম থেকে বর্ণনা করেন যে, এক সময় সা’দ বর্ণনা করলেন যে, আমি একবার হযরত আয়েশা (রাযি.)এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! আমি বাকী জীবন অবিবাহিত অবস্থায় থাকতে চাই। আপনার মতামত কি?

হযরত আয়েশা (রাযি.) বললেন, এরকম প্রতিজ্ঞা করিও না। তুমি কি কুরআনের আয়াত পড়নি? যাতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, যার অর্থ- অবশ্যই মানব জাতির জন্য উত্তম নিদর্শন রয়েছে রাসূলুল্লাহ (সা.)এর যিন্দেগির আদর্শের মধ্যে। আর রাসূল (সা.) তো বিবাহ করেছিলেন এবং তার ছেলে সন্তানও হয়েছিল।

আরও পড়তে পারেন-

উপরোক্ত ঘটনার মধ্যে হযরত আয়েশা (রাযি.) সা’দ ইবনে হিশামকে হাদিসের আলোকে পরামর্শ দিলেন যে, তোমার ইচ্ছাটি রাসূলের (সা.) হাদিসের উল্টো। আর একথাও বুঝা গেল যে, যে কোন কাজে রাসূল (সা.)এর সুন্নাতের খিয়াল রাখতে হবে। এবং তারই অনুসরণ করতে হবে।

হযরত আয়েশা (রাযি.)এর ইদ্দত পালনকারী মহিলাদের প্রতি ঘর থেকে বের না হওয়ার প্রতি নিষেধাজ্ঞা

এক সময় উরওয়াহ ইবনে যুবাইর হযরত আয়েশা (রাযি.)এর কাছে বললেন, অমুক মহিলাকে তার স্বামি তালাক দিয়েছে। আর সে বাহিরে বাহিরে চলাফেরা করছে। একথা শুনে আয়েশা (রাযি.) বললেন, সে কাজটা খারাপ করছে। কারণ ইদ্দত চলাকালীন মহিলাদের ঘর থেকে বের হওয়া উচিত নয়।

হযরত আবু সালমা (রাযি.)কে সম্পদ নিয়ে পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত না হওয়ার প্রতি আয়েশা (রাযি.)এর নির্দেশ

এক সময় হযরত আবু সালমা (রাযি.) এবং অন্য কিছু লোকের মধ্যে একটা জমি নিয়ে ঝগড়া ছিল। একথা হযরত আয়েশা (রাযি.) শুনে বললেন, হে আবু সালমা (রাযি.)! জমি নিয়ে ঝগড়া করা থেকে বিরত থাক। কেননা রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন যে, কেউ যদি কারো জমি এক বিগত পরিমাণও জুলুম করে খায়, তাহলে কাল ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা সাত তবক জমিনকে মালা বানিয়ে তার গলায় পরিধান করে দিবেন।

হারাম খানা থেকে বিরত থাকার প্রতি মায়াজাহ আদইয়া বসরিয়া (রাহ.)এর নির্দেশ

হযরত মায়াজাহ আদইয়া বসরিয়া (রাহ.) উম্মুল আসওয়াদকে নিজের বুকের দুধ পান করিয়ে ছিলেন। তিনি উম্মুল আসওয়াদকে বললেন, তোমাকে দুধ পান করানোর সময় আমি হালাল আহার করার পূর্ণ চেষ্টা করেছি। সুতরাং তুমি সবসময় হালাল খাওয়ার চেষ্টা করবে এবং হারাম থেকে বিরত থাকবে। হারাম খেয়ে আমার দুধকে নষ্ট করবে না। আমার আশা যে, তুমি আল্লাহর ফায়সালার উপর রাজি এবং খুশি থাকবে।

লেখকঃ বিশিষ্ট ইসলামী আইনবিদ, গবেষক, গ্রন্থ প্রণেতা এবং মুফতি ও সহযোগী পরিচালক- দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকবেন।