।। সাআদ তাশফিন ।।
ঈদ এলে শেকড়ের টানে বেশির ভাগ মানুষই ছোটে তাদের জন্মস্থানে। সারা বছরের ব্যস্ততাকে ছাপিয়ে অন্তত ঈদের সময়টি সবাই প্রিয়জনদের সঙ্গে কাটাতে পছন্দ করে। তাই ঈদের মৌসুমে বেশির ভাগ মানুষকেই ভ্রমণ করতে হয়। ভ্রমণে রয়েছে প্রিয় নবী (সা.)-এর কিছু সুন্নত, যা অনুসরণ করলে আমাদের ভ্রমণও ইবাদতে পরিণত হতে পারে ইনশাআল্লাহ।
অভিজ্ঞ কারো সঙ্গে পরামর্শ করা : ভ্রমণে বের হওয়ার আগে কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তির (যিনি ওই রাস্তাঘাট কিংবা গন্তব্যের অবস্থা সম্পর্কে অবগত) সঙ্গে পরামর্শ করা। এতে কোন রাস্তায় গেলে ভ্রমণ সহজ হবে তা জানা যাবে এবং সুন্নতও আদায় হবে। এখনকার যুগে গুগল ট্রাফিক দিয়েও রাস্তার অবস্থা সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়, প্রয়োজনে গুগল ট্রাফিকে রাস্তার অবস্থা জেনে কোনো অভিজ্ঞ লোকের সঙ্গে পরামর্শ করা যেতে পারে।
দুই রাকাত নামাজ পড়া : দুই রাকাত নামাজ পড়ে ইস্তিখারা করা (কোনো কাজ শুরু করার আগে এর ভালো ফলের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করা)। সাধারণত কোনো কাজ নিয়ে দোদুল্যমানতায় ভুগলে ইস্তিখারা করতে হয়। পরে যেদিকে মন ধাবিত হয়, সে সিদ্ধান্ত নেওয়াই উত্তম।
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
অভিভাবকের অনুমতি নেওয়া : বাবা কিংবা কোনো গুরুজনের অনুমতিক্রমে আল্লাহর কাছে তাওবা-ইস্তিগফার ও সাহায্য প্রার্থনার মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু করা।
সফরের শুরুতে দোয়া পড়া : ভ্রমণে বের হওয়ার সময় দোয়া পড়া, ‘সুবহানাল্লাজি সাখ্খারা লানা হাজা ওয়ামা কুন্না লাহু মুকরিনিন, আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকা ফি সাফরিনা হাজাল বিররা ওয়াত তাকওয়া, ওয়া মিনাল আমালি মা তারদা, আল্লাহুম্মা হাউইন আলাইনা সাফারনা হাজা, ওয়াতভি আন্না বু’দাহু, আল্লাহুম্মা আংতাস সাহিবু ফিস সাফরি ওয়াল খলিফাতু ফিল আহলি, আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন ওয়া’সা-ইস সাফরি, ওয়া কা’বাতিল মানজারি, ওয়া ছু-ইল মুনকলাবি ফিল মালি ওয়াল আহলি। ’ (বি. দ্র. আরবি ভাষায় দোয়া কোনো আলেম থেকে সরাসরি ঠিক করে নিতে হয়, বাংলায় হুবহু উচ্চারণ লেখা সম্ভব নয়)
একাকী সফর এড়িয়ে চলা : পারতপক্ষে একা একা ভ্রমণ না করা। কমপক্ষে দুজন মিলে ভ্রমণ করা। এতে মানুষের মনোবল বেশি থাকে, কোনো সমস্যায় পড়লে পাশে থাকার মতো অন্তত একজন পরিচিত লোক থাকে।
যানবাহনে আরোহণের সময় বিসমিল্লাহ পড়া : গাড়ি, লঞ্চ, বিমান বা যেকোনো যানবাহনে আরোহণের সময় ‘বিসমিল্লাহ’ পড়ে আরোহণ করা।
যানবাহনে বসে আল্লাহু আকবার পড়া : যানবাহনে ঠিকমতো বসার পর তিনবার ‘আল্লাহ আকবার’ পড়ে এই দোয়া পড়া : সুবহানাল্লাজি সাখ্খারা লানা হাজা ওয়ামা কুন্না লাহু মুকরিনিন, ওয়া ইন্না ইলা রব্বিনা লামুনকালিবুন।
নৌকা বা জাহাজযোগে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই দোয়া পড়া, ‘বিসমিল্লাহি মাজরিহা ওয়া মুরসাহা, ইন্না রাব্বি লা গাফুরুর রাহিম। ’
ভ্রমণ অবস্থায় যানবাহন যখন ওপরের দিকে ওঠে তখন ‘আল্লাহু আকবার’ আর যখন নিচের দিকে নামে তখন ‘সুবহানাল্লাহ’ পড়া। যেমন, বাসগুলো যখন ফ্লাইওভারে বা ব্রিজে ওঠে তখন ‘আল্লাহু আকবার’ আর যখন ফ্লাইওভার বা ব্রিজ থেকে নিচে নামে তখন ‘সুবহানাল্লাহ’ পড়া যেতে পারে।
গন্তব্যে পৌঁছার পর দোয়া : গন্তব্যে পৌঁছার পর তিনবার ‘আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফিহ’ পাঠ করা। ভ্রমণের প্রয়োজন পূরণ হলে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসা উচিত। অযথা দেরি করা ঠিক নয়। ভ্রমণকালীন সঙ্গে কুকুর না রাখা। ভ্রমণ থেকে ফিরে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করা এবং এই দোয়া পাঠ করা, ‘আ-ইবুনা তা-ইবুনা আ-বিদুনা লিরব্বিনা হামিদুন। ’
মুসাফিরের বিধান : প্রসংগত, ৪৮ মাইল বা ৭৮ কিলোমিটার বা এর অধিক দূরের সফরের নিয়তে বের হয়ে মানুষ নিজের এলাকা ত্যাগ করলেই মুসাফির হয়ে যায়। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/১০৫)
তবে শহরের ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের সীমানা নিজ এলাকা হিসেবে নির্ধারিত হবে। ফলে সিটি করপোরেশনের সীমানা পার হলে মুসাফির হয়ে যাবে। (রদ্দুল মুহতার : ২/১২৮)
মুসাফিরের নামাজ : মুসাফিরের জন্য শরিয়তে কিছু শিথিলতা দেওয়া হয়েছে। তাদের চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজগুলো দুই রাকাত পড়তে হবে। কেউ যদি ইচ্ছাকৃত বা ভুলবশত চার রাকাতের নামাজগুলো চার রাকাতই পড়ে তাহলে সে গুনাহগার হবে এবং তাকে নামাজ আবার পড়তে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ১/৯১)
মুসাফির ব্যক্তির জন্য তার যানবাহন চলন্ত অবস্থায় বা তাড়াহুড়া থাকলে ফজরের সুন্নত ছাড়া অন্যান্য সুন্নতে মুয়াক্কাদা না পড়ার সুযোগ আছে। তবে স্বাভাবিক ও স্থির অবস্থায় সুন্নতে মুয়াক্কাদা পড়তে হবে। (ইলাউস সুনান : ৭/১৯১, রদ্দুল মুহতার : ১/৭৪২)
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম