।। আরজু মুন জারিন ।।
প্রতি পাঁচ মিনিটে সময় দেখার অভ্যাস আমার। তাই সবসময় হাতে ঘড়ি থাকে। এখন অবশ্য অধিকাংশ মানুষ সময় তার ফোনে দেখে। হাত ঘড়ি যত না ফ্যাশন এর জন্য ততটা সময় দেখে না কেউ আর। আমি দেখি ঘুম ছাড়া বাকী পুরো সময়। কাজের সময় ফোন ব্যাবহার এর অনুমতি নাই,তাই ওখান থেকে হাত ঘড়িতে সময় দেখার অভ্যাস তৈরী হয়ে গিয়েছে।
আর দুইটা কারণেও ঘড়ি পরি-
প্রথমত: আমার মনে হয় ঘড়ি ব্যাক্তিকে স্মার্ট , কনফিডেন্ট লুক দেয়।
দ্বিতীয় হল, নিজেকে সময় আর গ্লোবাল এর সাথে আপটুডেটেড মনে হয়।
প্রতিটি মিনিট সময় প্রতিমূহূর্তে ওয়ার্নিং এর মত টিকটিক করে যেন বলে, স্থান অতিক্রম করার কালে প্রয়োজনীয় কাজ করে ফেল, প্রোকাষ্টিনেশান আর নয়।
যদিও সত্যি অর্থে বলতে গেলে, আমি তেমন ডিসিপ্লিন পারসন নই এখন আর। সকালের কাজ শেষ করতে করতে বিকেল হয়ে যায়। ফজর নামাজ মাঝে মাঝে পড়ি আছর সময়ে।
সময় দেখা বা গ্লোবাল এর সাথে এই যে আপটুডেট থাকা এক অর্থে অর্থহীন মনে হয় তাই মাঝে মাঝে। খবরটা দেখা হয়, কিন্তু নিজেকে সচেতন করা হয় না এই অর্থে।
ইথিওপিয়া, ইন্ডিয়া, বাংলাদেশের কিছু বিজ্ঞাপন দেখি ডোনেশন এর আবেদন এর, এই যে এত গ্লোবাল বিপর্যয় এর খবর শুনি, অভুক্ত শিশু, মানুষ এর ছবি দেখি টিভি-পেপারে, আমার তাতে ভাল খাওয়ার খরচ কমে যায় না। ফ্যাশনেবল জ্যাকেট, সব ই তো কিনি, পরি ভালমত। সারা পৃথিবীর মানুষের কষ্টে কাঁদলে কি হয়। আমি আনন্দ , সুখ কিনতে চাই যতটুকু সামর্থ্য আছে। বাড়তি যা টাকা সেভ করতে পারি নিজের গরীব আত্মীয় স্বজনকে দেই। কখন ও অন্যের আত্মীয়কে কি দেই?
আরও পড়তে পারেন-
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সমাজে পিতা-মাতারা অবহেলিত কেন
- কুমিল্লা থেকে ত্রিপুরা: সংখ্যালঘু নির্যাতনের বেনিফিশিয়ারি কারা?
- ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে ঠাট্টা-তাচ্ছিল্য জঘন্য গুনাহ
হ্যাঁ একবার এক চার্চে দিয়েছিলাম ১৫০০ ডলার (আমার হিসাবে বড় আ্যামাউন্ট)। কেন দিয়েছিলাম এখন ঠিক মনে পড়ছে না। সম্ভবত সেই চার্চের লিডারদের সততা, অন্যকে সাহায্য করা দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। ওরা ছোট গরীব দেশে ত্রাণ পাঠায়। আমার এক প্রতিবেশী এ শুনে রীতিমত রেগে আমার সাথে ঝগড়া করেছিল।খুব দূঃখ করেছিল। বলেছিল, দেশের গরীব মানুষকে দিলেন না কেন, মসজিদে তো দিতে পারতেন; এই বলছিল রাগ করে। তখন আমি ও বেশ অপরাধবোধে ভুগেছিলাম কিছুদিন। মনে হল তাই তো, আমার ই তো প্রচুর গরীব আত্মীয়স্বজন আছে। সবার আগে কি ওদের জন্য করা উচিত না?
আচ্ছা আমরা সাধারণ মানুষ কেন এত স্বার্থপর আত্মকেন্দ্রিক? শুধু নিজের প্রয়োজন, আরাম আয়েশ এ যত মনোযোগ আর চেষ্টা। পাশের বাড়ীর মানুষ এর দূঃখ কষ্ট দেখে ও সুন্দর সফেদ বিছানায় ঠিক ঘুমিয়ে পড়তে পারি।
আমরা এইভাবে তো ভাবতে পারি, যখন যে মানুষটি প্রথম সাহায্যের হাত পেতে আমার সামনে এসে দাঁড়ায় তখন সে আমার প্রায়োরিটি বা তার দরকার সবার আগে, তাইতো আল্লাহর তরফ থেকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে সে সামনে দাঁড়িয়ে।
দয়া, সাহায্যের সময় স্বজনপ্রিয়তা,আত্মীয়তা, ধর্ম জাতীয়তাবোধ এর দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে মানবতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখি না কেন- যদি আমার সামর্থ্য থাকে। মনে করি এইভাবে বিশ্বের দূর-দুরান্তের ক্ষুদ্র গরীব মানুষটির হক আছে আমি সামর্থবান ব্যক্তির কাছে। ওই দরিদ্র ব্যক্তিটি তার একবেলার খাওয়ার, আশ্রয় আমার কাছে প্রত্যাশা করতে পারে।
আমরা সবাই এই গ্লোবাল পরিবার এর বাসিন্দা। একে অপরের প্রয়োজন,অভাব পূরণ করে পৃথিবীকে আরো সুন্দর সম্প্রীতি উপহার দিতে পারি। আর এটা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
সবার অনেক সুন্দর, সুখী,সমৃদ্ধ জীবন কামনায়।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ