।। মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা ।।
ঈমান ছাড়া আমল মূল্যহীন। মহান আল্লাহর প্রিয় হতে হলে, আখিরাতে মুক্তি পেতে চাইলে অবশ্যই প্রকৃত মুমিন হতে হবে। নিম্নে পবিত্র কোরআনের আলোকে মুমিনের গুণগুলো তুলে ধরা হলো—
আল্লাহকে ভয় করে : ‘আর যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক তাহলে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের আনুগত্য করো। মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে ওঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ১-৩)
আল্লাহর বাণী শুনে ঈমানে দৃঢ়তা বাড়ে : ‘আর যখন তাদের ওপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের ওপরই ভরসা করে। ’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ১-৩)
নামাজ কায়েম করে : ‘যারা নামাজ কায়েম করে। ’ (সুরা : আনফাল, আয়াত : ১-৩)
দান করে : ‘এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে। ’(সুরা : আনফাল, আয়াত : ১-৩)
মুমিনরা পরস্পর আন্তরিক হয় : ‘আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭১)
সৎকাজে উদ্বুদ্ধ করে : ‘তারা ভালো কাজের আদেশ দেয়।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭১)
অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করা : ‘আর অন্যায় কাজে বাধা প্রদান করে।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭১)
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
জাকাত দেয় : ‘আর তারা সালাত কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭১)
আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অনুগত হয় : ‘এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে। এদেরকে আল্লাহ শিগগিরই দয়া করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৭১)
গুনাহ হয়ে গেলেই তাওবা করে ফেলে : ‘তারা তাওবাকারী…।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১২)
ইবাদতে আগ্রহী হয় : ‘ইবাদাতকারী…। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১২)
আল্লাহর প্রশংসাকারী হয় : ‘আল্লাহর প্রশংসাকারী…। ’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১২)
রোজা রাখে : ‘সিয়াম পালনকারী রুকুকারী, সিজদাকারী, সৎকাজের আদেশদাতা, অসৎকাজের নিষেধকারী এবং আল্লাহর নির্ধারিত সীমারেখা হিফাজতকারী। আর মুমিনদেরকে তুমি সুসংবাদ দাও। ’(সুরা : তাওবা, আয়াত : ১১২)
অনর্থক কথাকর্ম এড়িয়ে চলে : ‘আর যারা অনর্থক কথাকর্ম এড়িয়ে চলে। আর যারা জাকাতের ক্ষেত্রে সক্রিয়। ’(সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৩-৪)
লজ্জাস্থানের হিফাজত করে : ‘আর যারা তাদের নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাজতকারী, নিজেদের স্ত্রী ও মালিকানাভুক্ত দাসী ছাড়া। কেননা এ ক্ষেত্রে তারা নিন্দা থেকে মুক্ত। এদের অতিরিক্ত যারা কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৫-৭)
আমানত ও অঙ্গীকারে যত্নবান : ‘আর যারা নিজদের আমানতসমূহ ও অঙ্গীকারে যত্নবান। ’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৮)
গায়েবের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করা : ‘যারা অদৃশ্যের প্রতি ঈমান আনে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি যে জীবনোপকরণ তাদের দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। আর যারা ঈমান আনে তাতে, যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে এবং যা তোমার পূর্বে অবতীর্ণ করা হয়েছে। আর পরকালের প্রতি তারা বিশ্বাস রাখে। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩-৪)
কোরআনে গায়েব শব্দ দ্বারা সেসব বিষয়কেই বোঝানো হয়েছে, যেগুলোর সংবাদ রাসুল (সা.) দিয়েছেন এবং মানুষ যে সমস্ত বিষয়ে স্বীয় বুদ্ধিবলে ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জ্ঞান লাভে সম্পূর্ণ অক্ষম। যার মধ্যে আল্লাহর অস্তিত্ব ও সত্তা, সিফাত বা গুণাবলি এবং তাকদির সম্পর্কিত বিষয়সমূহ, জান্নাত-জাহান্নামের অবস্থা, কিয়ামত এবং কিয়ামতে অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘটনাসমূহ, ফেরেশতাকুল, সমস্ত আসমানি কিতাব, পূর্ববর্তী সব নবী ও রাসুলগণের বিস্তারিত বিষয় অন্তর্ভুক্ত।
পার্থিব লোভ-লালসা মুক্ত থাকে : ‘ওই সব লোকের দ্বারা ব্যবসায় ও ক্রয়-বিক্রয় যাদেরকে তাঁর স্মরণ হতে বিচ্যুত করতে পারে না, আর নামাজ প্রতিষ্ঠা ও জাকাত প্রদান থেকেও না। তাদের ভয় করে (কেবল) সেদিনের, যেদিন অন্তর ও দৃষ্টিসমূহ উল্টে যাবে।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩৭)
আল্লাহর উপদেশ গ্রহণ করে : ‘আমার নিদর্শনাবলিতে শুধু তারাই বিশ্বাস করে যাদেরকে এর দ্বারা উপদেশ দেওয়া হলে সিজদায় লুটিয়ে পড়ে আর তাদের প্রতিপালকের প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে। ’ (সুরা : আস সাজদাহ, আয়াত : ১৫)
অহংকার করে না : ‘আর তারা অহংকার করে না। ’ (সুরা : আস সাজদাহ, আয়াত : ১৫)
পাপ থেকে দূরে থাকে : ‘আর যারা গুরুতর পাপ ও অশ্লীল কার্যকলাপ থেকে বেঁচে থাকে। ’ (সুরা : আশ শুরা, আয়াত : ৩৭)
ক্ষমাশীল হয় : ‘এবং যখন রাগান্বিত হয় তখন তারা ক্ষমা করে দেয়।’ (সুরা : আশ শুরা, আয়াত : ৩৭)
আত্মপ্রশংসা থেকে দূরে থাকে : ‘যখন তিনি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যখন তোমরা তোমাদের মাতৃগর্ভে ভ্রূণরূপে ছিলে। কাজেই তোমরা আত্মপ্রশংসা কোরো না। কে তাকওয়া অবলম্বন করেছে, সে সম্পর্কে তিনিই সম্যক অবগত। ’ (সুরা : নাজম, আয়াত : ৩২)
বান্দার হকের ব্যাপারে সতর্ক থাকে : ‘যারা মানত পূরণ করে আর সেই দিনকে ভয় করে, যার অনিষ্ট হবে সুদূরপ্রসারী। তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকিন, এতিম ও বন্দিকে খাদ্য দান করে। তারা বলে, আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের খাদ্য দান করি। আমরা তোমাদের থেকে কোনো প্রতিদান চাই না এবং কোনো শোকরও না। আমরা আমাদের রবের পক্ষ থেকে এক ভয়ংকর ভীতিপ্রদ দিবসের ভয় করি। ’ (সুরা : দাহার, আয়াত : ৭-১০)
বিশুদ্ধ আকিদার অধিকারী হবে : ‘ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফেরাবে; বরং ভালো কাজ হলো যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭৭)
উল্লেখ্য, কিছু কিছু আয়াতে মুমিনের একাধিক গুণ উল্লেখ থাকায় সেগুলো পৃথকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম