প্রশ্নঃ অমুসলিম তথা বিধর্মীদের সাথে সামাজিক সম্পর্ক রাখা; যেমন, হিন্দুদের বিয়ের উকিল হওয়া, তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা, তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদান করা, মুসলমানদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদেরকে আমন্ত্রণ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে কেমন?
– মুহাম্মদ মিজানুর রহমান, সোহাগপুর মাদ্রাসা, আশুগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া।
উত্তরঃ একজন মুসলমান আরেকজন মুসলমানের সাথে যেরূপ ধর্মের টানে বন্ধুত্ব ও ভালবাসার সম্পর্ক রাখে, অনুরূপ বন্ধুত্ব ও ভালবাসার সম্পর্ক অমুসলিমদের সাথে স্থাপন করা জায়েয নয়। তবে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার, সামাজিক সম্পর্ক, সহনশীলতা, মানবিক সহানুভূতি এবং সমবেদনা ইত্যাদি প্রদর্শন করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর কর্তব্য। যেমনটা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ, খোলাফায়ে রাশিদীন ও অন্যান্য সাহাবাগণের আচরণ থেকে দেখা যায়।
অমুসলিম বা বিধর্মীদের সাথে পারস্পরিক সম্পর্কের কয়েকটি স্তর রয়েছে। যেমন-
প্রথমতঃ গভীর আন্তরিকতাবোধ, অন্তরঙ্গ বন্ধুত্ব, হৃদ্যতা ও ভালবাসার স্তর। এ স্তরের সম্পর্ক কেবলমাত্র মুসলমানদের সাথেই হতে পারে। অমুসলিমদের সাথে এরূপ সম্পর্ক স্থাপন কিছুতেই জায়েয নয়।
দ্বিতীয়তঃ সমবেদনার স্তর। অর্থাৎ তাদের প্রতি মানবিক সহানুভূতি, শুভাকাঙ্খা প্রদর্শন এবং তাদের মানবিক ও সামাজিক কাজে উপকার করা। এস্তরের সম্পর্ক মুসলমানদের সাথে যুদ্ধরত অমুসলিম সম্প্রদায় ছাড়া সকল অমুসলিমদের সাথে স্থাপন করা জায়েয।
আরও পড়তে পারেন-
- ঋণ বা ধারকর্য পরিশোধে ইসলামের বিধান
- ইতিহাসে আল্লামা আহমদ শফী
- মেধাবী, আন্তরিক ও নিষ্ঠাবান শিক্ষক ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়
- ইগো প্রবলেম নিয়ে যত কথা
- সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় রাখতে ইসলামের নির্দেশনা
তৃতীয়তঃ সৌজন্য ও আতিথেয়তার স্তর। অর্থাৎ বাহ্যিক সদাচার ও বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার। এই সম্পর্কের উদ্দেশ্য যদি নিজের ধর্মের উপকার সাধন অথবা নিছক আতিথেয়তা কিংবা তাদের অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষার্থে হয়, তবে এমন ক্ষেত্রে সকল অমুসলিমদের সাথেই এরূপ সম্পর্ক বজায় রাখা জায়েয।
চতুর্থতঃ লেনদেনের স্তর। অর্থাৎ সকল প্রকার ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সম্পর্ক স্থাপন। এই স্তরের সম্পর্ক প্রতিষ্ঠাও সকল অমুসলিমদের সাথে জায়েয। তবে এতে যদি মুসলিম জাতিসত্ত্বার অনিষ্ট হয়, তাহলে জায়েয হবে না।
পঞ্চমত: অমুসলিমদের একান্ত নিজস্ব ধর্মীয় পূজা-পার্বন ও অনুষ্ঠানাদিতে শরীক হওয়া বা দেখতে যাওয়া মুসলমানদের জন্য কখনো জায়েয নয়। কারণ, এ ধরণের অনুষ্ঠান একান্তই তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান। পূজা-পার্বণ কখনোই সামাজিক ও মানবিক আয়োজন নয়। সুতরাং এসব ক্ষেত্রে মুসলমানদের স্বকীয়তা ও স্বতন্ত্র্যবোধ কঠোরভাবে অটূট রাখতে হবে।
ষষ্ঠত: অমুসলিমদের সামাজিক আতিথেয়তায় পরিবেশিত খাবারে যদি মুসলমানদের জন্য হারাম খাবারের মিশ্রণ থাকার আশংকা থাকে, তাহলে সে খাবার গ্রহণ মুসলমানদের জন্য জায়েয হবে না।
সপ্তমত: মুসলমানদের পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অমুসলিম প্রতিবেশী, সহকর্মীদেরকে দাওয়াত ও আপ্যায়ন করাতে এবং ধর্মীয় স্বাতন্ত্র্যবোধ বজায় রেখে বিয়ে-শাদীতে উকিল হওয়াতে ইসলামে কোন বাধা-নিষেধ নেই।
প্রশ্নোল্লিখিত দিকগুলোকে উপরে বর্ণিত স্তরগুলোর সাথে মিলিয়ে বিবেচনা করে নিতে হবে যে, অমুসলিমদের সাথে কোন ধরনের সম্পর্ক রাখা জায়েয।
তথ্যসূত্র- সূরা আলে ইমরান- ২৮, আল্ মুমতাহিনা- ১, সংক্ষিপ্ত বাংলা মাআরিফুল কুরআন-১৭২ পৃষ্ঠা।
উত্তর দিয়েছেন- আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন (দা.বা.)
মুফতি, মুহাদ্দিস, মুফাসসীর ও সহকারী পরিচালক-
জামিয়া আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা, চট্টগ্রাম।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ