।। মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা ।।
ভ্রমণ মানুষের জ্ঞানের পরিধিকে বিস্তৃত করে। চিন্তাকে শক্তিশালী করে। নতুন নতুন উদ্ভাবনে সহায়তা করে। ভ্রমণের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সৃষ্টি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে পারে, ফলে আল্লাহর বড়ত্ব ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।
এ জন্য মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের পৃথিবীতে ভ্রমণের নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করো এবং অনুধাবন করো কিভাবে তিনি সৃষ্টি শুরু করেছেন? অতঃপর আল্লাহ পুনর্বার সৃষ্টি করবেন পরবর্তী সৃষ্টি। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। ’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ২০)
ভ্রমণ শুধু আল্লাহকে চিনতে সহায়ক নয়; বরং এটি মানুষকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। বিভিন্ন জনপদের উন্নতি ও উন্নতির মাধ্যম, নতুন নতুন প্রযুক্তি, অবনতি ও অবনতির কারণ সম্পর্কে ধারণা দেয়। ফলে মানুষ এগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের উন্নয়নে সঠিক পদক্ষেপ নিতে পারে।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ এ ব্যাপারে ইরশাদ করেন, ‘আর তারা কি জমিনে ভ্রমণ করে না? তাহলে তারা দেখত, কেমন ছিল তাদের পূর্ববর্তীদের পরিণাম। অথচ তারা তো শক্তিতে ছিল এদের চেয়েও প্রবল। আল্লাহ তো এমন নন যে আসমানসমূহ ও জমিনের কোনো কিছু তাকে অক্ষম করে দেবে। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। ’ (সুরা ফাতির, আয়াত : ৪৪)
উল্লিখিত আয়াতগুলোতে পূর্ববর্তী বিভিন্ন সভ্যতার বিকাশ ও অবসান সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়েছে। যেখানে হিদায়াতের ও আখিরাতে নাজাত লাভের শিক্ষা যেমন পাওয়া যায়, তেমনি তাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যায়। যেগুলো কাজে লাগিয়ে নিজেরাও এসব অঙ্গনে উন্নতি সাধন করা সম্ভব। যার প্রমাণ যুগে যুগে মুসলিম মনীষীরা দিয়ে গেছেন।
ইসলামের স্বর্ণযুগে বিশ্বব্যাপী মুসলিম ভ্রমণকারীদের আধিপত্য ছিল। জ্ঞানপিপাসু মুসলিমরা বৈশ্বিক জ্ঞানের খোঁজে সারাক্ষণ তাদের চিরপরিচিতি দুনিয়ায় ঘুরে বেড়াত। এ সময় তারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যায় এবং সেখানকার কৃষি কৌশলগুলোও আয়ত্ত করে। মুসলিম বিজ্ঞানীদের একটি ভালো গুণ ছিল— যেসব জ্ঞান তারা আয়ত্ত করত, বই আকারে সেগুলো লিখে রাখত।
আরও পড়তে পারেন-
- কাবলাল জুমা: কিছু নিবেদন
- দারিদ্র বিমোচনে এনজিওদের থেকে কওমি মাদ্রাসার সফলতা বেশি!
- হজ্ব-ওমরায় গেলে আমরা সেখান থেকে কী নিয়ে ফিরব?
- সমাজে পিতা-মাতারা অবহেলিত কেন
- সংঘাতবিক্ষুব্ধ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের সুমহান আদর্শ
মার্কিন ইতিহাসবিদ এসপি স্কট ১৯০৪ সালে বলেছেন, ‘মুসলিমদের রচিত বইগুলো ছিল অতীত ও বর্তমানের সংস্কৃতি ও কৃষিবিজ্ঞান ও কৌশলের এক অনন্য মিশ্রণ। তাদের এসব বইয়ের প্রভাব পূর্ব থেকে শুরু করে মাগরিব (উত্তর আফ্রিকার একটি অঞ্চল) এবং আন্দালুসিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ’
ইউনিভার্সিটি অব টরন্টোর অধ্যাপক এন্ড্রিউ ওয়াটসন বলেছেন, ‘প্রায় তিন থেকে চার শতাব্দী ধরে মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ ছিল এবং তারা নতুনত্বকে পছন্দ করত। আরচরণ, সামাজিক গঠনব্যবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা, অবকাঠামো, বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন—সব কিছুই এতে একটি বড় ভূমিকা পালন করেছে। শুধু কৃষি খাত নয়, অর্থনীতির অন্য শাখা-প্রশাখা এবং প্রায় সব কিছুই এই নতুনত্বের ছোঁয়ায় উদ্ভাসিত হয়েছে। ’ (মুসলিম সভ্যতার ১০০১ আবিষ্কার, পৃষ্ঠা ১২৬)
মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ইবাদতের পাশাপাশি দুনিয়ার আনাচে-কানাচে থাকা আল্লাহ প্রদত্ত অনুগ্রহ অনুসন্ধানেরও নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এগুলোর অনুসন্ধানে মত্ত হয়ে আল্লাহকে ভুলে যাওয়া চলবে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর যখন নামাজ সমাপ্ত হবে তখন তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পোড়ো আর আল্লাহর অনুগ্রহ হতে অনুসন্ধান কোরো এবং আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ কোরো, যাতে তোমরা সফল হতে পারো। ’ (সুরা : জুমা, আয়াত : ১০)
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জমিনে ভ্রমণ করে না? তাহলে তারা হৃদয় দিয়ে বুঝতে পারত, আর তাদের কান শুনতে পারত। প্রকৃতপক্ষে চোখ অন্ধ নয়, বরং বুকের ভেতর যে হৃদয় আছে তা-ই অন্ধ। ’ (সুরা : হজ, আয়াত : ৪৬)
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ