।। মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ ।।
ফজর দীর্ঘ কিরাতের নামাজ। ফজরের সঙ্গে কোরআন তিলাওয়াতের নিবিড় সম্পর্ক আছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সূর্য হেলার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত নামাজ কায়েম করো এবং ফজরের সময় কোরআন পাঠে যত্নবান থাকো। স্মরণ রেখো, ফজরের তিলাওয়াতে ঘটে থাকে (ফেরেশতাদের) উপস্থিতি।
’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৭৮)
ইসলামী আইনজ্ঞরা লিখেছেন, ফজরের নামাজে ‘তিওয়ালে মুফাসসাল’ তথা সুরা হুজুরাত থেকে সুরা ইনশিকাক পর্যন্ত সুরাগুলো পাঠ করা সুন্নত। বিষয়টি হাদিস থেকে গৃহীত। কুতবা ইবনে মালিক (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ফজরের প্রথম রাকাতে সুরা কফ তিলাওয়াত করতে শুনেছি। (মুসলিম, হাদিস : ৪৫৭)
জাবের ইবনে সামুরাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ফজরের নামাজে সুরা ওয়াকিআহ এবং এ জাতীয় সুরা পাঠ করতেন। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২০৯৯৫)
উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে আমার অসুস্থতার বিষয়ে জানালাম। তিনি বলেন, তুমি (সওয়ারিতে) আরোহণ করে মানুষদের পেছনে গিয়ে তাওয়াফ করো। আমি তাওয়াফ করছিলাম আর রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ পড়ছিলেন। নামাজে তিনি তিলাওয়াত করছিলেন সুরা তুর। (বুখারি, হাদিস : ১৬৩৩)
আরও পড়তে পারেন-
- ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে ঠাট্টা-তাচ্ছিল্য জঘন্য গুনাহ
- উগ্র হিন্দুত্ববাদ এবং মুসলিমবিদ্বেষ ভারত ও বাংলাদেশের জন্য হুমকি
- ‘ইবাদুর রাহমান’ বা আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বিশেষ ১২টি গুণ
- মৃত্যুর স্মরণ জীবনের গতিপথ বদলে দেয়
- যে কারণে হিন্দুত্ববাদের নতুন নিশানা ‘দারুল উলূম দেওবন্দ’
আমর ইবেন হুরাইস (রা.) বলেন, আমি নবী করিম (সা.)-কে ফজরের নামাজে সুরা তাকবির তিলাওয়াত করতে শুনেছি। (নাসাঈ, হাদিস : ৯৫১)
আবু বারজা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ফজরের নামাজে ৬০ আয়াত থেকে ১০০ আয়াত পর্যন্ত তিলাওয়াত করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৫৯৯)
তবে নবী করিম (সা.) ফজরের নামাজে ‘মুফাসসাল’-এর বাইরে থেকেও দীর্ঘ কিরাত পড়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে সাইব (রা.) বলেন, নবী (সা.) মক্কায় আমাদের নিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করলেন। নামাজে তিনি সুরা মুমিনুন শুরু করলেন। যখন মুসা ও হারুন (আ.) অথবা ঈসা (আ.)-এর আলোচনায় পৌঁছলেন তখন তার কাশি এলো, ফলে তিনি রুকুতে চলে গেলেন। (মুসলিম, হাদিস ৪৫৫)
সুরা মুমিনুন-এ মুসা (আ.) ও হারুন (আ.)-এর আলোচনা শুরু হয়েছে ৪৫ নম্বর আয়াত থেকে এবং ঈসা (আ.)-এর আলোচনা শুরু হয়েছে ৫০ নম্বর আয়াত থেকে।
স্বাভাবিক অবস্থায় ফজরের নামাজ দীর্ঘ কিরাত পাঠ করা সুন্নত হলেও বিশেষ কোনো কারণে সুরা নাস, ফালাক, ইখলাস ও কাফিরুনের মতো ছোট ছোট সুরাও পাঠ করা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) সফর অবস্থায় সুরা নাস ও সুরা ফালাক দিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করেছেন। উকবা বিন আমের (রা.) বলেন, আমি সফরে রাসুল (সা.)-এর উট চালাচ্ছিলাম। একসময় তিনি আমাকে বলেন, হে উকবা, লোকেরা যেসব সুরা তিলাওয়াত করে আমি কি তোমাকে এর মধ্য থেকে সর্বোত্তম দুটি সুরা শিক্ষা দেব না? এরপর তিনি আমাকে সুরা ফালাক ও সুরা নাস শেখালেন। কিন্তু এতে আমি তেমন খুশি হয়েছি বলে তিনি মনে করলেন না। পরবর্তী সময়ে তিনি যখন ফজরের নামাজের জন্য অবতরণ করলেন, তখন এই দুটি সুরা দ্বারা নামাজ পড়ালেন। যখন তিনি নামাজ শেষ করলেন, আমাকে লক্ষ্য করে বলেন, কেমন দেখলে, হে উকবা! (আবু দাউদ, হাদিস : ১৪৬২)
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম