।। জাওয়াদ তাহের ।।
পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে ইসলামের কিছু বিধি-বিধান আছে। আমাদের অনেকের ধারণা, এসব বিধি-বিধান শুধু প্রাপ্তবয়স্ক বা বড়দের জন্যই নির্ধারিত, শিশুরা এই বিধানের আওতাভুক্ত নয়। অথচ এ ধারণাটি অমূলক। আর বাস্তবতা হচ্ছে, শিশুদের আমরা যেভাবেই লালন-পালন করব; পরিণত বয়সে তারা তা-ই বাস্তবায়ন করবে।
সে জন্য শিশুদের ক্ষেত্রে এমন কোনো জিনিস না করা, যা পরবর্তী সময়ে তাদের অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। যার খারাপ প্রভাব সন্তানদের ওপর পড়ে থাকে। নিম্নে আমরা সাহাবাদের কিছু ঘটনা তুলে ধরব—
রেশমের কাপড় পড়তে বাধা প্রদান
পুরুষের জন্য রেশমের কাপড় পরিধান করা হারাম। ছোট ছেলে হলেও তার ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য। এমন নয় যে সে তো এখনো ছোট, তার ওপর এখনো ইসলামের বিধানাবলি ফরজ হয়নি। তাই তার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। যারা এ ধরনের ধারণা করে থাকে তাদের ধারণা নিতান্ত ভুল। সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রহ.) বলেন, হুজাইফা ইবনুল ইয়ামান (রা.) এক সফর থেকে ফিরে এলেন। তখন তিনি বাড়িতে এসে তাঁর সন্তানদের রেশমের পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখলেন। তখন তিনি তাঁর ছেলেসন্তানদের জামা খুলে ফেললেন। আর কন্যাসন্তানদেরগুলো রেখে দিলেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ২৫১৪৬)
আরও পড়তে পারেন-
- কাবলাল জুমা: কিছু নিবেদন
- দারিদ্র বিমোচনে এনজিওদের থেকে কওমি মাদ্রাসার সফলতা বেশি!
- হজ্ব-ওমরায় গেলে আমরা সেখান থেকে কী নিয়ে ফিরব?
- সমাজে পিতা-মাতারা অবহেলিত কেন
- সংঘাতবিক্ষুব্ধ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের সুমহান আদর্শ
এভাবে শিশুদের বিজাতীয় পোশাক পরানো নিষিদ্ধ। অনেকে মনে করে, শিশুদের পোশাক সম্পর্কে শরিয়তের বিশেষ কোনো নীতিমালা নেই। যেকোনো পোশাক পরানো যাবে। অথচ তাদের এ ধারণা ঠিক নয়। বড়দের ব্যাপারে যেমন পোশাকের নীতিমালা রয়েছে, তেমনি ছোটদের ক্ষেত্রে সে নিয়ম অভিন্ন। বিজাতীয় পোশাক যেমন বড়দের জন্য নিষিদ্ধ, তেমনি ছোটদের জন্যও নিষিদ্ধ। একইভাবে ছেলেদের মেয়েদের পোশাক এবং মেয়েদের ছেলেদের পোশাক পরানোও নিষিদ্ধ। নাবালেগ সন্তানদের এ ধরনের নিষিদ্ধ পোশাক পরালে এর গুনাহ মা-বাবার ওপর বর্তাবে।
স্বর্ণের জিনিস পরানো
অনেককেই শখ করে ছেলেসন্তানদের স্বর্ণের আংটি কিংবা চেইন ব্যবহার করতে দেখা যায়। এবং একে কিছুই মনে করে না তারা। সাঈদ ইবনে আবু হুসাইন তাঁর শৈশবের ঘটনা শুনিয়েছেন যে আমি উম্মে সালামা (রা.)-এর কাছে গিয়েছিলাম। তখন আমার হাতে একটি সোনার আংটি ছিল। এটা দেখে তিনি একজন মেয়েকে বললেন, এর হাত থেকে আংটিটা খুলে নাও। তখন সে তা খুলে নিল। উম্মে সালাম (রা.) তখন বললেন, এটা তার পরিবারের কাছে দিয়ে দেবে এবং একটি রুপার আংটি বানিয়ে নেবে। তখন আমি বললাম, আমার পরিবারের এই আংটির প্রয়োজন নেই। তিনি তখন বললেন, তাহলে তার সদকা করে দিয়ো এবং আরেকটা রুপার আংটি বানিয়ে নিও। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদিস : ২৫৬৫২)
পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করা যেমন হারাম, তেমনি চুল-দাড়ি ছাড়া অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে মেহেদি লাগানো নিষিদ্ধ। এ ক্ষেত্রেও অনেকে মনে করেন, এ বিধান শুধু বড়দের জন্য। তাই অপ্রাপ্ত ছেলেসন্তানকে স্বর্ণের আংটি পরানো, মেহেদি লাগানোকে তারা অপরাধ মনে করে না। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। ছেলেশিশুদের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করা, মেহেদি লাগানো নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা সব অভিভাবককে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার তাওফিক দান করুন।
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ