।। মুফতি আবদুল্লাহ নুর ।।
কোরবানির পশুর গোশত নিজে খাবে, নিজের পরিবারকে খাওয়াবে, আত্মীয়-স্বজনকে হাদিয়ে দেবে এবং গরিব-মিসকিনকে সাদকা করবে। গোশত বিতরণের মুস্তাহাব পদ্ধতি হলো তিন ভাগ করে এক ভাগ পরিবার-পরিজনের জন্য রাখবে এবং বাকি দুই ভাগের এক ভাগ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে আর এক ভাগ গরিব-মিসকিনকে বণ্টন করে দেবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ১/৪৭৩)
কয়েক ব্যক্তি একসঙ্গে শরিক হয়ে যদি একটি পশু কোরবানি করে তবে পাল্লা দ্বারা মেপে সমানভাবে গোশত বণ্টন করে নেবে। অনুমান করে বণ্টন করা জায়েজ নয়।
কেননা ভাগে কমবেশি হলে তা সুদ বলে গণ্য হবে। অবশ্য যদি গোশতের সঙ্গে মাথা, পায়া এবং চামড়াও ভাগ করে দেয়, তবে যেভাগে মাথা, পায়া ও চামড়া থাকবে সে ভাগে যদি গোশত কম হয়, তবে এই বণ্টন শুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু যে ভাগে গোশত বেশি সেই ভাগে মাথা, পায়া বা চামড়া দিলে বণ্টন শুদ্ধ হবে না, সুদ হবে এবং গুনাহগার হতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ২/২৩২)
কোরবানির গোশত অমুসলিমকেও দেওয়া বৈধ। কিন্তু মজুরি বাবদ দেওয়া বৈধ নয়। অবশ্য মুসলিমদের দেওয়াই উত্তম। কসাইকে গোশত বানানোর মজুরি হিসেবে গোশত, চামড়া, রশি ইত্যাদি দেওয়া বৈধ নয়। পারিশ্রমিক দিতে হলে তা ভিন্নভাবে আদায় করবে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি : ৫/৩০)
কোরবানির গোশত কোরবানিদাতার জন্য বিক্রি করা মাকরুহ তাহরিমি। যদি কেউ বিক্রি করে তাহলে এর মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৫/৪৭৭)
গরু, মহিষ বা উটের মধ্যে কয়েক ব্যক্তি শরিক থাকলে তারা নিজেদের মধ্যে গোশত ভাগ করে নেওয়ার পরিবর্তে যদি সব গোশত একত্রে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করে বা রান্না করে তাদের খাওয়ায় তবে এটাও জায়েজ। কিন্তু শরিকদের কোনো একজন ভিন্ন মত প্রকাশ করলে তা জায়েজ হবে না। (মাসায়িলে ঈদাইন, পৃষ্ঠা ১৮৩)
আরও পড়তে পারেন-
- মাহে যিলহজ্জ এবং কুরবানীর ফাযায়েল ও মাসায়েল
- পবিত্র কুরবানীঃ ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত করে
- কার উপর ‘কুরবানী’ আদায় করা ওয়াজিব?
- ‘কুরবানী’ মুমিন জীবনে যে শিক্ষা দিয়ে থাকে
- কুরবানীর ইতিহাস ও তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
কোরবানির গোশত তিন দিনের বেশি সময় জমিয়ে রাখাও জায়েজ এবং কোরবানির পশুর রশিও সদকা করা মুস্তাহাব। (হিদায়া : ৪/৪৫০; মাসায়িলে ঈদাইন, পৃষ্ঠা ১৮৪)
কোরবানির পশুর চামড়া দান করে দেবে এবং নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। আর বিক্রি করলে তার মূল্য গরিব ও মিসকিনদের দান করতে হবে। বিক্রীত পয়সা নিজে খরচ করে যদি অন্য পয়সা দান করে, তবে আদায় হবে—তবে মাকরুহ হবে। কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য মাদরা ও মসজিদের মেরামতের কাজে অথবা মাদরাসার শিক্ষক, দায়িত্বশীল, ইমাম-মুয়াজ্জিন প্রমুখ ব্যক্তিকে বেতন হিসেবে প্রদান করা জায়েজ নেই। (হিদায়া : ৪/৪৩৪; মাসায়িলে ঈদাইন, পৃষ্ঠা ১৯২)
কোরবানির পশুর গোশত কাটা ইত্যাদি কারণে যথোচিত মূল্যের কমে কসাইয়ের কাছে চামড়া বিক্রয় করা বৈধ নয়। (ফাতাওয়ায়ে শামি : ৪/২৩৪)
উম্মাহ২৪ডটকম:এসএএম