আর ক’দিন বাদেই কুরবানীর ঈদ। এই ঈদে সামর্থ্যবান ব্যক্তি যার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়েছে তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে বিভিন্ন পশু (গরু, ছাগল, উট, মহিষ, দুম্বা ইত্যাদি) কুরবানী করে থাকেন। কুরবানীকৃত পশুর চামড়া থেকে দেশে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম হলো চামড়া শিল্প। অর্থাৎ পোশাক শিল্পের পরেই চামড়া শিল্পের স্থান।
এবার লক্ষ্য করুন- ২০১৩ সালে গরুর কাঁচা চামড়ার দাম ছিলো প্রতি বর্গফুট ৮৫-৯০ টাকা, যা ২০২০ সালে এসে নেমে যায় ৩৫-৪০ টাকায়। ২০২১ সালে ৪০-৪৫ টাকা দাম নির্ধারণ হলেও এই দামে বিক্রি হয়নি! বিগত কয়েক বছর ন্যায্যমূল্য না পাওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও কোথাও পানিতে ভাসিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। দেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানি পণ্যের এমন দৃশ্য অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ বলে মনে করি।
আমরা সকলেই অবগত আছি, চামড়া থেকে তৈরিকৃত জুতা, স্যান্ডেল, ব্যাগ, মানিব্যাগ, জ্যাকেট, হাতমোজা, পা মোজা, বেল্ট, ওয়ালেট ইত্যাদি পণ্যের দাম হাতের নাগালের বাহিরে থাকলেও সেই তুলনায় চামড়ার মূল্য একেবারেই তুচ্ছ।
আরও পড়তে পারেন-
- মাহে যিলহজ্জ এবং কুরবানীর ফাযায়েল ও মাসায়েল
- পবিত্র কুরবানীঃ ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত করে
- কার উপর ‘কুরবানী’ আদায় করা ওয়াজিব?
- ‘কুরবানী’ মুমিন জীবনে যে শিক্ষা দিয়ে থাকে
- কুরবানীর ইতিহাস ও তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ
আমরা জানি, দেশের কওমী মাদরাসাগুলোতে লাখ লাখ সুবিধাবঞ্চিত, গরীব ও অসহায় শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করেন। বিপুলসংখ্যক এই শিক্ষার্থীর লেখাপড়া, থাকা-খাওয়া তথা ভরণপোষণের জন্য সরকারি কোন বাজেট নেই। তাছাড়া সরকারি বাজেটের প্রয়োজনও মনে করেন না সংশ্লিষ্টরা। এসব মাদরাসাগুলো দেশের সাধারণ জণগণের টাকায় পরিচালিত হচ্ছে। বিশেষকরে রমজান উপলক্ষে যাতাক-ফেতরা, আর কুরবানী উপলক্ষে চামড়া বিক্রির টাকা কওমী মাদরাসার আয়ের অন্যতম উৎস।
জানা যায়, কুরবানীর পশুর চামড়া থেকে কমপক্ষে তিন থেকে চার মাসের ব্যয় মেটানো সম্ভব হতো।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য পরিকল্পিতভাবে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেটকারী এই শিল্পকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। সিন্ডিকেট করে পরিকল্পিতভাবে চামড়ার দামে বিপর্যয় ঘটিয়ে যারা গরিব, এতিম ও অসহায়দের হক নষ্ট করছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনা উচিত।
তাছাড়া দেশের কওমী মাদরাসাগুলোর উন্নয়ন ও চামড়া শিল্পকে রক্ষায় দেশের সর্বস্তরের জনগণকে সোচ্চার হতে হবে। চামড়া শিল্প থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ ও সিণ্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে সরকার এবং প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
– মুহাম্মদ নূর হোসাইন, কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ।
উম্মাহ২৪ডটকম:এমএ