।। মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ ।।
‘তায়াম্মুম’ শব্দের অর্থ হলো ইচ্ছা করা, নিয়ত করা। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় তায়াম্মুম হলো, পবিত্রতার নিয়তে পবিত্র মাটির ওপর হাত মেরে চেহারা ও কনুই পর্যন্ত হাত মাসেহ করা। (আল ফিকহুল ইসলামী : ১/৪৯৮)
তায়াম্মুম বৈধ হওয়ার অপারগ পরিস্থিতি হলো—
ক. ব্যক্তি ও পানির মাঝের দূরত্ব এক মাইল বা এর চেয়ে বেশি হওয়া। (দারাকুতনি, হাদিস : ৭৩১, ৭৩৪)
খ. পানি ব্যবহারের কারণে রোগ সৃষ্টি বা বৃদ্ধির সমূহ-সম্ভাবনা অথবা প্রাণ বা অঙ্গহানির আশঙ্কা হলে।
(দারাকুতনি, হাদিস : ৭৩১, কিতাবুল আসার, হাদিস : ৭৪, সুনানে কুবরা লিল বায়হাকি, হাদিস : ১১০৫)
গ. পানি এত কম যে ব্যবহার করে ফেললে নিজে অথবা অন্যরা পিপাসাকাতর হয়ে পড়বে। (সুনানে কুবরা, হাদিস : ১১৪৯)
ঘ. পাশেই কূপ বা পুকুর আছে। কিন্তু পানি এত নিচে যে তা থেকে পানি উঠানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। (বুখারি : ২/৬১)
ঙ. পানি কাছেই আছে। কিন্তু দুশমন অথবা ভয়ংকর কোনো পশু-প্রাণীর কারণে পানি অর্জন করতে অপারগ (বুখারি : ২/৭২)
তায়াম্মুমের ফরজসমূহ
তায়াম্মুমের ফরজ দুটি।
১. পুরো চেহারাকে একবার মাসেহ করা।
২. উভয় হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করা। (দারাকুতনি, হাদিস : ৬৯৭)
আরও পড়তে পারেন-
- ধর্ষণ প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা
- কিশোর অপরাধ রোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
- আদর্শ পরিবার গঠনে যে সব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরী
- ইসলামে সামাজিক সম্পর্ক এবং ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখার গুরুত্ব
- মানুষ মারা যাওয়ার পর, তাঁর আত্মার কি হয় ?
তায়াম্মুমের পদ্ধতি
তায়াম্মুম করার ইচ্ছাকারী ব্যক্তি উভয় হাতের কাপড় কনুইয়ের ওপরে উঠিয়ে নেবে। তায়াম্মুম দ্বারা নামাজ পড়ার নিয়ত করে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করবে। নিজের উভয় হাতের তালুকে আঙুলগুলো খোলা রেখে মাটির ওপর রাখবে। হাতকে মাটির ওপর সামান্য ঘষবে। তারপর উভয় হাত উঠিয়ে ঝেড়ে ফেলবে। এরপর পুরো মুখমণ্ডল মাসেহ করবে।
অতঃপর আগের মতো উভয় হাতের তালু আঙুল খোলা রেখে মাটির ওপর রেখে সামান্য ঘষবে। এরপর নিজের বাম হাত দ্বারা ডান হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করবে। এরপর ডান হাত দ্বারা বাম হাত কনুই পর্যন্ত মাসেহ করবে। তাতে তায়াম্মুম পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। এরপর তা দ্বারা ফরজ, নফল সব ধরনের ইবাদত আদায় করতে পারবে। (কিতাবুল আসার লি আবি ইউসুফ ৭৭, মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা ১/১৬০)।
যেসব কারণে তায়াম্মুম নষ্ট হয়ে যায়
১. যেসব কারণে অজু ভেঙে যায়, সেসব কারণে তায়াম্মুমও ভেঙে যায় (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৬০)
২. পানি ব্যবহারে সক্ষম হয়ে গেলে, তায়াম্মুমের অনুমতি প্রদানকারী অপারগতা দূর হয়ে গেলে তায়াম্মুম ভেঙে যাবে। যেমন—দুশমনের ভয় খতম হয়ে গেলে, রোগের আশঙ্কা শেষ হয়ে গেলে ইত্যাদি। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ১/১৯২)
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ