।। মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা ।।
পৃথিবীতে প্রায় পাঁচ লাখ প্রজাতির পাখি আছে। এর মধ্যে অনেক প্রজাতিই বছরের নির্দিষ্ট সময় অন্য দেশে চলে যায়। শীতকালে আমাদের দেশের বেশির ভাগ অতিথি পাখি হিমালয় কিংবা হিমালয়ের ওপাশ থেকে আসে। মজার বিষয় হলো, শীতের দৌরাত্ম্য কমে গেলে তারা ঠিকই তাদের পুরনো ঠিকানায় চলে যেতে সক্ষম হয়।
আল্লাহ তাআলাই তাদের মধ্যে এ ধরনের একটি জিপিএস সিস্টেম দিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া তারা রাতের বেলায় তারকা ও দিনের বেলায় সূর্যের অবস্থান দেখেও দিক নির্ণয় করে। পাখির মধ্যেও আল্লাহ জ্ঞানীদের জন্য অনেক নিদর্শন রেখেছেন। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা কি লক্ষ্য করে না আকাশের শূন্যগর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন পাখিদের প্রতি? আল্লাহই ওদের স্থির রাখেন। অবশ্যই এতে নিদর্শন রয়েছে বিশ্বাসী সমপ্রদায়ের জন্য। ’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৭৯)
অতিথি পাখিরা আমাদের মেহমান। তাদের নিরাপদে থাকার ব্যবস্থা করা আমাদের দায়িত্ব। পাখিরা আল্লাহর জিকির করে। যার বাড়ির আঙিনার গাছে বসে সে আল্লাহর জিকির করতে পারে তার বরকত সে নিজেও অনুভব করে। আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কি দেখোনি যে আসমান ও জমিনে যারা আছে তারা এবং সারিবদ্ধ হয়ে উড়ন্ত পাখিরা আল্লাহর তাসবিহ পাঠ করে? প্রত্যেকেই তাঁর সালাত ও তাসবিহ জানে। তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত। ’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৪১)
আরও পড়তে পারেন-
- ধর্ষণ প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা
- কিশোর অপরাধ রোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
- আদর্শ পরিবার গঠনে যে সব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরী
- ইসলামে সামাজিক সম্পর্ক এবং ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখার গুরুত্ব
- মানুষ মারা যাওয়ার পর, তাঁর আত্মার কি হয় ?
আমরা অনেকে গাছের ফল কিংবা পুকুরের মাছ রক্ষার জন্য এদের তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু আমরা হয়তো জানি না যে পাখিরা আমাদের গাছ থেকে যদি কোনো ফল খেয়ে ফেলে তবে এর বিনিময়ে আমরা সদকার সওয়াব পাই। হজরত জাবের (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যেকোনো মুসলমান (ফলবান) গাছ লাগায় আর তা থেকে যা কিছু খাওয়া হবে তা তার জন্য সদকা, তা থেকে যা কিছু চুরি হবে তা তার জন্য সদকা, পাখি যা খাবে তাও তার জন্য সদকা এবং যে কেউ এর থেকে কিছু নেবে তাও তার জন্য সদকা। অর্থাৎ সে দান-খয়রাতের সওয়াব পাবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ২৩২০)
সুবহানাল্লাহ! পাখিদের নিরাপত্তা দানের এত ফজিলত থাকা সত্ত্বেও আমরা কেন অতিথি পাখিদের অহেতুক হত্যা করব? তা ছাড়া এটি সরকারিভাবেও নিষিদ্ধ। ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ী, ‘পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি এক লাখ টাকা জরিমানা, এক বছরের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড। একই অপরাধ আবার করলে শাস্তি ও জরিমানা দ্বিগুণ। ’
যদিও ইসলামে পাখি শিকার করা জায়েজ। কিন্তু নির্ভরযোগ্য কারণ ছাড়া এদের নিশানা বানানো জায়েজ নেই। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অহেতুক কোনো চড়ুই পাখি মেরে ফেলল, কিয়ামতের দিন পাখিটি আল্লাহর কাছে এই বলে নালিশ করবে, হে আল্লাহ, অমুক ব্যক্তি আমাকে অহেতুক হত্যা করেছে। ’ (নাসায়ি, হাদিস : ৪৩৪৯)
এ হাদিস দ্বারা আমরা বুঝতে পারি, একান্ত প্রয়োজন ছাড়া পাখি শিকার করা ঠিক নয়।
তাই আসুন, আমরা সবাই মিলে অতিথি পাখিসহ সব ধরনের পাখি রক্ষা করি। মহাবিপর্যয় থেকে নিজেদের রক্ষা করি। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করি।
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম