দুই শ কেজি স্বর্ণ ও দুই হাজার কেজি অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করে বিশ্বের সর্ববৃহৎ কোরআনের কপি তৈরিতে কাজ করছেন পাকিস্তানি শিল্পী শহিদ রাসাম। ২০১৭ সালে শুরু করা অভিনব এ শৈল্পিক কাজে দুই শতাধিক সহযোগী তাঁকে এ কাজে সহযোগিতা করছেন। ২০২৬ সালে তা সম্পন্ন হওয়ার আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট করাচি আর্টস কাউন্সিল।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ কোরআনের কপির সামান্য অংশ অক্টোবরে শুরু হওয়া এক্সপো ২০২০ দুবাই প্রদর্শনীতে আছে। পাকিস্তানি শিল্পী ও চার শ শিক্ষার্থীর টিম ঐতিহাসিক এ শৈল্পিক কাজের আঞ্জাম দিয়েছে। প্রকল্পের সহায়তা করে দুবাই ভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান পাকিস্তান অ্যাসোসিয়েশন দুবাই (পিএডি)।
তুরস্ক ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ডেইলি সাবাহের খবরে জানা যায়, অ্যালুমিনিয়াম ও স্বর্ণের প্রলেপ দিয়ে ক্যানভাসে খোদাই করে কোরআনের সর্ববৃহৎ কপি তৈরি করা হয়। ইসলামের ১৪ বছরের ইতিহাসে সাধারণত কাগজ, কাপড় বা চামড়ার ওপর পবিত্র কোরআন খোদাইয়ের কথা জানা যায়। তাই এবারই প্রথম স্বর্ণ ও অ্যালুমিনিয়ামে খোদাই করে পবিত্র কোরআনের ঐতিহাসিক কপিটি তৈরি করা হয়।
শিল্পী রাসাম (৪৯) জানান, পবিত্র কোরআনের সর্ববৃহৎ কপি তৈরির প্রকল্পটি আমার জীবনের অন্যতম প্রকল্প। ফ্রেম ছাড়া পবিত্র কোরআনের কপিটির দৈর্ঘ্যে ৮.৫ ফুট এবং প্রস্থে ৬.৫ ফুট। এর মধ্যে ৮০ হাজার শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। প্রতি পৃষ্ঠায় ১৫০ শব্দ থাকবে। আর মোট ৫৫০ পৃষ্ঠা থাকবে। এতে দুই শ কেজি স্বর্ণ ও দুই হাজার কেজি অ্যালুমিনিয়ান ব্যবহৃত হয়।
এর আগে ২০১৭ সালে আফগানিস্তানে তৈরি হয়েছিল পবিত্র কোরআনের সর্ববৃহৎ কপি। তা দৈর্ঘ্যে ৬ দশমিক ৫ ফুট এবং প্রস্থে ৪ দশমিক পাঁচ ফুট। বর্তমানে তা রাশিয়ার কাজান শহরের কুল মসজিদে রয়েছে।
কোরআনের প্রথম দুই পৃষ্ঠা তৈরিতে শিল্পী রাসামের দুই বছর সময় ব্যয় হয়। এ সময় প্রতিদিন ১০ ঘণ্টা করে কাজ করতেন তিনি। অনেক অধ্যায় শেষ হলেও দুবাই এক্সপো ২০২০-এ কোরআনের শুধুমাত্র একটি অধ্যায় প্রদর্শনে রাখা হয়। পাঁচ পৃষ্ঠায় লেখা সুরা আর রহমান অধ্যায়টি প্রদর্শনীর পাকিস্তান প্যাভিলিয়ন আছে।
আরও পড়তে পারেন-
- বৈশ্বিক জ্বালানি সংকটের নেপথ্যের ভূরাজনীতিৎ
- সমাজে পিতা-মাতারা অবহেলিত কেন
- জান্নাতি নারীদের সর্দার হবেন যারা
- সামাজিক অবক্ষয় রোধে নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে
- অমুসলিমের সাথে মুসলমানদের আচরণ কেমন হবে?
শিল্পী রাসাম করাচি ভিত্তিক চারুকলা প্রতিষ্ঠান দ্য আর্টস কাউন্সিল ইনস্টিটিউট অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সম্পূর্ণ ভিন্নতর নতুন এ কর্ম উপহার দেওয়ায় প্রশংসায় ভাসছেন এ শিল্পী। নানারকম সৃজনশীল শৈল্পিক কর্মের মাধ্যমে সবাইকে তাক লাগিয়ে আসছেন তিনি।
তিনি বলেন, পবিত্র কোরআনের সর্ববৃহৎ কপিতে আরবি, তুর্কি ও ইরানি শিল্পকলার প্রভাব রয়েছে। প্রথমে তারা তুর্কি, আরবি ও ইরানি ডিজাইন নিয়ে অধ্যয়ন করেন। এরপর নিজেরা নতুন ডিজানই তৈরি করেন। তাই এটি শৈল্পিক অনুপ্রেরণা থেকে তৈরি। তা শুধুমাত্র মুসলিমদের আকর্ষণ করবে এমন নয়। বরং সব ধর্মের শিল্পীরা তাতে আগ্রহী হবে। এটি ইসলামী শিল্পকলা ও সংস্কৃতি প্রসারে ভূমিকা রাখবে।
পাকিস্তানি এ শিল্পী আরো জানান, তিনি সব সময় চ্যালেঞ্জ নিতে ভালোবাসেন। আর তাই সর্বদা নিত্য-নতুন বিষয় নিয়ে কাজ করেন। চার বছর আগে এ প্রকল্পটি তিনি শুরু করেন। ৫৫০ পৃষ্ঠায় ৭৭ হাজার ৪৩০টি শব্দ ব্যবহার করে ছয় শ ক্যানভাসে তা তৈরির কাজ চলছে। প্রাকৃতিক মূল্যবান পাথর ও অ্যালুমিনিয়ামে স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া পবিত্র কোরআনের কপিটি আগামী এক হাজার বছর স্থায়ী হবে বলে জানান তিনি।
অনন্য শৈল্পিক কারুকার্য তৈরি করে শহিদ রাসাম বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন। এর আগে রাসাম অ্যালুমিনিয়াম ও স্বর্ণের প্রলেপ দেওয়া প্লটে আল্লাহর ৯৯ নাম লিখে সবার নজর কাড়েন।
বিশ্ব প্রদর্শনীর আয়োজক হিসেবে দুবাই এক্সপো ২০২০ গত বছরের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে তা পিছিয়ে এ বছরের ১ অক্টোবরে শুরু হয়। ২০২২ সালে ৩১ মার্চ আন্তর্জাতিক এ প্রদর্শনী শেষ হবে। শিল্প-সংস্কৃতি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রদর্শনীতে বিশ্বের ১৯২টি দেশ অংশ নেবে।
সূত্র: ডেইলি সাবাহ।
উম্মাহ২৪ডটকম: আইএএ