।। মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা ।।
বর্তমান যুগে আত্মপ্রদর্শন এবং খ্যাতির নেশা মানসিক রোগে পরিণত হচ্ছে। খ্যাতির নেশায় মানুষ এমন সব উদ্ভট কাজে লিপ্ত হচ্ছে, যা কখনো কখনো মানুষের জীবনের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। যেমন—বিভিন্ন বিনোদনমূলক প্ল্যাটফরমে ভিডিও কনটেন্ট বানানো। বর্তমানে কিশোর থেকে বুড়ো সব বয়সী মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ভিডিও তৈরিতে।
খ্যাতি অর্জনের নেশায় কেউ ফাঁসির অভিনয় করতে গিয়ে ফাঁসিতে ঝুলে যাচ্ছে, কেউ আবার ট্রেনের নিচে শুয়ে যাচ্ছে, কেউ আবার সাগরে ভিডিও করতে গিয়ে ঢেউয়ের সঙ্গে ভেসে যাচ্ছে। অথচ এভাবে নিজেদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া হারাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করো এবং নিজ হাতে নিজেদের ধ্বংসে নিক্ষেপ কোরো না। আর সৎকর্ম কোরো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৯৫)
আরও পড়তে পারেন-
- কাবলাল জুমা: কিছু নিবেদন
- দারিদ্র বিমোচনে এনজিওদের থেকে কওমি মাদ্রাসার সফলতা বেশি!
- হজ্ব-ওমরায় গেলে আমরা সেখান থেকে কী নিয়ে ফিরব?
- সমাজে পিতা-মাতারা অবহেলিত কেন
- সংঘাতবিক্ষুব্ধ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামের সুমহান আদর্শ
এই কথা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট যে, ভাইরাল হওয়ার জন্য মানুষ যে উদ্ভট কাজগুলো করে, এগুলো সৎকর্ম নয়। এগুলো দুনিয়া-আখিরাতের কোনো কল্যাণ বয়ে আনে না। বরং অনেক ক্ষেত্রে বিপদ ডেকে আনে, সমাজে অশ্লীলতা ছড়ায়, মানুষকে পাপে কিংবা অনর্থক কাজে লিপ্ত করে। পাপ কাজে লিপ্ত হওয়া মানুষের কাছে হালকা বিষয় হয়ে যায়। পাপ করতে করতে একসময় তারা আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত থেকে নিরাশ হয়ে পড়ে। বারা ইবনে আজেব ও নোমান ইবনে বশির (রা.) বলেছেন, পাপের কারণে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত থেকে নিরাশ হওয়াও নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়ার নামান্তর। (মাজমাউ আল-জাওয়ায়িদ: ৬/৩১৭)
তা ছাড়া মানুষ যেহেতু মরণশীল, তাই যাওয়ার আগে তারা যদি এমন পথ রেখে যায়, যা মৃত্যুর পরও তাদের আমলনামায় পাপের বোঝা ভারী করবে, তাহলে তার চেয়ে দুর্ভাগ্যের বিষয় আর কী হতে পারে। যারা বিভিন্ন গুনাহের ভিডিও বানিয়ে তা ভাইরাল করে গুনাহের পরম্পরার দ্বার খুলে দেন, তাদের বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত। কেননা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর মানুষের মধ্যে কেউ কেউ না জেনে আল্লাহর পথ থেকে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য অনর্থক কথা খরিদ করে, আর তারা আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে। তাদের জন্য রয়েছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি। ’ (সুরা : লুকমান, আয়াত : ৬)
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি মানুষকে নেক কাজের দাওয়াত দেবে সে ওই লোকদের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে; যারা তার দাওয়াত পেয়ে নেক কাজ করবে অথচ তাদের সওয়াবের সামান্যও হ্রাস পাবে না। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি মানুষকে গুনাহের কাজের দাওয়াত দেবে সে ওই লোকদের সমপরিমাণ গুনাহ পাবে, যারা তার দাওয়াত পেয়ে গুনাহের কাজ করবে। অথচ তাদের গুনাহ হ্রাস পাবে না। (মুসলিম, হাদিস : ৬৯৮০)
মহান আল্লাহ সবাইকে এমন পাপ থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
উম্মাহ২৪ডটকম:এসএ