।। নওমুসলিম আদ্রিতা জাহান রিতু ।।
বাঙালি মুসলমানের মন ও চরিত্র বড় বিচিত্র। এদের দুপুর, বিকাল, সন্ধ্যা রাত সাউন্ড সিস্টেমে এক মাইল এলাকা জুড়ে ফুল ভলিউমে মুন্নি বাদনাম হুয়ি, ম্যা ফানি ফানিসহ বিচিত্র তথাকথিত শ্লীল (!) গানাবাজানাকে ভালো লাগে।
শীত আসার আগেই পিকনিকের নামে, গায়ে হলুদের নামে, ডিজে পার্টির নামে, বার বি কিউ এর নামে, বার্থডে পার্টির নামে উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে চারপাশের মানুষের এয়সি কি তেয়সি করাতে এদের কোন ইজ্জত যায় না।
এদের কাছে নামাযের বিরতি মানে শুধুই আযানের বিরতি, অথচ আযানের পরে যে নামায পড়ার ওয়াক্ত থাকে, এবং নানা কারনে কারও কিছুটা বিলম্বে নামায পড়তে হতে পারে এসব তাদের কাছে কোন ম্যাটার নাহ, আযান শেষ হওয়া মাত্রই এদের উল্লাস শুরু করাটা যেন নাগরিক অধিকার।
পাব্লিক বাসে, ট্রেনে, প্লেসে অবাধে শয়তানের ধোঁয়া খাওয়াতে ও খাওয়ানোতে এদের কোন মানবতা নাই, তখন অন্যের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এদের স্বাধীনতার সংজ্ঞা পালটে যায় না, নানা পরিস্থিতিতে আক্রান্ত মানুষের ক্লান্তি বা বিরক্তি বিবেচনা করার বালাই এদের নাই, হাতে মুবাইল থাকলেই নিজের স্বাধীনতায়(!) ইচ্ছামত হেডফোন ছাড়াই যারা গান শোনায় ও শোনানোয় ব্যস্ত থাকে, কিন্তু এতে অন্যপক্ষের স্বাধীনতা যে খর্বিত হতে পারে এসব তাদের মানবতার সংজ্ঞায় কোনদিনই থাকে না।
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
যা বুঝলাম, বাঙালি মুসলমানের মানবতাবোধ, অশ্লীল ভাষাবোধ, স্বাধীনতার সংজ্ঞা এদের তখনই শুধুমাত্র মনে পরে যখন শীতকালের বাদ্যযন্ত্রবিহীন সাধারণ মানুষের জন্য আয়োজিত ওয়াজ মাহফিলে আপামর জনতা তথা মুটে মজুর, কুলি, শ্রমিক, রিকশাওয়ালা, বৃদ্ধ, ধার্মিক, রিটায়ার্ড, মূল্যস্ফীতিতে পর্যদুস্ত, কম খাওয়া গৃহস্থ, ক্লান্ত কৃষক, সারাবছর ডিজেতে নাচতে না চাওয়া সেসব পূর্ণবয়স্ক নাগরিকসহ সকলের একমাত্র বিনোদনের সংস্কৃতি হিসেবে দশটা ভালো কথা, ভালো কাজ, আশার কথা, হতাশা ভোলানোর পথ, ভালো জীবন যাপন পদ্ধতির বর্ণনা করা হয়, তখনই।
বাঙালি মুসলমানের শব্দদূষণ, স্বাধীনতা, শ্লীলভাষা, অধিকার, মানবতার স্ট্যাডার্ড এসবের কথা মনে চাড়া দিয়ে, চাড়া দিয়ে ওঠে।
তো যাই হোক, পাশের বাসার ছাদের মোরগ সারাদিন তাড়স্বরে ডাকছে, আমি ভাবছি, ফেরেশতাদের দেখতে পেলে মোরগ ডাকে, কিন্তু একদিকে যে জোরে অশ্লীল গানবাজনা চলছে, ফেরেশতাদের তো আসার কথা না!!! পরে মনে হল, আসলে উনারা নিশ্চই গুণাহর খাতা লেখার ফেরেশতা। দলে দলে হয়তো ফেরেশতা এসেছে বাঙালি মুসলমানের গুণাহর খাতা লেখার জন্য, গুণাহ বাড়লে তা লেখার জন্য ফেরেশতাও বেশিই আসবে, এটাই স্বাভাবিক।
বাঙালি মুসলমানের গুণাহর খাতা লেখার ফেরেশতা দেখেই মোরগ ডেকে চলেছে নিশ্চিত।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ