আপনি কি মনে করেন, সারাটা বছর গুহায় লুকিয়ে থেকে একটি মাসের জন্য নবিপ্রেমী হয়ে আত্মপ্রকাশ করাতে রাব্বি আল্লাহ আপনার প্রতি ভীষণ সন্তুষ্ট হন? প্রতিদিনের রুটিনে সুন্নাহকে কবর দিয়ে আশেকে রাসূলের ঝান্ডা হাতে নবীর জন্মদিনের জানান দেওয়াতে আপনার আল্লাহ্ ভীষণ খুশি হন? কখনোই খুশি হবেন না, বরং রবের ক্রোধের শিকার হতে পারি আমরা?
তবে হ্যাঁ, আপনি যদি আপনার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালবেসে দৈনন্দিন জীবন কে সুন্নাতের রঙ্গে রাঙ্গিয়ে রাখুন, তবেই রব্বের সন্তুষ্টি হাসিল করতে পারবেন।
প্রিয় নবির প্রতি ভালোবাসাকে শুধু একমাসের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বছরজুড়েই ভলোবাসবো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ভালোবাসার আরেকটি নিদর্শন হলো সুন্নাহের অনুসরণ ও অনুকরণ করা।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণ ও অনুকরণকারীকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা ও ভালোবাসেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা বলেন-
‘(হে রাসুল! আপনি) বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ কর; তবেই আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ [১]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরলে একশো শহীদের সওয়াব রয়েছে। সুবহানাল্লাহ! পাঁচ দশজন শহীদের সওয়াব না, একশো শহীদের সওয়াব। এত্তো সওয়াব দেওয়ার কারণ হলো ফেতনা – ফ্যাসাদের যুগে সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে ধারণকারীদের পদে পদে প্রতিকূল অবস্হার সম্মুখীন হতে হয়।
আরও পড়তে পারেন-
- উলামায়ে কেরামের প্রতি মুফতি শফী (রাহ.)এর দরদমাখা নসিহত
- কম্পিউটার চিপ শিল্প: জলবায়ুর উপর ফেলছে ভয়ঙ্কর প্রভাব
- ইরানি বিজ্ঞানীকে যেভাবে হত্যা করে ইসরায়েল
- ব্যতিক্রমী এক ইসলামী আইন গবেষক
- ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে ঠাট্টা-তাচ্ছিল্য জঘন্য গুনাহ
আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের বিশৃঙ্খলাকালে অর্থাৎ তাদের পদস্খলনের সময় যে ব্যক্তি আমার সুন্নাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে রাখবে, তার জন্য একশো শহীদের সওয়াব রয়েছে। [২]
মানবজীবনের সকল ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহর অনুসরণ না করে শুধুমাত্র মৌখিকভাবে ভালোবাসার দাবী করাটা কী একেবারেই অযৈাক্তিক নয়?
নবীপ্রেমিকের কাজই তো তাঁর আনুগত্য করা। সুন্নাহ এর উপর আমল করা। যত বাঁধা আসুক না কেন চলার পথে ছোট বড় কোন সুন্নাহ পরিত্যক্ত না করা। আর এভাবেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি আমাদের সত্যিকারের মহব্বত ভালোবাসা প্রদর্শন করা। মনে রাখবেন,প্রিয় নবির ক্ষেত্রে নিছক ভালোবাসা যথেষ্ট নয়, আমাদের জীবনের সমস্ত কিছুর উপর রাসুলের ভালোবাসাকে সবার আগে প্রাধান্য দিতে হবে এবং তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটতে হবে। এমনকি নিজের মা- বাবা, স্ত্রী – সন্তান, বন্ধু – বান্ধব, প্রতিবেশী, আত্মীয় – স্বজন সহ সমস্ত মানুষ থেকে যদি প্রিয় নবিকে আমরা বেশি ভালোবাসতে না পারি তবে কখনোই পূর্ণ মু’মিন হতে পারবো না। আমরা কী আসলেই ভালোবাসার ক্ষেত্রে সবার থেকে বেশি প্রিয় নবিজিকে কখনো প্রাধান্য দিয়ে দেখেছি? নাকি শুধু মুখে মুখে বলেই সীমাবদ্ধ রেখেছি? প্রশ্নটা নিজের কাছেই করুন। শুরুটা হোক নিজ থেকেই।
আনাস রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু বলেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার নিকট তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি ও সমস্ত মানুষ থেকে প্রিয় হব। [৩]
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মুখে মুখে ভালোবাসি বলে তাঁর সুন্নাহের অনুসরণ-অনুসরণ না করলে, তাঁর আদর্শকে বুকে ধারণ না করলে, মানবজীবনে প্রতিটি ক্ষেত্রে সুন্নাহ প্রয়োগ না করলে,সবকিছুর চেয়ে বেশি প্রিয় নবিকে ভালো না বাসলে আপনাকে আর যায় হোক, নবিপ্রেমিক বলা যাবে না।
ইসলামী কিছু দল যখন বিশ্বনবির অপমানকারীদের প্রতি চরম নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়ে প্রতিবাদ করে তখন আপনাকে দেখি চুপ থাকতে । তখন কীভাবে চুপ থাকেন? কবি ভাষায়-‘রাসুলের অপমানে যদি না কাঁদে তোর মন,মুসলিম নয় মুনাফিক তুই, রাসুলের দুশমন’!
ইয়া রব্ব! আমাদের হৃদয়কে প্রিয় নবিজির ভালোবাসা দিয়ে পরিপূর্ণ করে দাও। দৈনন্দিন জীবনে ফরজের পাশাপাশি সুন্নাহের উপর পরিপূর্ণ আমল করার তাওফিক দাও।
فداك أبي وأمي يارسول الله صلي الله عليه وسلم
// ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কোরবান হোক।
[৯ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৩ হিজরী]
তথ্যসূত্র:
১. সুরা ইমরান : আয়াত ৩১
২. বায়হাকী – মেশকাত, পৃঃ ৩০
৩. সহিহ বুখারী : ১৫
– যাইনাব বিনতে মুহাম্মাদ আলী, ইসলামবিষয়ক গ্রন্থ এবং পত্রপত্রিকার কলাম লেখক।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ