শারীরিক সুস্বাস্থ্যর জন্য শরীরে ব্লাড সুগারের মাত্রা পরিমিত থাকা প্রয়োজন। তবে শরীরে ব্লাড সুগারের আদর্শ মাত্রার ব্যাপারটি অতটা সহজ নয়। কেননা ব্লাড সুগারের পরিমিত মাত্রা জেন্ডার, বয়স, খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক গঠনভেদে পরিবর্তিত হয়। আর তাই একজন ব্যক্তির নিজের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় বিস্তারিতভাবে ব্লাড সুগার সম্পর্কিত বিষয়াবলী সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা জরুরী।
শরীরে ব্লাড সুগার মাপা হয় মিলিগ্রাম/ডেসিলিটার এককে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ স্বাভাবিক ব্যক্তির শরীরে আদর্শ ব্লাড সুগার লেভেল ধরা হয় ৯০ থেকে ১০০ মিগ্রা/ডেলি। তবে কেউ যদি দীর্ঘ ৮ ঘণ্টা খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকে তবে ঐ ব্যক্তির ব্লাড সুগার লেভেল ৭০ থেকে ৯৯ মিগ্রা/ডেলি এ নেমে আসতে পারে। অন্যদিকে সুস্বাস্থ্যর অধিকারী একজন ব্যক্তির খাদ্য গ্রহণের দুই ঘণ্টা পর সুগার লেভেল ১৪০ মিগ্রা/ডেলি এবং ডায়বেটিসে আক্রান্ত একজন ব্যক্তির নরমাল ব্লাড সুগার লেভেল ১৮০ মিগ্রা/ডেলি এর কম হতে পারে।
তবে শরীরের ব্লাড সুগার লেভেল নানা কারণে পরিবর্তিত হতে পারে। আর এ পরিবর্তনে বেশকিছু বিষয় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে। প্রথমত উচ্চমাত্রায় শর্করাযুক্ত খাদ্য গ্রহণ কিংবা প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণের কারণে সাময়িকভাবে শরীরে ব্লাড সুগার লেভেল বেড়ে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, শারীরিক পরিশ্রম বেশি করলে ব্লাড সুগার লেভেল কমে যেতে পারে এবং শারীরিক পরিশ্রম কম করলে ব্লাড সুগার লেভেল বেড়ে যেতে পারে।
আরও পড়তে পারেন-
- ধর্ষণ প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা
- কিশোর অপরাধ রোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
- আদর্শ পরিবার গঠনে যে সব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরী
- ইসলামে সামাজিক সম্পর্ক এবং ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখার গুরুত্ব
- মানুষ মারা যাওয়ার পর, তাঁর আত্মার কি হয় ?
তৃতীয়ত, হাইপোগ্লাইসেমিয়া, ডায়বেটিস ও লিভারের চিকিৎসা সংক্রান্ত ওষুধ সেবনে কিংবা এলকোহল সেবনেও শরীরের ব্লাড সুগারের মাত্রা পরিবর্তিত হতে পারে। এছাড়াও, শারীরিক ও মানসিক চাপ এবং ডিহাইড্রেশন শরীরের ব্লাড সুগারের মাত্রায় আনতে পারে পরিবর্তন। সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি নিজের ব্লাড সুগার লেভেলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় তবে ব্লাড সুগার লেভেল পরিবর্তিত হওয়ার ফ্যাক্টরগুলোর দিকে নজর দিতে হবে।
শারীরিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য ব্লাডে পর্যাপ্ত সুগারের প্রয়োজন আছে। আর তাই শরীরে স্বাভাবিক সুগারের পরিমাণকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ইনসুলিন নামের এক প্রকার পদার্থ। যখনই রক্তে অতিরিক্ত সুগার দীর্ঘদিন ধরে থাকে তখন ইনসুলিন শরীরের সুগার লেভেলকে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়। এছাড়াও বয়সের সাথে সাথে অনেকের শরীরে ইনসুলিন উৎপন্ন হওয়ার মাত্রা কমে যায়। আর তখনই ঐ ব্যক্তি ডায়বেটিসে আক্রান্ত হন। শুধু তাই নয়, ডায়াবেটিস ছাড়াও রক্তে উচ্চমাত্রায় সুগার অনেক সময় স্ট্রোক কিংবা হৃৎপিণ্ড ও কিডনি সংক্রান্ত জটিলতার মুখোমুখি করতে পারে।
শরীরে ডায়বেটিস আছে না-কি কিংবা রক্তে সুগারের মাত্রা বেশি না কম সেটি জানার জন্য বেশ কয়েক ধরনের সুগার টেস্ট পদ্ধতি রয়েছে। চিকিৎসকেরা সুস্থ ব্যক্তিদের মাঝে মাঝে এবং ডায়বেটিসে আক্রান্ত রোগীদের নিয়মিত ব্লাড সুগার টেস্ট করার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন। প্রয়োজনে নিতে হবে ডাক্তারের পরামর্শ। অন্যথায় একজন সাধারণ ব্যক্তি কিংবা ডায়বেটিস আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে ব্লাড সুগার লেভেলের অস্বাভাবিক ওঠানামা বুঝতে পারা যাবে না; ঘটতে পারে নানা বিপত্তি।
দীর্ঘদিন ধরে রক্তে সুগারের পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধির ফলে শরীরে বেশ কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। রক্তে সুগারের পরিমাণ দীর্ঘদিন ধরে বেশি থাকার ফলে অল্পতেই ক্লান্ত বোধ করা, ঘন ঘন ক্ষুধা ও তৃষ্ণা অনুভব করা, দৃষ্টিশক্তিতে সমস্যা, ঘন ঘন প্রস্রাবের মতো লক্ষণ দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে রক্তে সুগারের পরিমাণ দীর্ঘদিন ধরে কম থাকার ফলে দুর্বলতা অনুভব করা, মাথা ঘোরা, ঘেমে যাওয়া, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি পাওয়া ও বারবার ক্ষুধা লাগার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
ব্লাড সুগারের বিষয়টিকে অনেকেই পাত্তা না দিয়ে বিশৃঙ্খলভাবে জীবনযাপন করেন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের এক পরিসংখ্যানের দেখা যায়, ভারতের প্রায় ৭৭ মিলিয়ন মানুষ রক্তে উচ্চ মাত্রার সুগারের সমস্যায় ভোগে। শুধু তাই নয়, রক্তে উচ্চমাত্রার সুগারের সমস্যায় ভুগতে থাকা এ বিশাল সংখ্যক মানুষের মধ্য প্রায় ৫৭ ভাগ মানুষ এ সম্পর্কে অবগতই নয়। এছাড়াও, ভারতে উচ্চমাত্রায় ব্লাড সুগারের আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ২০৪৫ সালের মধ্যে ১৩৪ মিলিয়নে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অথচ প্রতিদিনের লাইফস্টাইলে অল্প কিছু বিষয় মেনে চললেই শরীরের ব্লাড সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
সূত্র: হেলদিফাই মি।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ