হাবিবা রহমান উজরা
হিজরি ষষ্ঠ শতকের বিখ্যাত নারী ফকিহ (আইনবিদ) ও মুহাদ্দিস (হাদিসবিশারদ) ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ সমরকন্দি (রহ.)। তাঁর পিতা আল্লামা আলাউদ্দিন মুহাম্মদ বিন আহমদ সমরকন্দি (রহ.) ছিলেন হানাফি মাজহাবের বিখ্যাত ফকিহ ও ‘তুহফাতুল ফুকাহা’ গ্রন্থের রচয়িতা। তাঁকে সমরকন্দের শীর্ষ আলেম মনে করা হতো। সমরকন্দেই (বর্তমান উজবেকিস্তান) ফাতিমা সমরকন্দি (রহ.) নিজ পিতার কাছেই শিক্ষা গ্রহণ করেন।
পড়ালেখা সম্পন্ন করার পর তিনি পিতার অধীনে ফতোয়া দেওয়ার কাজ শুরু করেন। তাঁর দেওয়া ফতোয়াগুলো তাঁর নামেই প্রকাশ পেত। তবে অতিগুরুত্বপূর্ণ ফতোয়ায় তিনি পিতার স্বাক্ষরও যুক্ত করতেন।
পরিণত বয়সে উপনীত হওয়ার আগেই ফাতিমা সমরকন্দির (রহ.)-এর মেধা ও প্রতিভার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। ফলে বহু ধনাঢ্য ও অভিজাত পরিবার থেকেই তাঁর বিয়ের প্রস্তাব আসে। কিন্তু তিনি ও তাঁর পিতা আল্লাহভীতি ও জ্ঞানকেই প্রাধান্য দেন। ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ সমরকন্দি (রহ.)-এর স্বামী আল্লামা আলাউদ্দিন কাসানি (রহ.) আল্লামা আলাউদ্দিন সমরকন্দি (রহ.)-এর ছাত্র ছিলেন। আল্লামা আলাউদ্দিন কাসানি (রহ.) ‘তুহফাতুল ফুকাহা’-এর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘বাদায়িউস সানায়ি ফি তারতিশ শারায়ি’ রচনা করেন। বিখ্যাত এই গ্রন্থকেই তাঁর বিয়ের মহর নির্ধারণ করা হয়।
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
আল্লামা আলাউদ্দিন কাসানি (রহ.) সুলতান নুরুদ্দিন জঙ্গি (রহ.)-এর সঙ্গে করা অঙ্গীকার অনুযায়ী হালব গমন করেন এবং মাদরাসায়ে হালবের (যা পরবর্তী সময়ে জামিয়া হালবিয়া নামে খ্যাতি লাভ করে) দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
ফতোয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে ফাতিমা সমরকন্দি প্রচলিত মতের বাইরেও নতুন নতুন অভিমত দেন। কখনো কখনো স্বামী আল্লামা আলাউদ্দিন কাসানি (রহ.)-এর সঙ্গেও তাঁর মতবিরোধ হতো। কিন্তু স্ত্রীর পাণ্ডিত্য ও জ্ঞানগত মর্যাদার কারণে তিনি তাঁকে সমীহ করতেন এবং বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতেন। কখনো কখনো স্বামী আলাউদ্দিন কাসানি (রহ.)-এর ভুলগুলোও তিনি সংশোধন করে দিতেন। বিয়ের পর ফাতিমা সমরকন্দি (রহ.)-এর দেওয়া ফতোয়ায় নিজ স্বাক্ষরের পাশাপাশি স্বামীর স্বাক্ষরও যুক্ত করতেন। ফতোয়া দেওয়ার পাশাপাশি তিনি দ্বিনি শিক্ষা বিস্তারেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তাঁর জ্ঞান সরোবর দ্বারা নারী-পুরুষ উভয়েই উপকৃত হতো।
একবার ফাতিমা সমরকন্দি (রহ.) নিজ দেশে ফেরার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলে সুলতান নুরুদ্দিন জঙ্গি (রহ.) তাঁর কাছে দূত পাঠিয়ে থেকে যেতে অনুরোধ করেন। তিনি সুলতানের অনুরোধে হালবে থাকতে সম্মত হন এবং ৫৮১ হিজরিতে ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত এখানেই কাটান।
ঐতিহাসিকরা লেখেন, ফাতেমা সমরকন্দি আলেম ও দ্বিনি শিক্ষার্থীদের খাবার খাওয়াতে পছন্দ করতেন। বিশেষত তিনি রমজানে মাদরাসায়ে হালবের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ইফতার করাতেন। একবার অর্থসংকটে পড়লে তিনি হাতের বালা বিক্রি করে তাঁদের ইফতারের আয়োজন করেন। মহীয়সী এই নারী ৫৮১ হিজরিতে হালবে ইন্তেকাল করেন এবং হালবের ইবরাহিম খলিল মসজিদের আঙিনায় তাঁকে দাফন করা হয়।
তথ্যঋণ: ইসলামস্টোরি ও অ্যারাবিক পোস্ট।
উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ