Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ আরবদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতায় ‘দুঃসহ লজ্জাবোধ’ করেছিলেন লরেন্স

আরবদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতায় ‘দুঃসহ লজ্জাবোধ’ করেছিলেন লরেন্স

মধ্যপ্রাচ্যে ব্রিটেনের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ও বিশ্বাসঘাতকতার বিষয়ে ‘অবিরাম ও দুঃসহভাবে লজ্জাবোধ’ করেছিলেন আরব বিদ্রোহের পর ব্রিটিশ জাতীয় হিরো বনে যাওয়া টমাস এডওয়ার্ড লরেন্স। সম্প্রতি তার লেখা বইয়ের একটি অপ্রকাশিত পরিচ্ছেদের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

টি.ই. লরেন্সের লেখা দ্য সেভেন পিলার্স অব উইজডম-এর ওই পরিচ্ছেদটি তিনি বইটি প্রকাশিত হওয়ার আগে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

তার বন্ধু, আইরিশ নাট্যকার জর্জ বার্নার্ড শ তাকে ওই পরিচ্ছেদ বইয়ে না রাখার জন্য রাজি করান। এরপর কোনো সংস্করণেই সেটিকে আর রাখা হয়নি।

কিন্তু এ প্রথমবারের মতো দ্য সেভেন পিলার্স অব উইজডম-এর একটি অতিবিরল পাণ্ডুলিপির কপি প্রকাশ্যে এসেছে। বাদ দেওয়া ওই চ্যাপ্টারটি থাকা এ পাণ্ডুলিপির দাম ধরা হয়েছে ৬৫,০০০ পাউন্ড।

১৯৬২ সালে লরেন্সের জীবন ও মধ্যপ্রাচ্যে তার কাজ নিয়ে লরেন্স অব অ্যারাবিয়া সিনেমাটি মুক্তি পায়। সেখানে লরেন্সের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন পিটার ও’টুল।

অক্সফোর্ড থেকে পড়ালেখা করা প্রত্নতাত্ত্বিক লরেন্স ছিলেন একজন স্পাইও। আরব বিদ্রোহের মাধ্যমে ওসমানীয় সাম্রাজ্যকে উৎখাত করতে সহায়তা করেছিলেন তিনি। তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধও চলছিল। নিজের এ কাজের জন্য দেশে লরেন্স হিরোর মর্যাদা পান।

১৯১৬ সালে আরব মিলিটারির অটোমান সাম্রাজ্যের তুর্কি বাহিনীকে প্রতিহত করার মাধ্যমে বিদ্রোহ শুরু হয়। লরেন্স তখন আরবদের হয়ে কাজ করেন। আরবরা তখন ভেবেছিল, এ বিদ্রোহের পর মধ্যপ্রাচ্যে একটি সমন্বিত আরব রাষ্ট্র গঠিত হবে।

কিন্তু বিদ্রোহ ও যুদ্ধের পর ব্রিটিশ ও ফরাসিরা মধ্যপ্রাচ্যকে ভেঙে কয়েকটি দেশে রূপান্তর করে৷ চুক্তিভঙ্গের দায় পড়ে পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর।

১৯২৬ সালে আরব বিদ্রোহের ঘটনা নিয়ে দ্য সেভেন পিলার্স অব উইজডম প্রকাশ করেন লরেন্স। কিন্তু ১৯২৪ সালে তিনি বইটির শুরুর দিকের চ্যাপ্টারগুলোর কেবল ১০০ কপি তৈরি করে তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিনিয়োগকারীর কাছে বিতরণ করেছিলেন।

এই বিতরণকৃত কপিগুলোতেই লরেন্স উল্লেখ করেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে আরবদের নিজস্ব একটি স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করাই তার সবসময়ের উদ্দেশ্য ছিল। ১৯৩৫ সালে মারা যান টি. ই. লরেন্স।

লরেন্স লিখেন, আরব বিদ্রোহ ছিল ‘অ্যারাবিয়ায় একটি আরব লক্ষ্যের জন্য আরবদের দ্বারাই সূচিত ও পরিচালিত একটি আরব যুদ্ধ।’

তিনি আরও লিখেন, তিনি বিশ্বাস করেছিলেন, তিনি আরবদের ‘একটি নতুন জাতি তৈরি করতে, একটি হারানো প্রভাব পুনরুদ্ধারে’, ও ‘তাদের জাতীয় মননের একটি স্বপ্নপুরী নির্মাণে’ সাহায্য করছিলেন।

আরও পড়তে পারেন-

যুদ্ধের পরে মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমাদের জন্য সংকট শুরু হলে তা-তে তিনি সন্তুষ্ট হয়েছিলেন বলে নিজের লেখায় জানান লরেন্স।

লরেন্সকে অনেকে আরবদের প্রকৃত বন্ধু হিসেবে দেখেছেন। তারা মনে করেন ব্রিটিশদের দ্বারা আরবরা যে পরিমাণ বিশ্বাসঘাতকতার শিকার হয়েছিল, সেটা লরেন্সের প্রতিও বিশ্বাসঘাতকতা হয়েছিল। আবার অনেকে মনে করেন, ব্রিটিশদের এ কুকর্মের সহযোগী ছিলেন লরেন্স।

দ্য সেভেন পিলার্স অব উইজডম বইয়ের বাদ যাওয়া প্রথম পরিচ্ছেদটি প্রথম দলের দাবির দিকেই ইঙ্গিত করল বলে জানান, লরেন্সের ছাপা প্রথম ১০০ কপির এক কপি সংগ্রহ করা প্রতিষ্ঠানের জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ গ্লেন মিচেল।

‘জর্জ বার্নার্ড শ চাননি এতটা অকপটে লরেন্স মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে তার মনের কথা নিজের বইতে খুলে বলুক,’ বলেন গ্লেন।

ওই ১০০ কপির মধ্যে লরেন্স বন্ধু শ-কেও এক কপি পাঠিয়েছিলেন। নিজের লেখার বিচার করার জন্যই সাহিত্যিক বন্ধুকে কপি দিয়েছিলেন তিনি। সে কাজের পাশাপাশি, বার্নার্ড শ সম্ভাব্য কিছু মানহানিকর মন্তব্যও বাদ দিয়েছিলেন।

লরেন্স লিখেছেন: ‘আমার শ্রেষ্ঠ সমালোচক (শ) আমাকে বলেছিল, বাকি সবকিছুর তুলনায় এটা (অব্যক্ত পরিচ্ছেদ) বেশি খেলো হয়েছিল।’

বাদ পড়া ওই চ্যাপ্টারে লরেন্স লিখেছেন, আরবের নেতারা তাকে আন্তরিক মনে করেছিলেন। তাদেরকে স্বায়ত্তশাসনের কথা বলে ব্রিটিশরা নিজেদের পক্ষে আরবদের ব্যবহার করেছিল। আরবরা প্রতিষ্ঠানে নয়, ব্যক্তিতে বিশ্বাস করে।

তিনি লিখেন, দুই বছরের ওই সময়ে আরবরা তার দেশের মনোভাবকেও আন্তরিক ধরে নিয়েছিল। ‘কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা যা করলাম, তার জন্য গর্বিত হওয়ার বদলে আমি অবিরাম দুঃসহ লজ্জাবোধে পড়েছিলাম।’

সূত্র- টিবিএস।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।