অপরিচিত কারো সঙ্গে ফোনে কথা বলা কিংবা কোনো অনুষ্ঠান শোনার সময় কণ্ঠস্বর শুনেই অনেকটা স্বয়ংক্রিয়ভাবে ব্যক্তির সম্পর্কে একটি প্রতিচ্ছবি মনে মনে কল্পনা করে নেই । বয়স, লিঙ্গ তো বটেই, ব্যক্তির আকার-আকৃতি সম্পর্কেও একটু-আধটু আন্দাজ করে ফেলি আমরা। এমনকি যার সঙ্গে কথা বললাম সে দেখতে ছোটখাটো নাকি বিশালদেহী, খুব শক্তিশালী অথবা দুর্বল, সবকিছুরই একটা পূর্বানুমান করি। আবার সেই ব্যক্তিটি বন্ধুত্বপূর্ণ, নাকি দুঃখগ্রস্ত, নাকি নার্ভাস- এগুলো নিয়েও ছোটখাটো গবেষণা করা তো নিত্যনৈমিত্তিক বিষয়। কেননা, গলার স্বর শুনেই ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায়, এমন ধারণা কমবেশি সবারই আছে।
ভরাট গলার স্বর মানেই আকর্ষণীয়!
অংসখ্য গবেষণায় দেখা গেছে, কণ্ঠস্বর এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো সঙ্গী বা অংশীদার কিংবা জীবনসঙ্গী খুঁজে নিতেও এটি ভূমিকা রাখে। এমনকি রাজনীতিবিদের বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর ভোটের ক্ষেত্রে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতেও কণ্ঠস্বর অনেকটা প্রভাব ফেলে। এমনকি সবকিছু নিয়ে যারা একটু খুঁতখুতে স্বভাবের, তাদেরকে বুদ্ধিমত্তা বা ব্যক্তিত্ব, সততার পাশাপাশি ভরাট গলার স্বরের প্রতিও জোর দিতে দেখা যায়।
কণ্ঠস্বরে আসলে কতটুকু বোঝা যায় মানুষকে?
জার্মানির সিগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মনস্তাত্ত্বিক ক্রিস্টোফ শিলড বলেন, গলার স্বর শুনে মানুষ সম্পর্কে ধারণা করার বিষয়টি সঠিক নাও হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বক্সার মাইক টাইসনের নাম উল্লেখ করে বলেন, টাইসনের গলার স্বর ভারী এবং একই সাথে তাকে বেশ কর্তৃত্বপরায়ণ একজন হিসেবে দেখা হয়।
ইউনিভার্সিটি অব গটিনগেন-এর অধ্যাপক ও মনস্তাত্ত্বিক জুলিয়া স্টার্নের সঙ্গে কাজ করেছেন শিলড। মূলত, ব্যক্তিত্বের ওপর কণ্ঠস্বর কতটুকু প্রভাব রাখে তা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন তারা। গবেষণায় দেখা গেছে, কণ্ঠস্বর শুনে ব্যক্তিত্ব কেমন তা কিছুটা বোঝা গেলেও, এর পরিমাণ খুবই স্বল্প।
আরও পড়তে পারেন-
- ধর্ষণ প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা
- কিশোর অপরাধ রোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
- আদর্শ পরিবার গঠনে যে সব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরী
- ইসলামে সামাজিক সম্পর্ক এবং ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখার গুরুত্ব
- মানুষ মারা যাওয়ার পর, তাঁর আত্মার কি হয় ?
২০২১ সালে প্রকাশিত ওই গবেষণাটি ২,২১৭ জন নারী ও পুরুষের ওপর করা হয়। উচ্চ বা ভরাট কণ্ঠস্বরের মানুষ অনেকবেশি বহির্মুখী, কর্তৃত্বপরায়ণ এবং যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সক্ষম কিনা তা জানার চেষ্টা করা হয়েছে এ গবেষণায়। সেই উদ্দেশ্যে গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের সবার গলার স্বর রেকর্ড করা হয়। এমনকি তাদের যৌন আচরণের ওপরও তথ্য সংগ্রহ করেন গবেষকদ্বয়। অংশগ্রহণকারীরা নিজেদেরকে কতটা প্রভাবশালী, বহির্মুখী, মুক্তমনা এবং বিবেকবান বলে মনে করেন, সেটি উল্লেখ করতে বলা হয়েছিল।
গবেষণায় দেখা যায়, ভরাট কণ্ঠের অধিকারীরা অনেক বেশি বহির্মুখী, কর্তৃত্বপরায়ণ একইসঙ্গে কোনো সম্পর্কে না জড়িয়ে যৌনতায় আগ্রহী। কণ্ঠের গভীরতা সঙ্গী নির্ধারণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে।
এই অনুমানের ওপর ভিত্তি করে শিলড বলেছেন, যেভাবে ভারী কণ্ঠস্বরের অধিকারীদের আমরা ব্যক্তিত্বশীল বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন বলে ভাবি, একইভাবে এ ধরনের মানুষদের আমরা সঙ্গী হিসেবেও বেছে নেই।
কণ্ঠস্বরেই বোঝা যায় না সব
গবেষণাটিতে স্পষ্টতই বলা হয়েছে, সঙ্গী নির্ধারণ ছাড়া অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে গলার স্বরকে সরাসরি যুক্ত করা যায় না। গলার স্বর শুনে ব্যক্তি কতটা বিবেকবান কিংবা মুক্তমনা তাও বোঝা সম্ভব নয়।
গলার স্বর ততটা সুমধুর নয় এমন ব্যক্তিরা হয়তো কিছুটা স্বস্তি পাবেন। শুধুমাত্র ব্যক্তির সুন্দর কণ্ঠস্বর কাউকে আকর্ষণীয় কোনো ব্যক্তিত্বে পরিণত করে না। কোনো কণ্ঠ শুনতে যতই ভালো লাগুক না কেন, প্রত্যেক মানুষেরই আরও বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, গলার স্বর শুনে যা বোঝার কোনো উপায়ই নেই।
সূত্র: হিন্দুস্তান টাইমস
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম