।। আবরার আবদুল্লাহ ।।
উজবেকিস্তানের একটি মসজিদে সংরক্ষিত পবিত্র কোরআনের একটি অনুলিপির ব্যাপারে দাবি করা হয়, এটি মহানবী (সা.)-এর সাহাবি ও তৃতীয় খলিফা উসমান ইবনে আফফান (রা.)-এর সময়ের এবং তাতে তাঁর রক্ত লেগে আছে। প্রশ্ন হলো সুদূর মদিনা থেকে উজবেকিস্তানে কোরআনের অনুলিপিটি কিভাবে এলো?
কোরআন যেভাবে সংকলিত হয় : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে মুখস্থকরণ ও লেখা উভয়ভাবে সম্পূর্ণ কোরআন সংরক্ষিত হয়। কিন্তু তা গ্রন্থাকারে একত্র ছিল না। প্রথম খলিফা আবু বকর (রা.)-এর যুগে সাহাবিদের কাছে সংরক্ষিত কোরআনের লিখিত অংশগুলো একত্র করা।
তবে তাতে আরবের প্রচলিত সাতটি পাঠ-রীতিই অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তী সময়ে বিপুল পরিমাণ অনারব ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় সাত কেরাত বা পাঠ-রীতি নানা সমস্যার সৃষ্টি করলে উসমান (রা.) সাহাবায়ে কেরাম (রা.)-এর ঐকমত্যের ভিত্তিতে শুধু এক রীতিতে তা সংরক্ষণ করেন। অন্যান্য রীতিতে লিপিবদ্ধ কোরআন পুড়িয়ে ফেলেন।
সংরক্ষিত অনুলিপিটি কোন সময়ের : ধারণা করা হয়, উসমান (রা.) চূড়ান্তভাবে গৃহীত কোরআনের যে অনুলিপি ইসলামী খেলাফতের অধীন বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়েছিলেন তার একটি নিজের কাছে সংরক্ষণ করেছিলেন। আর সেই কপিটি বিভিন্ন মাধ্যম হয়ে বর্তমানে উজবেকিস্তানে স্থান পেয়েছে। প্রত্নতাত্ত্বিক পরীক্ষা বলছে এটি পৃথিবীর প্রাচীনতম কোরআনের অনুলিপিগুলোর একটি।
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
যেভাবে উজবেকিস্তানে এলো : উসমান (রা.)-এর শাহাদাতের পর তাঁর কাছে সংরক্ষিত অনুলিপিটি ইরাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত তা ইরাকেই ছিল। তৈমুর লংয়ের হাতে বাগদাদের পতন হলে ঐতিহাসিক নিদর্শন তার হস্তগত হয় এবং তিনি তা সমরকন্দে নিয়ে আসেন। ১৮৬০ সালে সমরকন্দ শহর রাশিয়া দখল করলে কোরআনের অনুলিপিটি তাদের দখলে যায়।
রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ সেন্ট পিটার্সবার্গের রাজকীয় পাঠাগারের হাতে তা হস্তান্তর করে। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের পর কমিউনিস্ট নেতা লেলিন কোরআনের এই অনুলিপির মাধ্যমে মধ্য এশিয়ার মুসলিমদের মন জয় করার চেষ্টা করলেন। আধুনিক বাশকোরতুস্তানের রাজধানী উফা-তে প্রেরণ করেন। কিন্তু তাসখন্দের মুসলিমদের আবেদনের ফলে ১৯২৪ সালে কোরআনের অনুলিপিটি তাদের হাতে হস্তান্তর করা হয়। তখন থেকে কোরআনের অনুলিপিটি তাদের কাছেই আছে।
কোরআনের আরো কিছু প্রাচীন অনুলিপি : সামরকন্দে সংরক্ষিত কোরআনের প্রাচীন অনুলিপিটির সমসাময়িক আরো কিছু অনুলিপি পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সংরক্ষিত আছে। যেমন—ইউনিভার্সিটি অব বার্মিংহামের বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন তাদের কাছে ‘হিজাজি’ লিপিতে লেখা এমন একটি অনুলিপি আছে, যা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনকালে প্রস্তুত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মিসরের জাতীয় পাঠাগারে সংরক্ষিত একটি অনুলিপির ব্যাপারে দাবি করা হয় এটি উসমান (রা.) কর্তৃক প্রেরিত। তুরস্কের টোপকাপি জাদুঘরে সংরক্ষিত একটি অনুলিপির ব্যাপারে ধারণা করা হয় তা প্রথম হিজরি শতকে প্রস্তুতকৃত।
উল্লেখ্য, কোরআনের এসব অনুলিপির ব্যাপারে যে দাবিগুলো করা হয় তা অকাট্যভাবে প্রমাণিত নয়। প্রত্নতাত্ত্বিক পরীক্ষা ও প্রচলিত মিথের ভিত্তিতেই তা দাবি করা হয়ে থাকে।
সূত্র : ইলম ফিড, মুসলিম মেমো ও শাফাকনা ডটকম
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম