Home ইসলাম ইসলামের আলোকে শানে রেসালাত বনাম শাতিমে রাসূল

ইসলামের আলোকে শানে রেসালাত বনাম শাতিমে রাসূল

।। মুফতি রাশেদুল ইসলাম মেখলী ।।

সৃষ্টিলগ্ন থেকে আজ পর্যন্ত অগণিত মনীষীর আবির্ভাব ঘটেছে পৃথিবীতে। তাদের মাঝে এই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও সর্বোচ্চ সম্মাননায় আর কারো তুলনা নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত। আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারিমে বিশ্বনবির মর্যাদা, সম্মান ও আলোচনাকে সবার উর্ধ্বে তুলে ধরেছেন। একাধিক আয়াতে আল্লাহ তাআলা এ বিষয়গুলো ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন।

وَرَفَعْنَا لَـكَ ذِكْرَك   

‘আর আমি আপনার খ্যাতিকে সুউচ্চ করেছি।’ (সুরা আলাম নাশরাহ)।

وَمَاۤ اَرْسَلْنٰكَ اِلَّا رَحْمَةً لِّـلْعٰلَمِيْنَ

‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত স্বরূপই প্রেরণ করেছি।’ (সুরা আম্বিয়া : আয়াত ১০৭)

وَمَاۤ  اَرْسَلْنٰكَ اِلَّا كَآفَّةً  لِّلنَّاسِ بَشِيْرًا وَّنَذِيْرًا وَّلٰـكِنَّ اَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُوْنَ

‘আমি আপনাকে সমগ্র মানবজাতির জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসেবে প্রেরণ করেছি। কিন্তু বেশির ভাগ মানুষ তা জানে না।’ (সুরা সাবা : আয়াত ২৮)

لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِىْ رَسُوْلِ اللّٰهِ اُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَنْ كَانَ يَرْجُوا اللّٰهَ وَالْيَوْمَ الْاٰخِرَ وَذَكَرَ اللّٰهَ كَثِيْرً

তোমাদের মধ্যে যাহারা আল্লাহ্ ও আখিরাতকে ভয় করে এবং আল্লাহ্‌কে অধিক স্মরণ করে তাহাদের জন্য তো রাসূলুল্লাহর মধ্যে রহিয়াছে উত্তম আদর্শ।(সূরা আহযাব : আয়াত ২১)

হজরত মুহাম্মদ (সা:) যে বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম মহামানব এটা শুধু পবিত্র মহাগ্রন্থ কোরআন-হাদিস তথা ইসলামী মানুষিকতারই বহিঃপ্রকাশ নয়, বরং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:)-এর অকল্পনীয় সহনশীলতা, ধৈর্য্য শক্তি, চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা, চলাফেরা, আদব-কায়দা। শিষ্টাচার, সুমধুর ব্যতিক্রমী ব্যবহার, নিষ্ঠাবান সংগ্রামী জীবন, তার পর্যবেক্ষণ পারদর্শিতা, বিচক্ষণতা, জ্ঞান-প্রজ্ঞা, প্রখর বুদ্ধিমত্তা, নারী অধিকার, মানবাধিকার, অসামপ্রদায়িক রাজনৈতিক মনোভাব, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে এবং সেগুলোর চুল ছেড়া বিশ্লেষণ করে বিশ্বের বরেণ্য জ্ঞানী-গুণী অমুসলিম মনীষীরাও মহানবী (সা:)-এর প্রশংসা করতে বাধ্য হয়েছেন। এসব বিশ্বজোড়া খ্যাতনামা মনীষীরা সবাই একবাক্যে স্বীকার করেছেন, তিনিই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মহামানব।

হযরত মুহাম্মদ (সা:) স্বীয় গুণাবলীর কারণে তিনি যে সমগ্র জাতির মধ্যে একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব সেটা পৃথিবীর বহু বিখ্যাত অমুসলিম ঐতিহাসিক তথা চিন্তাবিদগণ নানা প্রসঙ্গে স্বীকার করেছেন। উদাহরণস্বরূপ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কয়েকজন বরেণ্য অমুসলিম মনীষীদের উক্তি এখানে তুলে ধরা হলো।-

(1) বিশ্ব বিখ্যাত খ্রিস্টান লেখক, মাইকেল এইচ হার্ট 1978  সনে “the hundred”নামে একটি বই প্রকাশ করেন এবং তাতে জগত সেরা ঐতিহাসিক’ 100 মনীষীর মধ্যে প্রথম নামটি লেখেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের, দ্বিতীয়তে যিশুখ্রিস্টের।মাইকেল হার্ট তার ঐতিহাসিক গ্রন্থে বলেন, পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব বা সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে আমি মোহাম্মদ (সাঃ) কে নির্বাচন করায় অনেকেই অবাক হয়েছেন। কিন্তু সর্বকালের ইতিহাসে মোহাম্মদ (সাঃ) এমনই এক ব্যক্তি যিনি ধর্মীয় এবং ধর্মের বাইরের উভয় ক্ষেত্রেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন করেছেন। সে নিজের বক্তব্যের দৃঢ়টা প্রদর্শন করে বলেছেন- “ÒMUHAMMAD UNLIKE JESUS WAS SECULAR AS WELL AS RELIGIOUS LEADER… HE MAY WELL RANK AS THE MOST INFLUENTIAL POLITICAL LEADER OF ALL TIMES.IT IS THE UNPARALLELED COMBINATION ON SECULAR AND RELIGIOUS INFLUENCE WHICH I ENTITLE MUHAMMAD TO BE CONSIDERED MOST INFLUERRTIAL SINGLE PERSON IN HUMMAN HISTORY”

(২) ইংরেজ পন্ডিত জর্জ বার্নাড’শ এভাবে মন্তব্য করেন।

“IF A MAN LIKE MUHAMMAD WERE TO ASSUME THE DICTATORSHIP OF THE MODERN WORLD HE WOULD SUCCEED IN SOLVING ALL IT’S PROBLEMS IN A WAY THAT WOULD BRING SO MUCH NEEDED PEACE AND HAPPINESS”

যদি মহানবী (সা:)-এর মত কোনো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তি আধুনিক বিশ্বের নেতৃত্ব গ্রহণ করতে পারতেন তবে তিনি বর্তমান জগতের সমস্যাবলীর সকল সমাধান টেনে দিতেন। যিনি মানুষের বহু আশা-আকাঙ্ক্ষা আর সুখ-শান্তি এনে দিতে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম হতেন। এজন্যই বলা হয় “ISLAM IS THE COMPLITE CODE OF LIFE”

(৩) ইনসাইক্লোপিডিয়া রিটেনিকার সুবিখ্যাত লেখকের বক্তব্য-  “OF ALL THE RELIGIOUS PERSONALITIES OF THE WORLD HAZRAT MOHAMMAD WAS THE MOST SUCCESSFUL”  বিশ্বের সকল ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের মধ্যে হযরত মুহম্মদ ছিলেন সবচেয়ে সফল।    

(৪) মহিশুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কে, এস, রামকৃষ্ণ ১৯৭৯ সনের হজরত মুহাম্মদ (সা:) এর বিশ্বজনীন আদর্শের প্রতি অভীভূত হয়ে “MUHAMMAD-THE PROFET OF ISLAM” নামে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন। তার মতে,পৃথিবীর একজন সুযোগ্য নাগরিক হিসাবে পরিচয় দিতে হলে বিশ্বের মানবজাতিকে প্রভাবিত করা ধর্ম আর দর্শনসমূহ অধ্যায়ন অপরিহার্য, যে প্রতিবেশি অন্য ধর্মের মানুষের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্কের সৃষ্টি করে। তিনিও বিভিন্ন মহান ব্যক্তিত্বের উদ্ধৃতির মধ্য দিয়ে হজরত মুহাম্মদ (সা:) কে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে প্রতিপন্ন করেছে। 

(৫) বিশ্বনবী (সা: )-এর জীবনী লিখতে গিয়ে খ্রিস্টান লেখক ঐতিহাসিক উলিয়াম মুর বলেছেন,

“He was the mater mind not only of his own age but of all ages”                     অর্থাৎ মুহাম্মদ (সা,) যে যুগে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন তাকে শুধু সেই যুগেরই একজন মনীষী বলা হবে না, বরং তিনি ছিলেন সর্বকালের,সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মনীষী”।      

বাস্তবতার নিরিখে ইতিহাসের পাতায় চোখ বুলালে বিষয়টি শতভাগ ফুটে উঠে।

আরও পড়তে পারেন-

ইতিহাস সাক্ষী! পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে, যে কোন যুগে,যারাই আল্লাহর নবীকে সম্মান,শ্রদ্ধা ও পূর্নাঙ্গ অনুসরণ করেছসর্বশক্তিমান আল্লাহ তাদের স্বরণ ও আলোচনাকেও যুগে যুগে সমুন্নত রেখেছেন। যেমন, সম্মানিত সাহাবীগণ মুসলিম উম্মাহর জীবনে প্রাতঃস্বরণীয় হয়ে আছেন। এছাড়াও যুগে যুগে নবী প্রেমিক মনীষীগণ মানবজাতির ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন, তারা নিজেদের জীবনের চেয়েও রসুলুল্লাহ কে অধিক মোহাব্বত করতেন।নবীর সাথে মুমিনদের ঘনিষ্ঠতার কথা উল্লেখ করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন-

اَلنَّبِىُّ اَوْلٰى بِالْمُؤْمِنِيْنَ مِنْ اَنْفُسِهِمْ‌ وَاَزْوَاجُهٗۤ اُمَّهٰتُهُمْ‌

নবী মু’মিনদের নিকট তাহাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর এবং তাহার স্ত্রীগন তাহাদের মাতা। (সূরা আহযাব : আয়াত :৬)

রাসূলের অনুসরণ কে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় ভালোবাসার মাপকাঠি বলে উল্লেখ করেছেন, এরশাদ হয়েছে- 

قُلْ اِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّوْنَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُوْنِىْ  يُحْبِبْكُمُ اللّٰهُ وَيَغْفِرْ لَـكُمْ ذُنُوْبَكُمْؕ‌ وَاللّٰهُ غَفُوْرٌ رَّحِيْمٌ  

অর্থাৎ- বল, তোমরা যদি আল্লাহ্‌কে ভালবাস তবে আমাকে অনুসরণ কর, আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করিবেন। আল্লাহ্ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।(সূরা: আল্ ইমরান আয়াত:৩১)।

অপরদিকে রাসূল (সা.)-এর সাথে শত্রুতা পোষণ ও বিষোদগারকারীরা পড়ে আছে, ইতিহাসের অভিশপ্ত অতীতে। নবী করিম (সা.)-এর প্রতি অসম্মান প্রদর্শনের ফলে বহু শক্তি সভ্যতা ও রাজত্ব ধ্বংস হয়ে গেছে। এরমধ্যে পারস্য সম্রাটের কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

আধুনিক যুগেও আদর্শিকভাবে পরাজিত কিছু কুলাঙ্গার সভ্যতার সকল নিয়ম-নীতি অমান্য করে মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে, মুসলমানদের কলিজার টুকরা নবীকে ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ করে। কার্টূন আঁকে। ব্যাঙ্গচিত্র প্রকাশ করে। হযরতকে নিয়ে বাজে মন্তব্য ও বিষদগার করার দুঃসাহস করে। এরা কোনো মূলধারার সুস্থ মস্তিস্কের ব্যক্তি বা গোষ্ঠি নয় বরং এরা হল সমাজের কীট।

কারণ,অন্যান্য ধর্মের মনীষীরা বিজ্ঞানী ও দার্শনিকরা নবী করিম (সা.) সম্পর্কে এত সুখ্যাতি ও উন্নত মন্তব্য করেছেন, যা কোনো অংশেই মুসলিম মনীষীদের চেয়ে কম হবে না। বিশ্ব সাহিত্য মহানবী (সা.) এর প্রশংসাতেই ভরপুর, এখন ইসলামের উত্তরোত্তর জনপ্রিয়তা দেখে ঈর্ষাকাতর কোনো অসুস্থ মানসিকতার ব্যক্তি নবীজী (সা.)কে নিয়ে বাজে মন্তব্য ও ব্যঙ্গ করলে এর দায় ঐ ব্যক্তি, গোষ্ঠি কিংবা এর সমর্থক রাষ্ট্র ও সভ্যতাকেই নিতে হবে। [আগামী কিস্তিতে সমাপ্য]

– মুফতি রাশেদুল ইসলাম মেখলী, সিনিয়র শিক্ষক ও সহকারী নাযেমে দারুল ইক্বামাহ, আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।