মাইমুনা আক্তার
আতিথেয়তা মুমিনের অনন্য গুণ। প্রিয় নবীজির সুন্নত। নবীজি (সা.) নবুয়তপ্রাপ্তির আগেও অতিথিপরায়ণ হিসেবে বিখ্যাত ছিলেন। হেরা গুহা থেকে ফেরার পর যখন জিবরাইল (আ.) নবীজির সঙ্গে দেখা দেন, তখন তিনি আতঙ্কিত হয়ে খাদিজা (রা.)-কে বলেন, ‘আমি আমার জীবন সম্পর্কে শঙ্কা বোধ করছি।
’ তখন খাদিজা (রা.) তাঁকে বলেন, ‘কখনো না। আপনি সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আল্লাহর কসম, আল্লাহ আপনাকে কখনই লাঞ্ছিত করবেন না। কেননা আপনি তো আত্মীয়তার বন্ধন জুড়ে রাখেন, সত্য কথা বলেন, অনাথ-অক্ষমদের বোঝা বহন করেন, মেহমানদের মেহমানদারি করেন এবং হকের পথে আগত যাবতীয় বিপদে সাহায্য করেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৯৮২)
তিনি তাঁর উম্মতদেরও আতিথেয়তার প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন এবং একে মুমিনের অন্যতম গুণ বলে আখ্যা দিতেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার মেহমানকে সম্মান করে। যে আল্লাহ ও শেষদিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে জ্বালাতন না করে। যে লোক আল্লাহ ও শেষদিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে, অথবা চুপ থাকে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬০১৮)
আরও পড়তে পারেন-
- ধর্ষণ প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা
- কিশোর অপরাধ রোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
- আদর্শ পরিবার গঠনে যে সব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরী
- ইসলামে সামাজিক সম্পর্ক এবং ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখার গুরুত্ব
- মানুষ মারা যাওয়ার পর, তাঁর আত্মার কি হয় ?
ইসলামের দৃষ্টিতে মেহমানদারি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো মুমিনের কাছে কোনো মেহমান এলে তার মেহমানদারি করা মুমিনের জন্য আবশ্যক হয়ে পড়ে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু কারিম (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক রাত মেহমানদারি করা প্রত্যেক মুসলিমের কর্তব্য। যার আঙিনায় মেহমান নামে, এক দিন মেহমানদারি করা তার ওপর ঋণ পরিশোধের সমান। সে ইচ্ছা করলে তার ঋণ পরিশোধ করবে বা ত্যাগ করবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৭৫০)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু শুরাইহ আল-কাবি (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, মেহমানদারির সীমা তিন দিন। এর অতিরিক্ত দিনের আতিথ্য প্রদান সদকা হিসেবে গণ্য। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৭৪৯)
মেহমানদারির সংস্কৃতি ইসলামের সৌন্দর্যের অন্যতম অংশ, যা দেখে বহু অমুসলিম ইসলাম গ্রহণ করেছে। মুসলিমদের মেহমানদারিতে মুগ্ধ হয়ে শত্রুরা বন্ধুতে পরিণত হতো। আরবের মুহারিব গোত্র খুবই উগ্র ছিল। কট্টর ইসলামবিরোধী ছিল। ইসলামের মাধুর্যে মুগ্ধ হয়ে যখন মানুষ দলে দলে মদিনায় আসতে লাগল তখন মুহারিব গোত্রেরও ১০ জন লোক মদিনায় এলো। রাসুল (সা.) তাদের অভ্যর্থনা-আপ্যায়নের জন্য বেলাল (রা.)-কে দায়িত্ব দেন। সকাল-বিকাল তাদের আহারের সুব্যবস্থা করেন। এতে তারা মুগ্ধ-বিস্মিত হলো এবং ইসলাম গ্রহণ করে নিজ দেশে ফিরে গেল। (আসাহহুস সিয়ার, পৃষ্ঠা : ৪৪৪)
নবীজি (সা.)-এর সাহাবিরাও মেহমানদারিতে বেশ অগ্রগামী ছিলেন। তাঁদের মেহমানদারিতে খুশি হয়ে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে আয়াত নাজিল করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক রাতে আনসার লোকের এখানে একজন মেহমান আসে। তাঁর কাছে তাঁর ও তাঁর সন্তানদের খাবার ছাড়া অতিরিক্ত খাবার ছিল না। তাঁর সহধর্মিণীকে তিনি বলেন, বাচ্চাদের ঘুম পাড়িয়ে দাও, আলো নিভিয়ে ফেলো এবং তোমার কাছে যে খাবার রয়েছে তা মেহমানের সম্মুখে পরিবেশন করো। এই পরিপ্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হয়, ‘আর তারা নিজেদের ওপর অন্যকে অগ্রাধিকার দেয়, নিজেরা অভাবপীড়িত হয়েও’ [সুরা হাশর, আয়াত : ৯]। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩০৪)
প্রতিটি মুসলমানের উচিত, নবীজির এই আদর্শকে ধরে রাখা, মুসলিমদের এই সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখা।
উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ