Home ইসলাম মৃত্যুর স্মরণ জীবনের গতিপথ বদলে দেয়

মৃত্যুর স্মরণ জীবনের গতিপথ বদলে দেয়

।। মুফতি মুহাম্মাদ ইসমাঈল ।।

প্রাণীমাত্রই মরবে। জন্ম ও মৃত্যু অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। দুটির কোনোটির ক্ষমতা মানুষের হাতে নেই। আল্লাহর হুকুমেই জন্ম হয়, আল্লাহর হুকুমেই মৃত্যু হয়।

কখন হবে, কোথায় হবে, কিভাবে হবে, তা কারো জানা নেই। জীবনের সুইচ তাঁরই হাতে, যিনি জীবন দান করেছেন। অতঃপর জীবনদাতার সামনে হাজিরা দিয়ে জীবনের পূর্ণ হিসাব পেশ করতে হবে। হিসাব শেষে চিরস্থায়ী জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারিত হবে। আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে এবং কিয়ামতের দিন তোমরা পূর্ণ বদলাপ্রাপ্ত হবে। অতঃপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে ও জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, সে সফলকাম হবে। আর পার্থিব জীবন প্রতারণার বস্তু ছাড়া কিছুই নয়। ’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৮৫)

দুনিয়ার সুদৃঢ় ও সুউচ্চ প্রাসাদ ছেড়ে চলে যেতে হয় মাটির গর্তে। যেখানে তার নিচে, ওপরে, ডানে ও বাঁয়ে থাকে শুধু মাটি, যা থেকে সে সারা জীবন গা বাঁচিয়ে চলেছে। একটু ২২২২ সালের কথা ভাবুন! তখন ২০২২ সালের জীবিত মানুষগুলোর কেউ আর বেঁচে থাকব না। আমাদের দেহ মাটি খেয়ে নিঃশেষ করে ফেলবে। আমাদের অস্তিত্ব এ দুনিয়ায় থাকবে না; থাকবে রুহের জগতে। আমাদের কষ্টে তৈরি করা বাড়ি-ঘরগুলো বিলীন হয়ে নতুনভাবে তৈরি হবে। আমাদের স্মরণ করার মতোও কেউ থাকবে না। যেমন আমাদের অনেক পূর্বসূরির কথা আমরা আর স্মরণ করি না।

আরও পড়তে পারেন-

সময় শেষ হলে আর অবকাশ দেওয়া হবে না

নির্দিষ্ট সময় শেষ হলে আর কাউকেই অবকাশ দেওয়া হবে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার প্রতিপালক, যদি আপনি আমাকে আরো কিছু দিনের জন্য সময় দিতেন, তাহলে আমি সদকা করে আসতাম ও সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম। অথচ নির্ধারিত সময়কাল যখন এসে যাবে, তখন আল্লাহ কাউকে আর অবকাশ দেবেন না। ’ (সুরা মুনাফিকুন, আয়াত : ১০-১১)

বনি আদমের চাহিদা শেষ হবে না

রাসুলল্লাহ (সা.) বলেছেন, যদি বনি আদমের স্বর্ণভরা একটা উপত্যকা থাকে, তথাপি সে তার জন্য দুটি উপত্যকা হওয়ার কামনা করবে। তার মুখ মাটি ছাড়া অন্য কিছুই ভরতে পারবে না। তবে যে ব্যক্তি তাওবা করবে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৪৩৯)

সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান কে

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। এ অবস্থায় এক আনসারী নবীজি (সা.)-এর কাছে এসে তাঁকে সালাম দিল। অতঃপর বলল, হে আল্লাহর রাসুল, মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উত্তম কে? তিনি বলেন, স্বভাব-চরিত্রে তাদের মধ্যে যে ব্যক্তি বেশি উত্তম। সে পুনরায় জিজ্ঞেস করল, মুমিনদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বুদ্ধিমান কে? তিনি বলেন, তাদের মধ্যে যারা মৃত্যুকে বেশি স্মরণ করে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য উত্তমরূপে প্রস্তুতি গ্রহণ করে, তারাই সর্বাধিক বুদ্ধিমান। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪২৫৯)

মৃত্যু দুনিয়ার স্বাদ বিনষ্টকারী

দুনিয়ার প্রতি বেশি আকর্ষণের ফলে মানুষ মৃত্যুকে ভুলে যায়। ইরশাদ হয়েছে, ‘বেশি থেকে বেশি (দুনিয়া) কামানোর লোভ তোমাদের গাফিল করে রাখে। ’ (সুরা তাকাসুর, আয়াত : ১)

এই ফাঁকে শয়তান তাকে দিয়ে অন্যায় করিয়ে নেয়। এ কারণেই রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা বেশি করে স্বাদ বিনষ্টকারী বস্তুটির কথা তথা মৃত্যুকে স্মরণ করো। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৭)

জানাজা মৃত্যুকে স্মরণ করায়

রাসুলুল্লাহ (সা.) মুমিনদের জানাজায় অংশগ্রহণ করতে বলেছেন এবং তাতে এক কিরাত তথা ওহুদ পাহাড়ের সমপরিমাণ নেকি ও দাফন শেষ করে ফিরে এলে তাতে দুই কিরাত সমপরিমাণ নেকির কথা বলেছেন। (মুসলিম, হাদিস : ৯৪৫)

এই নির্দেশনা এই জন্য, যাতে অন্যের জানাজা দেখে নিজের জানাজার কথা স্মরণ হয়। অন্যের কবরে শোয়ানো দেখে নিজের কবরের কথা মনে হয়। অন্যের অসহায় চেহারা দেখে নিজের মৃত্যুকালীন অসহায় অবস্থার কথা স্মরণ হয়। যাতে মানুষের অহংকার চূর্ণ-বিচূর্ণ হয় ও সে বিনয়ী হয়। অতঃপর পরপারে যাত্রার প্রস্তুতি গ্রহণে তৎপর হয়।

মৃত্যু কামনার হুকুম

দুনিয়াতে সুখ ও দুঃখ উভয়ই থাকবে; কিন্তু তা চিরস্থায়ী নয়। দুনিয়ার সুখে শোকর করতে হয় আর দুঃখে সবর করতে হয়। বেশি দুঃখ-কষ্টের কারণে মৃত্যু কামনা বৈধ নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমাদের কেউ দুঃখ-কষ্টে পতিত হওয়ার কারণে যেন মৃত্যু কামনা না করে। যদি কিছু করতেই চায়, তাহলে সে যেন বলে : হে আল্লাহ, আমাকে জীবিত রাখো, যত দিন আমার জন্য বেঁচে থাকা কল্যাণকর হয়। এবং আমাকে মৃত্যু দাও, যখন আমার জন্য মরে যাওয়া কল্যাণকর হয়। ’ (বুখারি, হাদিস : ৫৬৭১)

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আম্বরশাহ আল ইসলামিয়া, কারওয়ান বাজার, ঢাকা

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।