Home সাক্ষাৎকার গণকমিশনের তালিকা প্রসঙ্গে ওলামায়ে কেরাম যে মতামত দিয়েছেন

গণকমিশনের তালিকা প্রসঙ্গে ওলামায়ে কেরাম যে মতামত দিয়েছেন

ছবি- উম্মাহ।

জঙ্গি অর্থায়ন ও দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের অভিযোগে ১১৬ ওয়ায়েজিনের একটি তালিকা দুদকে জমা দিয়েছে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমন্বয়ে গঠিত মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে ‘গণকমিশন’। গণকমিশনের এই রিপোর্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। গণকমিশনের এ তালিকার বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয় দেশের শীর্ষ কয়েকজন আলেমের কাছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন উম্মাহ২৪ ডটকমের নিজস্ব প্রতিনিধি মুহাম্মদ নূর হোসাইন

আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক।

জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার শায়খুল হাদীস আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেছেন, সরকার এদের রিপোর্ট দেখে হতভম্ব হয়ে যাবে বলে আমি মনে করি না। এদের আচরণ দেশদ্রোহী আচরণ। এরা স্থিতিশীল দেশকে জঙ্গি জঙ্গি স্লোগান দিয়ে সংঘাতের দিকে নিয়ে যেতে চায়। সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য সরকারের উচিত এদেরকে শক্ত হাতে দমন করা।

তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশ শান্তিপূর্ণ দেশ। পৃথিবীতে এত শান্ত আর কোন দেশ নাই। দেশের বাসিন্দা হয়ে বহি:বিশ্বের কাছে যারা এই দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতে চায় এরা বিদেশি চক্রের হয়ে কাজ করছে। রাষ্ট্রপরিচালনায় যারা আছেন, তাদেরকে এসব বিদেশি চরদের বিষয়ে আরো সতর্ক হওয়া দরকার। দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা করা দরকার।

ওয়ায়েজদের উদ্দেশ্যে আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন- যারা অভিযোগ করছে এই দেশ ও জাতির জন্য তাদের কি অবদান আর উলামায়ে কেরামের কি অবদান? মানবতাকে রক্ষা করতে উলামাদের কি অবদান? আদর্শ জাতি গঠনে উলামাদের কি অবদান? ওয়ায়েজদের এসব প্রশ্নের উত্তরে আলেমদের কী কী অবদান রয়েছে সে প্রসঙ্গে গঠনমূলক আলোচনা জাতির সামনে তুলে ধরা দরকার।

– আল্লামা হাফেজ নাজমুল হাসান। ছবি- উম্মাহ।

উত্তরা জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়ার মুহতামিম মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী ধর্মীয় আলোচকদের যে তালিকা গণকমিশন দুদকে জমা দিয়েছে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ইসলাম বিদ্বেষী তৎপরতা বাড়াতে ও গনজাগরণ মঞ্চের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নেমেছে গণকমিশন। এদের আস্ফালনের ব্যাপারে এদেশের জণগণ, প্রশাসন থেকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত সকলেই ওয়াকিফহাল।

তিনি বলেন, এদেশের জনগণ, কোন সংস্থা, সংগঠন কিংবা প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে রিপোর্ট তৈরী করার অধিকার সরকার ছাড়া আর কারো আছে বলে মনে করি না। গণকমিশনের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মনগড়া। এরা এই অভিযোগ করে বিদেশের কাছে দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতে চায়। এদের ব্যাপারে দেশের জনগণ ও প্রশাসনকে আরো সতর্ক ও সোচ্চার হওয়া জরুরি।

আরও পড়তে পারেন-

মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী।

দেশের বৃহৎ ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারীর মুহাদ্দিস মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী এ প্রসঙ্গে বলেছেন, গণকমিশনের মূল লক্ষ্য সরকারকে বেকায়দায় ফেলা। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সমন্বয়ে গঠিত মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে ‘গণকমিশন’-১১৬ জন ওয়ায়েযীনের (ধর্মীয় আলোচক) নামের তালিকা করে দুদকে জমা দিয়েছে। তিনি এই কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

কমিশনের এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও মিথ্যা তথ্যে ভরপুর উল্লেখ করে মাওলানা নিজামপুরী আরো বলেন, আমাদের কথা হলো, যারা এ ধরণের স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে তদন্ত করবেন সমাজে তাদের ব্যাপারে এক’শ পার্সেন্ট গ্রহণযোগ্যতা থাকতে হবে। গণকমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামছুদ্দীন চৌধুরী মানিক ও সদস্য সচিব ব্যরিস্টার তুরিন আফরোজসহ পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এ তালিকা দুদকে জমা দিয়েছে। কিন্তু বিচারপতি শামা চৌধুরী ও ব্যরিস্টার তুরিন আফরোজ এরা কারা? এদের পরিচয় কী?

তিনি বলেন, আমার জানামতে শামা চৌধুরী বৃটেনের পাসপোর্টধারী—তিনি বিচারপতি হওয়ার আবেদনপত্রে নিজের বৃটেনের নাগরিকত্বের বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। যা বাংলাদেশের আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ব্যরিস্টার তুরিন আফরোজের চরিত্র ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। সুতরাং, তাদের এ অভিযোগ দেশের জনগণ ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করবে, ইনশাআল্লাহ!

– ফাইল ছবি।

জামিয়া হোসাইনিয়া ইসলামিয়া আরজাবাদের মুহতামিম মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া বলেছেন, প্রথমত কথা হলো- গণকমিশনকে এই অধিকার কে দিলো? এদেশের মানুষ কে কি করবে, না করবে এটা দেখবে রাষ্ট্র। গণকমিশন কোন অধিকারের ভিত্তিতে এটা করলো?

দ্বিতীয়ত, এদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় উলামায়ে কেরামের বিরুদ্ধে তারা যে সমস্ত অজুহাত দাঁড় করিয়েছে, এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, আপত্তিকর এবং মানহানিকর। যারা এই কমিশনের সদস্য তারাও তো বিতর্কিত চরিত্রের অধিকারী। যারা নিজেরাই বিতর্কিত তারা কীভাবে সর্বজনশ্রদ্ধেয় আলেমদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট তৈরি করে?

গণকমিশনের ‘তুরিন আফরোজ’ তাকে তো দুর্নীতির কারণে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এজাতীয় যারা বিতর্কিত, ধর্মবিরোধী হিসেবে পরিচিত, যাদের বক্তব্যগুলো ধর্মের বিরুদ্ধে যায়, তারা কীভাবে রিপোর্ট তৈরি করে? উল্টো তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়া দরকার। এরা কোন বহিঃশক্তির ইঙ্গিতে এ দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্রে জড়িত কিনা সরকারকে এ বিষয়ে খতিয়ে দেখা দরকার।

মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী।

ইসলামবাগ মাদ্রাসার মুহতামিম শাইখুল হাদিস মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেছেন, মাদ্রাসা শিক্ষা এবং আলেম সমাজের শিকড় এত গভীরে যে, এটাকে উপড়ে ফেলা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহ তালার প্রতি আমাদের বিশ্বাস, তিনি এটাকে হেফাজত করবেন। বাকী এরা যে চেষ্টা করছে, এটাকে আমরা অপচেষ্টা, অপতৎপরতা, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ বলবো।

মাওলানা আফেন্দি মনে করেন, আবহমানকাল থেকে চলে আসা ধর্মীয় কালচার- মাহফিলের মাধ্যমে মানুষের সৎ পথে আসার যে ধারাবাহিকতা, এই জায়গাতে আঘাত করা তাদের টার্গেট। সেইসাথে মাদ্রাসা শিক্ষার অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করা; এটা তাদের মূল পরিকল্পনা। এটা একটা সূদুরপ্রসারী পরিকল্পনা। চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ও উস্কে দেয়ার মাধ্যমে আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষাকে নষ্ট করার এটা মাস্টারপ্লানের অংশ। তারপরও আমাদেরকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

– মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী। ছবি- উম্মাহ।

জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার মুহাদ্দিস মুফতি জাকির হোসাইন কাসেমী বলেন, গণকমিশনের এই রিপোর্ট দেশের ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র। ওয়াজ-মাহফিলে দেশের হক্কানী আলেম সমাজ মানুষকে শান্তি-শৃঙ্খলার দিকে আহবান করে। অন্যায়-অনাচার ও জুলুম-নির্যাতন থেকে মানুষকে বিরত থাকতে আহবান করে। তবে কোন কোন ওয়ায়েজ যারা ওয়াজের নামে কন্ট্রাক্ট করে, গঠনমূলক আলোচনা বাদ দিয়ে কিচ্ছা কাহিনী বলে, এদের ব্যাপারে উলামায়ে কেরামকে সোচ্চার হতে হবে। সেইসাথে দেশের শীর্ষ উলামায়ে কেরামের তত্বাবধানে যারা মাঠে-ময়দানে ওয়াজ-মাহফিল করেন, তাদেরকে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণেরও আহবান জানাচ্ছি।

উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।