মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা: মসজিদে ইমামের দাঁড়ানোর স্থান নির্ধারণ করতে মসজিদের সামনের দেয়ালের মাঝামাঝি একটি নির্দিষ্ট স্থান তৈরি করা হয়। পরিভাষায় যাকে আমরা মিহরাব হিসেবে জানি। পৃথিবীর বেশির ভাগ মসজিদেই মিহরাব দেওয়া হয়।
মিহরাব ছাড়া যেন মসজিদের ডিজাইনই যথার্থ হয় না। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, পবিত্র কাবাঘরে প্রচলিত নিয়মে তৈরি কোনো মিহরাব নেই। এর কারণ কী? এর কারণ জানতে আমাদের প্রথমে জানতে হবে মিহরাব কাকে বলে বা মিহরাবকে মিহরাব বলে নামকরণের কারণ কী?
মিহরাবকে মিহরাব নামকরণের ব্যাপারে কয়েকটি মতামত পাওয়া যায়। সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত হলো এই, মিহরাবের আভিধানিক অর্থ মজলিসের অগ্রভাগ। মিহরাব যেহেতু মসজিদের অগ্রভাগেই অবস্থিত, যা কিবলার দিকে দেয়ালের মধ্যখানে ইমামের দাঁড়ানোর স্থান নির্ধারণ করার জন্য নির্মাণ করা হয়, তাই মিহরাবকে মিহরাব বলে নামকরণ হয়েছে।
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
রাসুল (সা.)-এর যুগে প্রচলিত মিহরাবের অস্তিত্ব ছিল কি না—এ ব্যাপারে ফুকাহায়ে কিরামের ও ইতিহাসবিদদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কারো কারো মতে, রাসুল (সা.)-এর যুগে বর্তমান যুগের মতো মিহরাব ছিল না, বরং এজাতীয় মিহরাবের প্রচলন শুরু হয় ৯১ হিজরিতে ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রহ.)-এর যুগে। তিনি যখন ওয়ালিদ ইবনে আব্দুল মালেক কর্তৃক মদিনার গভর্নর নিযুক্ত হয়ে মসজিদ-ই-নববীর পুনর্নির্মাণ করেছিলেন, তখনই মিহরাবসহ মসজিদ নির্মাণ করেন। (আল মাওসুআতুল ফিকহিয়্যাহ আল কুয়েতিয়্যাহ : ৩৬/১৯৫)
অবশ্য একটি দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, রাসুল (সা.)-এর যুগেও মিহরাব ছিল। যেহেতু শরিয়তের বিধান হলো ইমাম কাতারের মাঝখানেই মুক্তাদিদের থেকে সামনে দাঁড়াবে, রাসুল (সা.) ও সাহাবারা তা-ই করেছেন।
এ কারণে কোনো ইসলামী আইনবিদ এই মিহরাবকে বিদআত বলেননি এবং মসজিদের অংশে দাঁড়িয়ে মিহরাবে সিজদাসহ নামাজ পড়তে কেউ নিষেধ করেননি। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৯/৫৪)
আর কাবাঘরের ভেতরে যেহেতু ফরজ নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়া হয় না, তাই তাতে এমন স্থাপনা তৈরিরও প্রয়োজন পড়ে না। এ কারণেই কাবাঘরে কোনো মিহরাব নেই। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ৯/৬০)
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম