খান রফিক: পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি পেতে সব ধাপ পেরিয়েছেন আসপিয়া ইসলাম। ফলাফলে বরিশালে মেধা তালিকায় হয়েছেন পঞ্চম। এরপরও চাকরি হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হওয়ায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন আসপিয়া। এরই মধ্যে এ নিয়ে তিনি রেঞ্জ ডিআইজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও পুলিশের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো আশ্বাস পাননি। তাঁর এমন স্বপ্ন ভাঙার খবর ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
আসপিয়া বরিশাল জেলার হিজলায় বাস করেন। তবে তাঁর পরিবারের স্থায়ী ঠিকানা বরিশালে না হওয়ায় পুলিশ ভেরিফিকেশনে আটকে গেছে তাঁর কনস্টেবল হওয়ার স্বপ্ন।
এ প্রসঙ্গে আসপিয়া বলেন, ‘৭টি স্তর উত্তীর্ণ হয়ে চূড়ান্ত নিয়োগের অপেক্ষায় ছিলাম। এমন সময় পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, চাকরি পেতে হলে নিজেদের জমিসহ ঘর দেখাতে হবে। কিন্তু আমাদের কোনো জমি নেই। একজনের জমিতে বহু বছর ধরে ভাড়াটে হিসেবে বসবাস করছি। কিন্তু ভোটার আইডি, জন্মনিবন্ধন হিজলার বড়জালিয়া ইউপিতেই।’
আসফিয়া কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘জমি নেই এ জন্য চাকরি হবে না, এটা কোনোভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না। যে কারণে বুধবার রেঞ্জ ডিআইজির সঙ্গে বরিশাল পুলিশ লাইনসে দেখা করে মৌখিকভাবে আবেদন জানিয়েছি।’ এরপরও ডিআইজি তাঁকে আশ্বস্ত করতে পারেননি বলে হতাশ আসপিয়া।
বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামানের মন্তব্যের জন্য ফোন দেওয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আক্তারুজ্জামান বলেছেন, ‘আসপিয়া বরিশালের স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণ করতে পারছেন না। বিধিমোতাবেক পুলিশ কাজ করবে। মেয়েটির প্রতি কষ্টবোধ থেকেই যায়। যারা তাঁকে ফেসবুকে ভাইরাল করছে, তাদের দোয়ায় যদি মেয়েটি চাকরি পায় তাতে খুশি হব। এ জন্য আমাকে যে মানসিক চাপ নিতে হচ্ছে তা সাহসে পরিণত হবে।’
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
তরুণী আসপিয়া ইসলাম জানান, তিনি সরকারি হিজলা ডিগ্রি কলেজ থেকে ২০২০ সালে এইচএসসি পাস করেছেন। বরিশাল জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে অনলাইনে আবেদন করলে গত ১৪, ১৫ ও ১৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৭ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। ২৩ নভেম্বর প্রকাশিত লিখিত পরীক্ষার ফলেও উত্তীর্ণ হয়ে ২৪ নভেম্বর একই স্থানে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হন। ২৫ নভেম্বর সাক্ষাৎকারের ফলাফলে মেধা তালিকায় পঞ্চম হন। ২৬ নভেম্বর জেলা পুলিশ লাইনে চিকিৎসকেরা মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। এতেও উত্তীর্ণ হন আসপিয়া। সবশেষ ২৯ নভেম্বর সাক্ষাৎকারে উত্তীর্ণ সবার ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন সেন্ট্রাল হাসপাতালে চূড়ান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। সেখানেও উত্তীর্ণ হন এই তরুণী।
এদিকে চূড়ান্ত নিয়োগের আগে পুলিশ ভেরিফিকেশনে আসপিয়া ও তাঁর পরিবারকে ভূমিহীন উল্লেখ করা হয়। বুধবার জেলা পুলিশ সুপার বরাবর প্রতিবেদন জমা দেন হিজলা থানার উপপরিদর্শক মো. আশ্বাস। স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় আসপিয়ার চাকরি হবে না বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়।
জানা যায়, আসপিয়া ইসলামের বাবা শফিকুল ইসলাম প্রায় তিন দশক আগে কাজের সন্ধানে বরিশালের হিজলা উপজেলায় আসেন। তবে তাঁর দাদার বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়। বরিশালের হিজলা উপজেলায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করেন শফিকুল। হিজলা উপজেলায় জন্ম হয় আসপিয়া ইসলামসহ তিন মেয়ে এবং এক ছেলের। ২০১৯ সালে শফিকুল ইসলামের মৃত্যু হয়। বর্তমানে তাঁর পরিবারের সদস্যরা হিজলা উপজেলার খুন্না-গোবিন্দপুর এলাকার মেজবাহ উদ্দিন অপু চৌধুরীর বাড়িতে ভাড়া থাকেন।
পুলিশ ভেরিফেকেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিজলা থানার এসআই আব্বাস উদ্দিন বলেন, আসপিয়া ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা হিজলার স্থায়ী বাসিন্দা নন। তাঁদের দাদার বাড়ি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায়। তিনি যেভাবে পেয়েছেন সেভাবে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তবে হিজলার বাসিন্দা আবদুল হামিদ জানান, আসপিয়া তার দূরসম্পর্কের ভাতিজি। আসপিয়া হিজলায় জন্মেছেন। এই পরিবারটি দীর্ঘ বছর এখানে বসবাস করছে।
বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. ইকবাল হোছাইন বলেন, চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী যে জেলা থেকে নিয়োগ পরীক্ষা দেবেন সে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হবে। আসপিয়ার ক্ষেত্রে স্থায়ী ঠিকানা সঠিক পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, বিষয়টি তাঁরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ