Home প্রবন্ধ-নিবন্ধ জলবায়ু বিপন্ন রাষ্ট্রসমূহ এবং বাংলাদেশের নেতৃত্ব

জলবায়ু বিপন্ন রাষ্ট্রসমূহ এবং বাংলাদেশের নেতৃত্ব

।। তাসনীম চৌধুরী ফাহিম ।।

সাম্প্রতিককালে জলবায়ু পরিবর্তন ‘জলবায়ু সংকট’ হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীদের অধিকাংশই একমত হয়েছেন যে, জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি অবদান মানবসৃষ্ট কারণসমূহের। ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) এর তথ্য অনুযায়ী, গত সাত বছর ছিল স্মরণকালের উষ্ণতম বছর এবং উনিশটি উষ্ণতম বছরের আঠারটিই এ শতাব্দীতে দেখা গিয়েছে।

২০২০ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এক ভার্চুয়াল সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের সকল সদস্যরাষ্ট্রের প্রতি ‘জলবায়ু জরুরি অবস্থা’ জারির আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে ২০১৯ সালের মে মাসে বিশ্বে প্রথমবারের মত ব্রিটিশ সংসদ থেকে জলবায়ু জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। এদিকে, প্যারিস চুক্তি অনুযায়ী, বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখার যে প্রতিশ্রুতি বিশ্ব নেতারা দিয়েছিলেন, তা অর্জনে আশাব্যঞ্জক কোন পদক্ষেপ দেখছেনা জাতিসংঘ। জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক আন্তঃরাষ্ট্রীয় প্যানেল (আইপিসিসি) এক প্রতিবেদনে বলছে, জাতিসংঘ সদস্যরাষ্ট্রগুলো এখনও কঠোর পদক্ষেপ না নিলে এই শতাব্দীর শেষে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বাড়তে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনে উল্লেখযোগ্য অবদান না থাকা সত্ত্বেও এর অভিঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশগুলো। ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী ৫২ গিগাটন গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরিত হয়, যার ২৭ শতাংশ নিঃসরিত করে চীন এবং ১১ শতাংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়াও এই তালিকার প্রথমদিকের প্রায় সবকটি দেশই শিল্পোন্নত দেশ। অন্যদিকে, এই বিপুল পরিমাণ গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্বল্পোন্নত দেশগুলো। বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি সূচক ২০২১ অনুযায়ী, ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত প্রথম দশটি দেশের ছয়টিই নিম্ন আয়ের কিংবা নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ এবং একটি দেশও উচ্চ আয়ের নয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত সব দেশের ওপর পড়লেও উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয় মূলত তিনটি কারণে। এগুলো হল- ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান, জীবিকা নির্বাহের জন্য জলবায়ু সংবেদনশীল খাতসমূহের ওপর নির্ভরতা (যেমন: কৃষি) এবং প্রাকৃতিক সম্পদের স্বল্পতা। অন্যদিকে, জলবায়ু পরিবর্তন অভিঘাতের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সক্ষমতা কম থাকায় এ দেশগুলোতে দারিদ্র্য বাড়ছে। ১৯৯৭ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে আফ্রিকার দেশ কেনিয়ায় হওয়া বন্যা ও খরার কারণে দেশটির জিডিপি’র ২২ শতাংশ কমে যায়। যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক পরিবেশ ও উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (আইআইইডি) বলছে, বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের হার কমাতে না পারলে এবং যথাযথ অভিযোজনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পক্ষে টেকসই অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রার সবগুলো লক্ষ্য পূরণ করা চ্যালেঞ্জিং হবে।

“জলবায়ু জরুরি অবস্থার প্রতি সাড়া দিয়ে ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) এর সদস্যরাষ্ট্রগুলোর পক্ষে তাদের বার্ষিক ব্যয়ের ২৫ শতাংশ জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজনের জন্য খরচ করায় ঋণের বোঝা বাড়ছে। ৪৮টি বিপদাপন্ন দেশের পক্ষ থেকে আমি পুনরাবৃত্তি করতে চাই যে, অন্যান্য দেশের কার্বন নিঃসরণের জন্য জলবায়ু বিপদাপন্ন দেশগুলোর কাছ থেকে অত্যধিক ব্যয় আশা করা অন্যায়”। সম্প্রতি প্রকাশিত আইপিসিসির খসড়া ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদন নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং সিভিএফ এর সভাপতি শেখ হাসিনার এই জোরালো মন্তব্য জলবায়ু বিপদাপন্ন দেশগুলোতে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী জনমত গড়ে তুলতে সমুদ্রের নিচে মন্ত্রীসভার বৈঠকের আয়োজন করা মালদ্বীপের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের নেতৃত্বে ২০০৯ সালের ১০ নভেম্বর মালে ঘোষণার মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ)’ এর বর্তমান সভাপতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অন্যদিকে, ২০১৫ সালে ফিলিপাইনে ২০টি দেশ নিয়ে সিভিএফ এর ফোরামের অফিসিয়াল ব্লক হিসেবে যাত্রা শুরু করে ‘ভালনারেবল টোয়েন্টি (ভি২০)’। ভি২০ এরও বর্তমান সভাপতি বাংলাদেশ। সিভিএফ এবং ভি২০ এর বর্তমান সদস্য ৪৮টি জলবায়ু বিপন্ন দেশ।

এ দুটি জোটের মূল লক্ষ্য বিশ্বব্যাপী জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর স্বার্থ তুলে ধরা। সিভিএফ এর সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে বিভিন্ন বৈশ্বিক সম্মেলনে জোরালোভাবে জলবায়ু বিপন্ন দেশগুলোর পক্ষে বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করে যাচ্ছেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস কর্তৃক আয়োজিত এক রুদ্ধদ্বার বৈঠকে শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা বিষয়ক ছয়টি প্রস্তাব পেশ করেন। এছাড়া, গত ১৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কর্তৃক আয়োজিত ‘মেজর ইকোনমিক ফোরাম অন এনার্জি এন্ড ক্লাইমেট’ শীর্ষক উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে তিনি পূর্বে ধারণকৃত ভিডিও বার্তার মাধ্যমে টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কমাতে সুনির্দিষ্ট কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করেন।

গত ৮ জুলাই সিভিএফ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘ভি২০ ক্লাইমেট ভালনারেবল ফাইন্যান্স সামিট’ উদ্বোধন করেন। এ সামিটে ভি২০ সদস্যরাষ্ট্রগুলোর অর্থমন্ত্রী, জি৭ এবং জি২০ এর সদস্যরাষ্ট্রসমূহের মন্ত্রী এবং প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক অর্থায়ন প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং বহুপাক্ষিক ব্যাংকসমূহের প্রতিনিধিগণ ও অন্যান্য অংশীজনেরা অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পেশ করা প্রস্তাবসমূহের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হল বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমিত রাখার লক্ষ্যে কার্বন নিঃসরণ হ্রাসে শিল্পোন্নত দেশগুলোর আরও উদ্যোগী হওয়া; ২০২০-২০২৪ সময়কালে জলবায়ু তহবিলের জন্য উন্নত দেশগুলোর ১০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে এবং অভিযোজন ও প্রশমনের মধ্যে ৫০:৫০ বিতরণ করতে হবে; জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার কমিয়ে নবায়নযোগ্য জ্বালানী ব্যবহারে আরও উদ্যোগী হওয়া; জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতের ফলে বাস্তুচ্যুত মানুষদের পুনর্বাসনের দায়িত্ব সকল দেশের মধ্যে ভাগ করে নিতে হবে ইত্যাদি।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আসার পরপরই প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে ফেরার ঘোষণা দেন। এরই অংশ হিসেবে বিশ্বের চল্লিশ জন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে নিয়ে ‘ক্লাইমেট লিডারস সামিট’ নামে ভার্চুয়াল সম্মেলনের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র। এই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে বাংলাদেশে আসেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এর জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত জন কেরি। বিশ্লেষকেরা এ ঘটনাটিকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বাংলাদেশের বৈশ্বিক উপস্থিতির ইতিবাচক প্রভাব হিসেবে দেখছেন।

কার্বন নিঃসরণের জন্য জলবায়ু তহবিলে অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থাকে কার্বন প্রাইসিং বলা হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশসমূহের শিল্পকারখানা থেকে প্রতি টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণের জন্য ৭৫ ডলার পরিশোধ করতে বলছে। মূলত জি২০ ভুক্ত দেশসমূহকে বিশ্বের ৮০% কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী করা হয় এবং এসব দেশ থেকেই প্রতিশ্রুত ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার জলবায়ু তহবিলের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জোর দিয়ে আসছেন।

জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজনের থিংক ট্যাংক হিসেবে কাজ করা গ্লোবাল সেন্টার অন এডাপটেশন (জিসিএ) এর দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক কার্যালয় বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করাকে অনেকেই বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে দেখেন। ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত জিসিএ এর আঞ্চলিক কার্যালয় দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সরকার, বিভিন্ন শহরের মেয়র, ব্যবসায়ী নেতা, সুশীল সমাজ এবং স্থানীয় কমিউনিটিকে জলবায়ু অভিযোজন সংক্রান্ত কার্যক্রমে সহযোগিতা করবে।

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন বলেন, “বিপদাপন্ন কমিউনিটি জলবায়ু পরিবর্তনের অভিযোজনে কতটুকু উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখাতে পারে, বাংলাদেশ তার আকর্ষণীয় উদাহরণ। জিসিএ এর মাধ্যমে বাংলাদেশ জলবায়ু অভিযোজনে তার সেরা শিখনগুলো বিশ্বের সাথে ভাগ করে নিতে পারবে।”

বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর সম্মানে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ গ্রহণ করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা, সবুজায়ন, জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো, প্রকৃতিভিত্তিক সমাধান, নবায়নযোগ্য জ্বালানী এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী প্রভাব মোকাবেলায় এই ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এর মাধ্যমে বিপদাপন্নতা থেকে সহনশীলতা এবং সহনশীলতা থেকে সমৃদ্ধির দিকে বাংলাদেশের দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন হল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিসিএফ এর সভাপতি হিসেবে প্রতিটি জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশকে ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ এর মত একটি সামগ্রিক পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।

আরও পড়তে পারেন-

অন্যদিকে, এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি যুব পুরস্কার’ ঘোষণা করেছে। ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দুর্যোগের ভয়াবহতা, সম্পদের অমিতাচারী ব্যবহার ও অস্তিত্বের সংকটের প্রেক্ষাপটে ‘প্ল্যানেটারি ইমারজেন্সি’ পাস হয়। এতে বিশ্বকে এখনই এ বিষয়ে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিশ্বের প্রথম স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠন করে যেখানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব সম্পদ থেকে ৪৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। এছাড়াও, অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১) এবং ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ তে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা একটি প্রধান কৌশল হিসেবে স্থান পেয়েছে। সম্পদের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ প্রতি বছর জিডিপির ২ দশমিক ৫ শতাংশ জলবায়ু অভিযোজন ও টেকসই অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় করছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার জলবায়ু কূটনীতিতে বিশেষ নজর রাখছে। বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে নিয়োগপ্রাপ্ত ফরেন সার্ভিস অফিসারদের প্রত্যেকটি ব্যাচে জলবায়ু কূটনীতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত কোর্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারের সাথে সাথে সুশীল সমাজ, যুব সমাজ, স্বেচ্ছাসেবী, গণমাধ্যম এবং প্রাইভেট সেক্টর জাতীয়ভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় কাজ করছে যার স্বীকৃতি মিলছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও।

জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দি আর্থ’ পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও সিভিএফ সভাপতি শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক জলবায়ু রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নিয়ে গেছেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। আসন্ন জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলনে (কপ-২৬) উনি শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, বাংলাদেশকে সিভিএফ এর সভাপতি হিসেবে সকল স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল বিপদাপন্ন দেশের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থাপন করবেন যেখানে জলবায়ু তহবিল এবং জলবায়ু অর্থায়ন নিয়ে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানানোর সুযোগ রয়েছে। সিভিএফ, ভি২০ এবং জিসিএ জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্রসমূহের যোগ্য প্রতিনিধি হিসেবে বাংলাদেশকে কাজ করার যে সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে, তার যথাযোগ্য ব্যবহার সম্ভব আন্তর্জাতিকভাবে লাগাতার জোরালো আহ্বান এবং আলোচনার মাধ্যমে। সরকারের উচ্চ মহলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের কূটনীতিবিদেরা দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় বিভিন্ন আলোচনায় নিয়মিত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আলোকপাত করার মাধ্যমে ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশের বৈশ্বিক অবস্থান আরও দৃঢ় করতে পারেন, যার ফলে জলবায়ু বিপন্ন দেশগুলোর ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা বাড়বে।

মনে রাখতে হবে, শিল্পোন্নত দেশগুলোর অনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়নের ফলে নিঃসরণের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন ত্বরান্বিত হচ্ছে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে কিছু শিল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনে নতুন নতুন উদ্ভাবনী উদ্যোগ নিচ্ছে, কিন্তু তার মাত্রা তাৎপর্যপূর্ণ নয়। অন্যদিকে, অভিযোজন একটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল প্রক্রিয়া। এর খরচ জোগানো স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য কষ্টসাধ্য। অতএব, বিপন্ন দেশগুলোর পক্ষ হতে বাংলাদেশকে শিল্পোন্নত দেশসমূহ হতে জলবায়ু তহবিল এর প্রাপ্য কিস্তি প্রদানে জোর দেওয়ার পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার হ্রাসেও জোর আওয়াজ তুলতে হবে। টেকসই পৃথিবীর জন্য অভিযোজন ও প্রশমন চলতে হবে একই গতিতে।

লেখক: একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত।
ইমেইল: tasneem.fahim@yahoo.com

উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএম

উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com

দেশি-বিদেশি খবরসহ ইসলামী ভাবধারার গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে ‘উম্মাহ’র ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন