।। আবরার আবদুল্লাহ ।।
আরবের বিখ্যাত দাতা হাতেম তাঈ। যাঁর বদান্যতার গল্প আরব উপদ্বীপ ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল সমগ্র বিশ্বে। তাঁর পরিবার রাসুল (সা.)-এর যুগেই ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেছিল। দাতা হাতেমের ছেলে আদি ইবনে হাতেম (রা.) ছিলেন নবীজি (সা.)-এর সাহাবি।
ঐতিহাসিক ইবনে ইসহাক তাঁর ইসলাম গ্রহণের বর্ণনা এভাবে তুলে ধরেন।
আদি ইবনে হাতেম (রা.) বলতেন, আরবে আমার চেয়ে কেউ রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কথা বেশি অপছন্দ করত না। তবে আমি স্বভাবে সম্ভ্রান্ত এবং ধর্মে খ্রিস্টান ছিলাম। আমার কাজ ছিল চৌথ (লুণ্ঠিত সম্পদের এক-চতুর্থাংশ) উশুলের জন্য বিভিন্ন গোত্রে ঘুরে বেড়ানো।
মহানবী (সা.)-এর আগমনের কথা শুনে আমার গা জ্বলত। আমি আমার গোলামকে নির্দেশ দিলাম সে যেন আমার উটের পাল থেকে কিছু মোটাতাজা উট বাছাই করে রাখে এবং মুহাম্মদ (সা.)-এর বাহিনী আসছে এই কথা শুনলে আমাকে সঙ্গে সঙ্গে খবর দেয়। কিছুদিন পর সে আমাকে খবর দিল মুহাম্মদ (সা.)-এর বাহিনী আপনার দিকে এগিয়ে আসছে।
আমি তখনই সিরিয়ার পথ ধরলাম এবং আমার এক বোন সাফফানা বিনতে হাতেমকে সেখানেই রেখে গেলাম। আমি চলে যাওয়ার পরপর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ঘোড়সওয়ার বাহিনী গোত্রের ওপর চড়াও হলো। অন্যদের মতো হাতেমের কন্যাকে বন্দি করে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সামনে হাজির করা হলো এবং আমার পালিয়ে যাওয়ার সংবাদ তাঁকে জানানো হলো।
অন্যান্য বন্দির মতো হাতেমের কন্যাকেও মসজিদ-ই-নববীতে আটকে রাখা হয়। একদিন মহানবী (সা.) সে স্থান অতিক্রম করার সময় তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার বাবা মারা গেছেন, অনাথের ভরসা হারিয়ে গেছে। আমার প্রতি অনুগ্রহ করুন। আল্লাহ আপনাকে অনুকম্পা করবেন। নবীজি (সা.) জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার ভরসা কে? হাতেমকন্যা বলল, আদি ইবনে হাতেম।
আরও পড়তে পারেন-
- কাবলাল জুমা: কিছু নিবেদন
- দারিদ্র বিমোচনে এনজিওদের থেকে কওমি মাদ্রাসার সফলতা বেশি!
- হজ্ব-ওমরায় গেলে আমরা সেখান থেকে কী নিয়ে ফিরব?
- সমাজে পিতা-মাতারা অবহেলিত কেন
- সংঘাতবিক্ষুব্ধ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের সুমহান আদর্শ
তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল থেকে পলায়নকারী? এরপর তিনি চলে গেলেন। এভাবে তিন দিন অনুগ্রহ ও মুক্তি চাওয়ার পর নবীজি (সা.) তাঁকে মুক্তি দিলেন। তবে বললেন, তুমি চলে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ো না। বরং তোমাকে নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার মতো নির্ভরযোগ্য লোক পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করো।
অতঃপর কুজায়া গোত্রের কিছু লোকের সঙ্গে হাতেমকন্যা সফরের প্রস্তুতি নিলে মহানবী (সা.) তাঁকে বাহন, পোশাক ও প্রয়োজনীয় পাথেয় দিলেন। বোন সিরিয়ায় পৌঁছানোর পর আদি ইবনে হাতেম (রা.)-কে বকাঝকা করে তাঁকে ফেলে রেখে আসায় এবং তিনি তাঁর ভুল স্বীকার করে নেন। বোনই তাঁকে পরামর্শ দিলেন তিনি যেন মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে দেখা করেন।
আদি ইবনে হাতেম (রা.) নিশ্চিত হতে চাইছিলেন, মুহাম্মদ (সা.) কোনো সাধারণ বাদশাহ, নাকি সত্যিকার নবী। কিছু বিষয় প্রত্যক্ষ করার পর তিনি নিশ্চিত হন, তিনি নবী। যেমন সাধারণ মানুষের সঙ্গে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দীর্ঘ সময় কথা বলা, বিছানায় আদি (রা.)-কে বসিয়ে নিজে নিচে বসা এবং আদি (রা.)-এর ক্ষমতার গোপন মোহ সম্পর্কে বলে দেওয়া ইত্যাদি। এরপর তিনি বিলম্ব না করেই ইসলাম গ্রহণ করেন। (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ৫/১২২)
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ