Home ইসলাম আত্মশুদ্ধি হোক জীবনের অন্যতম ব্রত

আত্মশুদ্ধি হোক জীবনের অন্যতম ব্রত

।। মোশাররফ মাহমুদ ।।

মানুষ পৃথিবীতে জন্মেছে, তার মৃত্যু একদিন অবশ্যই সংঘটিত হবে। মানুষ চিরস্থায়ী বা চিরদিনের হায়াত নিয়ে জন্ম লাভ করে না। মাখলুকের জন্ম মানেই মৃত্যু আবশ্যম্ভাবী। প্রত্যেক মানব আত্মা নশ্বর ও পার্থিব এই জগতে সততা-সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়ণতা, ইনসাফ-মহানুবভতা-ইনসানিয়্যাত, মানবতা ও সর্বোত্তম আদর্শে আদর্শমণ্ডিত হবে; এটাই তো মানব আত্মার অস্তিত্বের দাবি। এগুলোই তো মানব সভ্যতার অন্যতম গুণাবলি। এই সমস্ত গুণাবলি মানুষের মাঝে এমনিতেই চলে আসে না। সাধনা করে অর্জন করে নিতে হয়।

অভিশপ্ত শয়তান প্রতিটা সময়, প্রতিটা মুহূর্ত মানুষকে অন্যায় ও পাপের প্রতি প্ররোচিত করতে থাকে। কুমন্ত্রণা দিতে থাকে। পাপাচার অনাচারের দিকে ডাকতে থাকে। অন্যায়, মিথ্যা ও অসৎ কর্মকাণ্ডের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে থাকে। মানুষকে পাপাচারে লিপ্ত করতে শয়তান অবিরাম-অবিরত চেষ্টা করতে থাকে। এই অভিশপ্ত শয়তানের কুমন্ত্রণা ও প্ররোচণা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হলে নিজেকে সৎ ও বিশুদ্ধ রাখার সাধনার বিকল্প নেই। আর এই সাধনার আরেক নাম হলো আত্মশুদ্ধি। যাকে আরবি ভাষায় তাসাওউফ বলা হয়। অর্থাৎ সূফিবাদ, আধ্যাতিকতা তথা সমস্ত অন্যায়কে পরিহার করে বিশেষ পদ্ধতি ও নির্দেশনায় নিজেকে পরিচালিত করার সাধনার মাধ্যমে নিজের অসৎ আত্মাকে ইসলাহ বা সংশোধন করাই হলো আধ্যাতিকতা বা আত্মশুদ্ধি।

নিজের অন্তর আত্মাকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য কঠোর সাধনা ও পরিশ্রম করতে হবে। এই পরিশ্রমের মাধ্যমে অসৎ-আত্মাকে বশিভূত করতে হবে। কারণ মানুষের অন্যায় কাজ সর্বপ্রথম অন্তর থেকে উৎপত্তি হয়। মনের মধ্যে সংকল্প করা হয়। তার পর সেই অন্যায় কাজ ধিরে ধিরে সংঘটন করার দিকে ধাবিত হয়। তাই পাপ কাজের সংকল্পকারী অসৎ-আত্মাকে কঠোর সাধনার মাধ্যমে বশিভূত করা অপরিহার্য।

যদি মানুষ সাধনার মাধ্যমে আত্মাকে বশিভূত করতে না পারে, তবে শয়তানের কুমন্ত্রণায় পরে অন্যায় পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। অতিমাত্রায় অন্যায় করার কারণে অনেক সময় অন্তর কালো হয়ে যায়। তখন ভালো কাজ আর ভালো লাগে না। মন্দ কাজে (সাময়িক) তৃপ্তি পায়। তাই সেখান থেকে ফিরে আসাটা অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এই পথ থেকেও ফিরে আসতে হলে কঠোর সাধনা বা আত্মশুদ্ধির পথ গ্রহণ করতে হবে।

আর যদি আত্মাকে কঠোর সাধনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ ও সংশোধন করতে পারে, নিজেকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারে। তখন আর মন-দিল অসৎ কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ হবে না। পাপ কাজ সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। তাই উচিত আধ্যাতিকতা তথা আত্মার সাধনার মাধ্যমে অসৎ আত্মা ও শয়তানিয়্যাতের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া। আর এর নামই তাসাওউফ বা আত্মশয়দ্ধি।

হাদীসে পাকে বিশ্বনবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, “আলা ইন্না ফিল যাসাদি মুদগাতান। ইজা ছালুহাত ছালুহাল যাসাদু কুল্লো। ওয়া ইজা ফাসাদাত ফাসাদাল যাসাদু কুল্লো। আলা ওয়াহিয়াল ক্বালব”।

অর্থাৎ একথা স্মরণ রেখো! নিশ্চই প্রত্যেক শরীরের মধ্যে এমন একটা গোস্তের টুকরা আছে। যখন এই গোস্তের টুকরাটা ভালো থাকে, তখন সমস্ত দেহ ভালো থাকে। আর যখন সেই গোস্তের টুকরাটা খারাপ থাকে, তখন সমস্ত শরীর বেদনাকাতর ও অসুস্থ হয়ে পড়ে। সেই টুকরোটাই হলো ‘ক্বলব’।

কলবকে বলা হয় শরীরের চালিকা শক্তি। দেহ ও শরীরের নিয়ন্ত্রক। ভালো মন্দ যাচাই বাছাই ও পার্থক্যকারী। তাই ক্বলব বা অন্তরটা সর্বদা ভালো থাকা অপরিহার্য। অন্তরটা যদি ভালো থাকে তাহলে পুরো মানুষটাই ভালো থাকে। অন্তরটা খারাপ হলে পুরো মানুষটাই খারাপ হয়ে যায়। ভালো কাজ তার কাছে ভালো লাগে না। মন্দ ও অন্যায় কাজ তার কাছে ভালো মনে হয়। আর এর মাঝেই সে সাময়িক প্রশান্তি খোঁজে পায়। যা দুনিয়া ও আখেরাত ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

আমাদের শরীরের নানাবিদ রোগব্যধি দেখা দেয়। নানা প্রকারের রোগ। দেহের রোগের চিকিৎসার জন্য মেডিক্যাল সাইন্স আবিষ্কার হয়েছে। দিন দিন চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতি হচ্ছে। এলোপ্যাথিক, হোমিওপ্যাথি, কবিরাজী নানা রকম ঔষধ তৈরি হচ্ছে। এসব ঔষধ সেবনের দ্বারা দেহের রোগ আরোগ্য লাভ হয়। দেহের রোগ প্রতিরোধ করে। শরীরের সুস্থ্যতা অর্জিত হয়। শরীরে সুস্থ্যতার নেয়ামত লাভ করে থাকে। কিন্তু মানুষের দেহেও একটা গোস্তের টুকরা (ক্বলব)আছে। বিভিন্ন কারণে এটাও রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এই আত্মার চিকিৎসার জন্য রূহানী বা আধ্যাত্মিক চিকিৎসক প্রয়োজন। আর এই রূহানী চিকিৎসক হলেন বুজুর্গানে দ্বীন। আল্লাহর ওলীরা।

দিল -অন্তরের মুজাহাদা ও সাধনার মাধ্যমে মনের সমস্ত ঘৃণা, হিংসা, বিদ্বেষ, লোভ, লালশা দূর হয়ে যায়। অন্তর পরিষ্কার ও পবিত্র হয়ে যায়। পবিত্র দিল ভালো কাজের ইচ্ছা পোষণ করে। ভালো কাজের প্রতি উৎসাহী হয়ে ওঠে। ভালো কাজ করতে পারলে মন আনন্দবোধ ও প্রশান্তি লাভ করে। তাই অন্তরের সমস্ত মন্দগুলো দূর করে খাঁটি মানুষ হতে চাইলে আত্মশুদ্ধির বিকল্প নেই।

লেখক: শিক্ষার্থী, জামিয়া মাদানীয়া বারিধারা-ঢাকা এবং করসপন্ডেন্ট- উম্মাহ ২৪ডটকম।