।। মাওলানা নূর হোসাইন সবুজ ।।
আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে মানব জাতির মধ্যে এমন কিছু ক্ষণজন্মা ব্যক্তিত্ব প্রেরণ করেছেন, যারা জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত মানবতার কল্যাণে নিজের মেধা ও শ্রমকে বিলিয়ে দিয়ে জাতির কাছে চির স্মরণীয় হয়ে আছেন। আজ এমনই এক ব্যক্তিত্বের কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
যুগের উজ্জ্বল নক্ষত্র, কিংবদন্তী ব্যক্তিত্ব, সদা হাসি খুশিতে মত্ত, সর্বদা পরিপাটি, সৌখিন এবং জ্ঞান সাধক এই মহান ব্যক্তিত্বের নাম আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক (হাফি.)। সমসাময়িক শীর্ষ এই আলেমে-দ্বীন আকাবিরে দেওবন্দের হাতে গড়া শতবর্ষী ইসলামী রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সিনিয়র সহসভাপতি, জামিয়াতুন নূর আল কাসেমিয়া ও জামিয়া মাদানিয়া বারিধারার শায়খুল হাদীস হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এছাড়া আরো অসংখ্য দ্বীনি মাদরাসা ও ইসলামী সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক।
১৯৪৭ সালের ৯ আগস্ট সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার আকুনি গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতা কায়েদে জমিয়ত মাওলানা শফিকুল হক আকুনি (রহ.); তিনিও ছিলেন এদেশের একজন আল্লাহওয়ালা খাঁটি বুজুর্গ।
যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক (হাফি.) হুজুরের কামরায় যখনই প্রবেশ করি, মনের ভিতর এক অন্যরকম অনুভূতি জাগে! মনে হয় যেন ইলমের বাগানে প্রবেশ করেছি। চারদিকে সাজানো গোছানো সারি সারি কিতাব। মনে হয় যেন ইলমের বাগানের মধ্যে ফুটন্ত এক কামিনী।
প্রায়ই হুজুরের কাছে যাওয়া হয়। যেকোনো বিষয় নিয়েই হযরতের কাছে যাই, খুব সুন্দর ভাবে সমাধান দেন৷ হাসিখুশি ভাবে খোলামেলা কথা বলেন। হুজুরকে কখনো অহংকারী ভাব কিংবা গুরু-গম্ভীর হয়ে থাকতে দেখিনি। একজন সাধারণ পাবলিকও হুজুরের কাছে আসলে খুব সুন্দর হাসিখুশি ভাবে কথা বলেন। অচেনা মানুষ হলে মনে হয় যেন যুগ যুগ ধরে হুজুরের পরিচিত। তিনিও খুব সহজেই হুজুরের ভক্ত হয়ে যান।
জীবনে বহু আলেমকে দেখেছি কিন্তু হযরতের মতো ব্যক্তিত্ব খুব কমই দেখেছি। এ-তো বড়ো একজন ব্যক্তিত্ব, কওমী অঙ্গনের জাতীয় নেতাদের মধ্যে অন্যতম, অথচ ব্যানারের সামনে কোনদিন দেখিনি। ধাক্কাধাক্কিতো দুরের কথা! হযরতের এই বিষয়টা আমাকে খুব অবাক করে।
আরও পড়তে পারেন-
- ধর্ষণ প্রতিরোধে ইসলামের নির্দেশনা
- কিশোর অপরাধ রোধে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে
- আদর্শ পরিবার গঠনে যে সব বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া জরুরী
- ইসলামে সামাজিক সম্পর্ক এবং ভ্রাতৃত্ববোধ বজায় রাখার গুরুত্ব
- মানুষ মারা যাওয়ার পর, তাঁর আত্মার কি হয় ?
বিগত জাতীয় নির্বাচনের সময় হুজুরের এলাকায় সফর করার সুযোগ হয়েছে। এলাকার পথসভায় হুজুরকে নিয়ে সাধারণ মানুষের ভালোবাসা খুব কাছ থেকে দেখেছি। নিজের টাকায় সাধারণ যুবকরা মোটরবাইক নিয়ে হুজুরের মিছিল, পথসভায় শোডাউন দেয়ার দৃশ্যও অবলোকন করেছি। সেদিন মনে হয়েছিলো এবার গোটা বাংলাদেশ হাতছাড়া হলেও সংসদে আলেম উলামার পক্ষে কথা বলার মতো একজন থাকবেনই।
আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, নির্বাচনের আগে যখন নেতারা সেতু-কালভার্ট করবো, রাস্তা করবো, অমুক করবো তমুক করবো বলে হাজারো মিথ্যা প্রতিশ্রুতির বুলি আওড়ায়, তখন হুজুর সাধারণ জনগণকে প্রতিশ্রুতি দেয় আমি নির্বাচিত হলে মক্তব প্রতিষ্ঠা করবো, মসজিদ-মাদরাসার উন্নয়ন করবো, কৃষকদের ফসল উৎপন্নের সরঞ্জামের ব্যাবস্থা করবো ইত্যাদি।
অথচ এ-যুগের নেতারা কত হাজারো মিথ্যা প্রতিশ্রুতির বুলি আওড়ান। সেদিন এতো এতো জনতার ভালোবাসার মাঝেও হুজুর আমাদের ভুলে যাননি। প্রায় তিন দিনের সফরে দু’দিনই হুজুরের এলাকায় ছিলাম। হুজুরের মেহমানদারীতে মুগ্ধ ছিলাম। নির্বাচনের ফলাফল সবারই জানা। সুষ্ঠ নির্বাচন হলে হুজুরই হতেন সিলেট-৫ এর এমপি।
জনতার হৃদয়ে তিনি থাকবেন যুগ যুগ। এদেশের মানুষের পাশে থাকবেন, কথা বলবেন
আবারও জনতার সে ভালোবাসায় সিক্ত হবেন আমাদের নেতা আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক।
দেশি-বিদেশি ফেতনার মোকাবিলায় হুজুরের লিখিত ছোট ছোট বইগুলো সকলের জন্য খুবই উপকারী। বাংলার হাদীসে নববীর সোনালি দিগন্তের এক প্রোজ্জ্বল তারকা। “খুলাসাতুল আছার” এ গ্রন্থে তিনি হানাফি মাজহাবের মৌলিক মাসআলাগুলোর সমর্থনের শক্তিশালী হাদীস সমূহ সাজিয়েছেন। এছাড়াও ইসলাম ও মওদুদীবাদের সংঘাত, কুরআন-হাদীসের আলোকে আমাদের নামাজ, ইসলামি রাজনীতি ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, তাহকীক ও তাকলীদ, সা’দ সাহেবের আসল রূপ, শিক্ষা, ইসমতে আম্বিয়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ তিনি রচনা করেছেন।
এতো সুন্দর যুক্তিপূর্ণ লেখা আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরাও লেখতে পারেন বলে মনে হয় না। আলহামদুলিল্লাহ, হুজুরের লেখায় সমাজের বাস্তবতা ফুটে উঠে। সম্পুর্ণ কুরআন-হাদীস অনুযায়ী লেখেন। করোনাকালীন লকডাউনে হুজুরের পার্সোনাল ফেসবুক ওয়ালের লেখাগুলো আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবীরা কেউই খন্ডন করতে পারেননি।
ইতিহাস, দর্শন ও ভূগোলে হযরতের রয়েছে বিশাল স্থান। দরসগাহ হতে বয়ানের মঞ্চ সবখানেই থাকে ইতিহাসের ছোঁয়া। মনে হয় তিনিই বিষয়ভিত্তিক পূর্ণাঙ্গ এক জীবন্ত ইতিহাসগ্রন্থ।
মুসলিম উম্মাহ’র উপর তার নিঃস্বার্থ খেদমত অব্যাহত থাকুক চিরকাল। মহান প্রভুর দরবারে আমাদের এই প্রার্থনা। পরিশেষে সংক্ষেপে কবির ভাষায় যদি বলি-
কাসেমী মিশনের সেনাপতি যিনি,
আল্লামা উবায়দুল্লাহ ফারুক তিনি।
যাকে দেখে ভুলে থাকি, কাসেমী বিদায়ের শোক।
তিনি আমাদের মহান নেতা আল্লামা ফারুক।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ