।। মাওলানা মুহিউদ্দিন হাতিয়ুভি ।।
দুনিয়াবিমুখ সাহাবি সাঈদ ইবনে আমির আল জুমাহি (রা.)। খাইবার যুদ্ধের আগে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং মদিনায় হিজরত করেন। খাইবার ও তৎপরবর্তী সব যুদ্ধে রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন। খলিফা ওমর (রা.)-এর পক্ষ থেকে সিরিয়ার ‘হিমস’ অঞ্চলের গভর্নর নিযুক্ত হন।
পূর্ণ সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। (আত-তাবাকাতুল কুবরা : ৪/২০৩, ৭/২৮০, হিলয়াতুল আউলিয়া ১/২৪৪, ৩৬৮, আল-ইসতিআব : ২/৬২৪)
দুনিয়ার আসবাব ও ভোগ-বিলাসের প্রতি তাঁর আকর্ষণ বলতে কিছুই ছিল না। অর্থসম্পদ দেখলে আকৃষ্ট হওয়ার পরিবর্তে আঁতকে উঠতেন। ভয় করতেন, না জানি এই অর্থ পরকালীন জীবনের জন্য বিপদের কারণ হয়। রাষ্ট্রীয় একজন দায়িত্বশীল হওয়া সত্ত্বেও তাঁর আর্থিক অবস্থা ছিল খুবই খারাপ।
একবার ওমর (রা.) তাঁকে ১০ হাজার দিরহাম দিয়ে বলেন, পরিবারের জন্য একটু ভালো খাবারের ব্যবস্থা করুন। তিনি বলেন, যারা আমার থেকে বেশি অভাবী তাদের দিন; আমার প্রয়োজন নেই। রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে নিয়মিত যে ভাতা পেতেন, তা থেকে পারিবারিক খরচের জন্য যৎসামান্য রেখে বাকিটুকু গরিব-মিসকিনের মধ্যে বণ্টন করে দিতেন। (আল ইসাবাহ : ৩/৯৩)
শুধু তাই নয়, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়েও তিনি নিজের কাজ নিজে করতেন। তাঁর কোনো কর্মচারী ছিল না। সারা রাত আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। তাঁর সাদাসিধা জীবনের বর্ণনা একটি ঘটনায় সবার কাছে প্রকাশ পেয়ে যায়।
খলিফা একবার হিমসবাসীর কাছে জানতে চাইলেন, সাঈদকে তারা আমির হিসেবে কেমন পেল। তারা খলিফার কাছে তাঁর বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ পেশ করল। যথা :
১. প্রতিদিন তিনি বাড়ি থেকে দেরি করে বের হন।
২. রাতেরবেলা কাউকে সাক্ষাতের সুযোগ দেন না।
৩. প্রতি মাসে দুই দিন তাঁকে দেখা যায় না।
৪. মাঝেমধ্যে মজলিসেও সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন।
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
খলিফা ওমর (রা.) একে একে প্রতিটি অভিযোগের কারণ জানতে চাইলেন সাঈদ (রা.)-এর কাছে। সাঈদ (রা.) বলেন, বিষয়গুলো আমি প্রকাশ করতে ইচ্ছুক না। আপনি যখন জিজ্ঞেস করছেন, না বলে আর উপায় নেই। এই বলে ধারাবাহিকভাবে অভিযোগগুলোর জবাব দিয়ে গেলেন। যথাক্রমে :
১. আমার কোনো খাদেম (সেবক) নেই। নিজ হাতেই খাবার প্রস্তুত করি। এরপর চাশতের নামাজ পড়ে প্রজাদের কাজে বের হই।
২. দিনের বেলায় আমি ব্যস্ত থাকি প্রজাদের কাজে। তাই রাতে মিলিত হই প্রভুর সনে। এ কারণে কাউকে সাক্ষাতের সুযোগ দিতে পারি না।
৩. আমার অতিরিক্ত কাপড় নেই; আবার খাদেমও নেই। নিজের কাপড় নিজেই ধুই। মাসে দুই দিন কাপড় ধুই। দিনের শুরুতে ধুয়ে দিই। শুকানোর অপেক্ষায় থাকি। ফলে দিনের শুরুতে কারো সঙ্গে সাক্ষাতে মিলিত হতে পারি না। অবশ্য দিনের শেষের দিকে বের হই।
৪. ইসলাম গ্রহণের আগে আমি খুবাইবের মৃত্যুদণ্ডের করুণ দৃশ্য দেখেছিলাম। কাফিররা কত নিষ্ঠুরভাবে তাঁকে হত্যা করেছিল! সে দৃশ্য এখনো আমি ভুলতে পারি না। যখনই সে দৃশ্য আমার স্মৃতিপটে ভেসে উঠে, আমি স্থির থাকতে পারি না; সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ি।
খলিফা ওমর (রা.) তাঁর কথাগুলো শুনে যারপরনাই আনন্দিত হলেন, সাঈদকে বুকে জড়িয়ে নিলেন এবং তাঁর কপালে চুমু খেলেন। (রিজালুন হাওলার রাসুল : ১/১১৭)
সাঈদ ইবনে আমির (রা.) দ্বিতীয় খলিফা উমার (রা.)-এর খেলাফতামলে ২০ হিজরি সনে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৪০ বছর। (আত তাবাকাতুল কুবরা : ৭/২৮০, আল-ইসতিআব : ২/৬২৫)
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া মাইজদী, নোয়খালী
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ