।। মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা ।।
ইসলামের পরিভাষায় ‘উমরা’ বলে একটি শব্দ আছে। যার মানে হলো, জীবনস্বত্ব দান করা। উদাহরণস্বরূপ কেউ কাউকে বলল, আমার এই ঘরটি তোমাকে আজীবনের জন্য দিয়ে দিলাম অথবা যত দিন তুমি বেঁচে থাকো ইত্যাদি।
আগের যুগে এভাবে দান করার প্রচলনটা বেশি ছিল।
যারা তুলনামূলক সচ্ছল অনেক জমি-জমার মালিক ছিল, তারা অসহায় আত্মীয় বা অন্যদের এভাবে ভোগদখল করার জন্য সুযোগ দিত যে তুমি যত দিন বেঁচে আছ, এই জমি চাষবাস করে খাও।
প্রশ্ন হলো, কাউকে এই প্রক্রিয়ায় কিছু দান করা হলে, তার মৃত্যুর পর এই দানকৃত বস্তুটির মালিকানা যিনি দান করেছিলেন, তাঁর মালিকানায় ফেরত আসবে কি না?
এ ব্যাপারে আবু হানিফা (রহ.) বলেন, দান করার পর তাতে অধিকার স্থাপিত হলে সে ওটার মালিক হয়ে যাবে, তার মৃত্যুর পর অন্যান্য জিনিসের মতো ওটাও ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টিত হবে। কেননা ওটা হেবা বা দানের ভিন্ন এক রূপ। দাতার কোনো শর্তই হেবাকে বাতিল করবে না। কিন্তু ইমাম শাফেয়ি ও মালেক (রহ.) ভিন্ন মতও পোষণ করেছেন।
এ ধরনের দানের ব্যাপারে হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যেকোনো ব্যক্তি অন্য কোনো ব্যক্তিকে এবং তাঁর ওয়ারিশদের আজীবন ভোগ করার জন্য কিছু দান করে, তবে যাকে তা দান করেছে তা তারই হয়ে যাবে। এরপর যে দান করেছে তা তাঁর কাছে ফিরে আসবে না। কেননা, সে এমনভাবে দান করেছে, যাতে ওয়ারিশগণ তা পেয়ে গেছে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৪০৮০)
অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, জাবির (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কেউ যদি কোনো ব্যক্তিকে ‘উমরা’ হিসেবে কিছু দান করে এবং তার ওয়ারিশদের, তবে সে নিজের কথা দ্বারা নিজের অধিকার রহিত করল। তার কথা দ্বারা ওই সম্পদ ওই ব্যক্তির এবং তার উত্তরসূরিদের হয়ে যাবে। ’ (নাসায়ি, হাদিস : ৩৭৪৪)
আরও পড়তে পারেন-
- কাবলাল জুমা: কিছু নিবেদন
- দারিদ্র বিমোচনে এনজিওদের থেকে কওমি মাদ্রাসার সফলতা বেশি!
- হজ্ব-ওমরায় গেলে আমরা সেখান থেকে কী নিয়ে ফিরব?
- সমাজে পিতা-মাতারা অবহেলিত কেন
- সংঘাতবিক্ষুব্ধ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের সুমহান আদর্শ
এভাবে কোনো ব্যক্তিবিশেষকে নির্দিষ্ট না করে যদি কোনো পরিবারকেও শর্তারোপ করা হয়, যে তোমার ও তোমার সন্তানদের কেউ যত দিন বেঁচে থাকবে, তত দিনের জন্য দিলাম, তাহলেও হেবাকারীর মালিকানা থেকে ওই জিনিসের মালিকানা বাতিল হয়ে যাবে, যার জন্য হেবা করা হয়েছে, তার মালিকানায় চলে যাবে। এবং তার অবর্তমানে ওই জিনিস তার উত্তরাধিকারদের মধ্যে বণ্টিত হবে।
জাবির ইবনে আবদুল্লাহ আনসারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যেকোনো ব্যক্তি কাউকে তার সারা জীবনের জন্য এবং তার সন্তানাদির জন্য দান করে, এরূপ বলে যে ‘আমি তোমাকে তা দিলাম এবং তোমার সন্তানদের যত দিন পর্যন্ত তোমাদের মধ্যে কেউ জীবিত থাকে, তবে তা তারই হয়ে যাবে যাকে দান করা হলো। তা তার মালিকের কাছে আর ফিরে আসবে না। কারণ সে এমনভাবেই দান করেছে, যার মধ্যে উত্তরাধিকার প্রবর্তন হয়ে গেছে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৪০৮২)
তবে ‘উমরা’ বা ‘রুকবা’ ইত্যাদি দানের কোনো সুষ্ঠু পদ্ধতি নয়, কাউকে দান করতে চাইলে, পরিপূর্ণভাবে নিঃশর্ত দান করে দেওয়া উচিত। এ ধরনের শর্তযুক্ত দান পরবর্তী সময়ে প্রজন্মের মধ্যে বিভ্রান্তি ও শত্রুতা সৃষ্টি করে। ফলে যুগ যুগ ধরে দাতা-গ্রহীতার উত্তরাধিকারদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ ও হানাহানি লেগে থাকে।
ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘উমরা’ এবং ‘রুকবা’ করা সুষ্ঠু (পদ্ধতি) নয়। তবে যদি কোনো ব্যক্তি ‘উমরা’ বা ‘রুকবা’ হিসেবে কাউকে কোনো বস্তু দান করে, তবে জীবনে ও মরণে তা ওই ব্যক্তিরই হয়ে যায়, যাকে উমরা বা রুকবা করা হয়েছে। (নাসায়ি, হাদিস : ৩৭১৩)
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ