।। সাইফুল ইসলাম তাওহিদ ।।
আল্লাহ তাআলার পরে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাবান প্রিয়নবী মুহাম্মদ (সা.)। যাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিশ্বজাহান। প্রতিটি মুমিনের কাছে তিনি প্রাণের চেয়েও প্রিয়। তাঁর প্রশংসা করেছেন আল্লাহ তাআলা নিজেই।
তাঁর সুমহান চরিত্রের উল্লেখ করেছেন মহাগ্রন্থ আল কোরআনে। নবিপত্নী আয়েশা (রা.)-এর ভাষ্য মতে, তাঁর চরিত্র ছিল কোরআনের মতো। নিম্নে কোরআনের দৃষ্টিতে রাসুল (সা.)-এর মর্যাদা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
১. বিশ্ববাসীর জন্য রহমত : রাসুল (সা.)-এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো তিনি বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ। আল্লাহ তাআলা অন্য সব নবী-রাসুলকে নির্দিষ্ট জাতি বা অঞ্চলে মানুষের কাছে প্রেরণ করেছেন। যেমন—হুদ (আ.) সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি আদ জাতির কাছে তাদের সমগোত্রীয় ভাই হুদকে প্রেরণ করেছি। ’ (সুরা : আল-আরাফ, আয়াত : ৬৫)
কিন্তু রাসুল (সা.)-কে প্রেরণ করেছেন সমগ্র মানবজাতির জন্য। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি। ’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)
২. নবীদের থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ : আল্লাহ তাআলা যে রাসুল (সা.)-কে সম্মানিত করেছেন তার আরেকটি দৃষ্টান্ত হলো, আল্লাহ তাআলা পূর্ববর্তী সব নবী-রাসুল থেকে অঙ্গীকার নিয়েছেন তাঁরা রাসুল (সা.)-কে পেলে রাসুল (সা.)-এর ওপর ইমান আনবেন এবং সাহায্য করবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আল্লাহ যখন নবীদের কাছ থেকে অঙ্গীকার গ্রহণ করলেন যে, আমি যা কিছু তোমাদের দান করেছি কিতাব ও জ্ঞান এবং অতঃপর তোমাদের কাছে যদি কোনো রাসুল আসেন তোমাদের কিতাবকে সত্য বলে দেওয়ার জন্য, তখন সে রাসুলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তাকে সাহায্য করবে। তিনি বললেন, তোমরা কি অঙ্গীকার করছ এবং এই শর্তে আমার ওয়াদা গ্রহণ করে নিয়েছ? তারা বলল, আমরা অঙ্গীকার করেছি। তিনি বললেন, তাহলে এবার সাক্ষী থাকো। আর আমিও তোমাদের সাথে সাক্ষী রইলাম। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৮১)
আরও পড়তে পারেন-
- কাবলাল জুমা: কিছু নিবেদন
- দারিদ্র বিমোচনে এনজিওদের থেকে কওমি মাদ্রাসার সফলতা বেশি!
- হজ্ব-ওমরায় গেলে আমরা সেখান থেকে কী নিয়ে ফিরব?
- সমাজে পিতা-মাতারা অবহেলিত কেন
- সংঘাতবিক্ষুব্ধ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের সুমহান আদর্শ
৩. অনন্য আহ্বান : কোরআনে আল্লাহ সব নবী-রাসুলকে তাঁদের নামে ডেকেছেন। যেমন—হে আদম, হে নুহ, হে ইবরাহিম, হে মুসা। কিন্তু কোরআনের কোথাও আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.)-কে তাঁর নাম ধরে ডাকেননি। বরং ডেকেছেন হে সম্মানিত নবী, হে সম্মানিত রাসুল, হে চাদরাবৃত ইত্যাদি উপাধিতে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে সম্মানিত নবী, আমি আপনাকে সাক্ষীদাতা, সুসংবাদদাতা ও ভীতিপ্রদর্শনকারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। ’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪৫)
৪. অনুপম চরিত্রের অধিকারী : রাসুল (সা.)-এর মর্যাদার আরেকটি নজির হলো, আল্লাহ কোরআনে প্রায় প্রত্যেক নবীর বেশকিছু গুণের উল্লেখ করেছেন। যেমন—ইবরাহিম (আ.) সম্পর্কে বলেন, ‘ইবরাহিম (আ.) অবশ্যই ধৈর্যশীল, কোমল অন্তরের অধিকারী, আল্লাহমুখী। ’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ৭৫)। কিন্তু রাসুল (সা.)-এর গুণাবলি ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি সুমহান অনুপম চরিত্রের অধিকারী। ’ (সুরা : কলম, আয়াত : ৪)
৫. ধারাবাহিক প্রশংসা : আল কোরআনে আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.)-এর ধারাবাহিক প্রশংসা করেছেন। যেমনটি আমরা সুরা নাজমের প্রারম্ভে দেখতে পাই। আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.)-এর আকল তথা বুদ্ধিমত্তার প্রশংসায় বলেন, তোমাদের সঙ্গী পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি। (সুরা : নাজম, আয়াত : ২)
তাঁর ভাষা ও কথার প্রশংসায় বলেন, ‘এবং প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। ’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ৩)। তাঁর কাছে আগমনকারী ফেরেশতার প্রশংসায় বলেন, ‘তাঁকে শিক্ষা দান করে এক শক্তিশালী ফেরেশতা। ’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ৫)
তাঁর দৃষ্টির প্রশংসায় বলেন, তাঁর দৃষ্টিবিভ্রম হয়নি এবং সীমালঙ্ঘনও করেনি। (সুরা : নাজম, আয়াত : ১৭)
কোরআনে আল্লাহ তাআলা রাসুল (সা.)-এর আনুগত্যকে আল্লাহর ভালোবাসার মানদণ্ড বা মাধ্যম হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমাকে অনুসরণ করো, যাতে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল দয়ালু। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)
উম্মাহ২৪ডটকম:এসএ