।। মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা ।।
সূর্য মহান আল্লাহর কুদরতের নিদর্শনাবলির অন্যতম। তিনি তাঁর এই সৃষ্টিকে পৃথিবীর জীবজগতের অস্তিত্বের চাবিকাঠি বানিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে তিনি তাঁর এই সৃষ্টির গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে এর শপথ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, শপথ সূর্যের ও তার (উজ্জ্বল) কিরণের, শপথ চন্দ্রের যখন ওটা সূর্যের পর আবির্ভূত হয়।
শপথ দিনের যখন তা সূর্যকে উদ্ভাসিত করে, শপথ রাতের যখন তা সূর্যকে ঢেকে নেয়, শপথ আকাশের এবং যিনি ওটা নির্মাণ করেছেন তাঁর। শপথ পৃথিবীর এবং যিনি ওকে বিস্তৃত করেছেন তাঁর। (সুরা শামস, আয়াত : ১-৬)
মহান আল্লাহর এই নিয়ামতের মাধ্যমে আমরা যেমন আলো পাই, দিন ও মাসের হিসাব রাখতে পারি, সময়ের হিসাব রাখতে পারি। তেমনি এটি আমাদের জ্বালানি চাহিদা পর্যন্ত মেটাতে সক্ষম। সুবহানাল্লাহ!
তা ছাড়া পৃথিবীতে বসবাসকারী প্রাণী, গাছপালা, তরুলতা ইত্যাদি বেঁচে থাকার জন্য সূর্যের আলো ও তাপের প্রয়োজন আছে। এ কারণেই হয়তো মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে মানবজাতিকে জানিয়েছেন যে তিনি চন্দ্র-সূর্যকে অনর্থক সৃষ্টি করেননি। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি সূর্যকে করেছেন তেজোদীপ্ত, আর চন্দ্রকে করেছেন আলোকময় আর তার (হ্রাস-বৃদ্ধির) মানজিল সঠিকভাবে নির্ধারণ করেছেন, যাতে তোমরা বছর গুণে (সময়ের) হিসাব রাখতে পারো। আল্লাহ এটা অনর্থক সৃষ্টি করেননি, তিনি নিদর্শনগুলোকে বিশদভাবে বর্ণনা করেন জ্ঞানী সমপ্রদায়ের জন্য। ’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৫)
আরও পড়তে পারেন-
- কাবলাল জুমা: কিছু নিবেদন
- দারিদ্র বিমোচনে এনজিওদের থেকে কওমি মাদ্রাসার সফলতা বেশি!
- হজ্ব-ওমরায় গেলে আমরা সেখান থেকে কী নিয়ে ফিরব?
- সমাজে পিতা-মাতারা অবহেলিত কেন
- সংঘাতবিক্ষুব্ধ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের সুমহান আদর্শ
এই আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তিনি সূর্যকে করেছেন তেজোদীপ্ত। ’ বাস্তবেও সূর্য বিশাল এক অগ্নিগোলকের নাম। নাসার তথ্যমতে, এক সেকেন্ডের প্রতি ১.৫ মিলিয়ন ভাগ সময়ে সূর্য যতটুকু শক্তি বিকিরণ করে, তা সমস্ত মানুষের সারা বছরের ব্যবহৃত শক্তির চেয়েও বেশি। (স্পেস ডটকম)
যদি কোনো কারণে মাটির নিচের মজুদ তেল, গ্যাস, কয়লা, পেট্রলসহ সব জ্বালানি শেষ হয়ে যায়, তখনো পৃথিবীর জ্বালানি চাহিদা মেটানোর জন্য সৌরশক্তি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, যা আসে সূর্যের আলো থেকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন সূর্য পৃথিবীর ওপর যে আলো ফেলছে, তার শক্তি পৃথিবীর সারা বছরে ব্যবহৃত মোট জ্বালানি শক্তির তিন গুণের সমান। তার মানে, আমাদের চাহিদা মেটাতে পৃথিবীর ১ শতাংশ স্থানে যতটা সৌরশক্তি পড়ে, তার এক-দশমাংশ সৌরশক্তিই যথেষ্ট।
সুবহানাল্লাহ! মহান আল্লাহ কত নিপুণভাবে আমাদের জন্য তাঁর এত এত বড় মাখলুকগুলোকে বিরামহীনভাবে নিয়োজিত রেখেছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তিনি সূর্য ও চাঁদকে তোমাদের জন্য নিয়োজিত করেছেন বিরামহীনভাবে এবং তোমাদের জন্য নিয়োজিত করেছেন রাত ও দিনকে। ’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত : ৩৩)
এভাবেই প্রতি মুহৃর্তে মহান আল্লাহর অসংখ্য অগণিত অমূল্য নিয়ামত ভোগ করেও আমরা মহান আল্লাহর নাফরমানিতে ডুবে থাকি। মহান আল্লাহ আমাদের হিদায়াত দান করুন। আমিন
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএ