Home ইসলাম ইসরায়েলে মুসলমানদের জীবনসংগ্রাম

ইসরায়েলে মুসলমানদের জীবনসংগ্রাম

।। মো. আবদুল মজিদ মোল্লা ।।

২৯ সেপ্টেম্বর বুধবার। ফিলিস্তিনি নারী হানা আলমলেহে তাঁর আসবাব গুছিয়ে নিচ্ছেন মাতৃভূমিতে ফেরার জন্য। এক বছর যুক্তরাজ্যে অবস্থানের পর ফিলিস্তিনে ফিরে যাচ্ছেন তিনি। ২৪ বছর বয়সী হানা ‘দ্য সাঈদ ফাউন্ডেশন’-এর মেধাবৃত্তি পেয়ে যুক্তরাজ্যে আসেন এবং ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজভাষা বিভাগের মাস্টার্সে ভর্তি হন।

বহু ফিলিস্তিনি তরুণ যুদ্ধ-সংঘাতে বিপর্যস্ত ফিলিস্তিন ছেড়ে ইউরোপে পাড়ি জমাতে চায় এবং তারা ইউরোপে বসবাস করাকে সুবর্ণ সুযোগ মনে করে। হানা তাদের চেয়ে ভিন্ন।
হানার পরিবারের আদি নিবাস পূর্ব জেরুজালেমের শুফায়াত এলাকায়। এলাকাটি এখন পুরোপুরি ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন। হানার পরিবার এখন জেরুজালেমের ভাড়া বাড়িতে থাকে। তাঁর পিতার উপার্জনের অর্ধেক ব্যয় হয় বাড়ি ভাড়ায় এবং এক-চতুর্থাংশ ইসরায়েল সরকারকে ‘রিয়েল স্টেট ট্যাক্স’ বাবদ জমা দিতে হয়। এরপর যা থাকে তা দিয়েই চলে হানার পরিবার। হানা বলেন, পারিবারিক আর্থিক সংকটের কারণে প্রতিদিন কলেজ শেষ করার পর আট ঘণ্টা প্রাইভেট শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে আমি বাধ্য হতাম।

ইসরায়েলের দখলদারিত্বের কারণে আরবরা ইসরায়েলিদের তুলনায় কম বেতন পায়। সমান বেতন পেতে হলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কষ্টসাধ্য প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয় অথবা ইসরায়েলের নাগরিকত্ব লাভের জন্য কাজ করতে হয়। হানার পরিবার তা করতে অস্বীকার করে। কিন্তু কেন?

আরও পড়তে পারেন-

এই উত্তর দেন ‘ইসলামিক ওয়াকফ অব জেরুজালেম’-এর উপ-পরিচালক শেখ নাজিহ বিকিরিত বলেন, ফিলিস্তিনিদের জন্য ইসরায়েলের নাগরিকত্ব গ্রহণের অর্থ হলো পূর্ব জেরুজালেমের ওপর ইসরায়েলের সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি দেওয়া এবং ফিলিস্তিনি পরিচয় বিনাশ করা। আর প্রকৃতপক্ষে ইসরায়েল একটি দখলদার শক্তি ছাড়া কিছুই না। হানার বাবার জেরুজালেমে বসবাসের শুধু অস্থায়ী অনুমতি আছে। তাই তার জন্য স্বাস্থ্য বীমা, কিছু ইসরায়েলি শহর, জেরুজালেমে গাড়ি চালানো এবং উচ্চ পদে চাকরি করা নিষিদ্ধ। হানা বলেন, আরব ও ইহুদি সবার প্রতি ইসরায়েলি আইন সমানভাবে প্রয়োগ করা উচিত। কিন্তু আরবরা সব সময় বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার।

শুধু জেরুজালেম নয়, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী পশ্চিম তীরেও ফিলিস্তিনিদের চলাচলে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। পশ্চিম তীরের রামাল্লা শহরের কাছে অবস্থিত ‘বিরজেইত ইউনিভার্সিটি’ স্নাতক সম্পন্ন করার সময় হানাকে ইসরায়েলি চেক পয়েন্টে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। তাকে কঠোর নিরাপত্তা পরীক্ষার ভেতর দিয়ে যেতে হতো। এমন মানুষের সামনেই তার কিছু কাপড় ও গয়না খোলার নির্দেশ দেওয়া হতো। হানা বলেন, ফিলিস্তিনিদের চলাচল ইসরায়েলি বাহিনীর মেজাজ-মর্জির ওপর নির্ভরশীল। একবার একজন গর্ভবতী নারীকে দীর্ঘ সময় চেক পয়েন্টে আটকে রাখা হয়। ফলে গাড়িতেই তাকে সন্তান প্রসব করতে হয়।

ইসরায়েলে লেখাপড়া করতে যাওয়ার আগে ইসরায়েলি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে হানাকে একটি ‘ভ্রমণ নথি’ সংগ্রহ করতে হয়েছিল এবং ইসরায়েলি পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘তোমার জাতীয়তা কী? হানা বলেন, ফিলিস্তিনি। অফিসার জিজ্ঞাসা করেন, জেরুজালেম কি ইসরাইয়েলি ভূমি? হানা উত্তর দেন—না, এটা ফিলিস্তিনের রাজধানী। প্রতিক্রিয়ায় পুলিশ কর্মকর্তা ভ্রমণ নথিতে তাঁর নামের বানান ভুল লেখেন এবং জাতীয়তার স্থানে লেখেন ‘জাতীয়তাহীন’। শেষ পর্যন্ত হানা জর্ডানের ভ্রমণ নথি ব্যবহার করে যুক্তরাজ্যের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলেন।

যুক্তরাজ্যে হানার অভিজ্ঞতা ছিল ভিন্ন। তিনি কোনো চেক পয়েন্টে না থেমে, ভারী ভারী অস্ত্র না দেখে, শত্রুসেনার মুখোমুখি না হয়ে বা একজন আরব হিসেবে অপমাণিত না হয়ে গন্তব্যে যেতে পারতেন। লেখাপড়া শেষে যখন জেরুজালেম ফেরেন, তখন অসুস্থ আচরণগুলোও ফিরে পান। তেলআবিবের বেনগুরিয়েন বিমানবন্দরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। হানার ভাষায়, ‘ইসরায়েলি সেনাদের কাছে আমার আরব হওয়াই ছিল আমাকে অপমান করার সবচেয়ে ভালো কারণ। তারা আমার সব কিছু চেক করে। এমনকি স্যানিটারি পণ্যগুলো পর্যন্ত। ’

এমন সংকটময় জীবনযাপনের পরও কেন জেরুজালেমে ফিরে এলেন? হানার উত্তর হলো, আমি বিশ্বাস করি আমি জেরুজালেম ছেড়ে গেলে কোনো একজন দখলদার আমার স্থানটি গ্রহণ করবে। যুক্তরাজ্যে আমার নিরাপদ জীবনকে পিছু ফেলে এসেছি আমার মাতৃভূমি, আমার পূর্বপুরুষদের মাতৃভূমি ফিলিস্তিনের জেরুজালেমের ভালোবাসায়।

সূত্র : মিডলইস্ট মনিটর

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।