সাঈদ মুকসিদ: ফজরের সালাত আদায়ের পর ঘুম দেয়া ইদানিং আমার নিত্য অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আগেকার সময়ে আমি কখনোই ফজরের পর ঘুমাতে যেতাম না। বই পড়তাম, কোরান তেলাওয়াত করতাম অথবা কাজে বের হয়ে পড়তাম। ইদানিং ফজরের পর চোখেতে আপনা-আপনি ঘুম জড়িয়ে আসে।
ব্যাপারটা কয়েকদিন ধরেই হয়ত মা লক্ষ্য করেছিলেন বিধায়, আজকে ফজরের পর গরম দুধ নিয়ে মাকে আসতে দেখি। তিনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন, ‘দুধটুকু খেয়ে নে বাবা।’ যাই হউক মায়ের কথা ত আর ফেলতে পারিনা। তাই অল্প অল্প করে খেয়ে নিলাম। মা আমায় কিছু বলতে চাচ্ছিলেন, তাই আমি মাকে সরাসরি জিজ্ঞাস করে নেই। তারপর মা বললেন, ‘আমি সপ্তাহ খানিক ধরে তোমার ব্যাপারে লক্ষ্য করে আসছি যে, তুমি দিনে দিনে সুন্নাহ থেকে দূরে সরে যাচ্ছো।’
মায়ের কথা শুনে থমকে গেলাম । দুধের গ্লাসটা রেখে দিয়ে ভাবনায় পড়ে গেলাম। মা পুনারায় কিছুটা হতাশ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘সুন্নাহ হচ্ছে ফজরের পর
না ঘুমানো।’ আমাদের প্রিয় রাসুল সা. দোয়া করেছেন-
‘হে আল্লাহ, আমার উম্মতের জন্য দিনের শুরু বরকতময় করুন।’ বর্ণনাকারী বলেন, ‘এ জন্যই রাসুল (সা.) কোনো যুদ্ধ অভিযানে বাহিনী পাঠানোর সময় দিনের শুরুতে পাঠাতেন।’
সাখর রা. ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তিনিও তাঁর ব্যবসায়িক কার্যক্রম ভোরবেলা শুরু করতেন। এতে তাঁর ব্যবসায় অনেক উন্নতি হয় এবং তিনি সীমাহীন প্রাচুর্য লাভ করেন।’ (আবু দাউদ :২৬০৬)।
আরও পড়তে পারেন-
- উলামায়ে কেরামের প্রতি মুফতি শফী (রাহ.)এর দরদমাখা নসিহত
- কম্পিউটার চিপ শিল্প: জলবায়ুর উপর ফেলছে ভয়ঙ্কর প্রভাব
- ইরানি বিজ্ঞানীকে যেভাবে হত্যা করে ইসরায়েল
- ব্যতিক্রমী এক ইসলামী আইন গবেষক
- ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে ঠাট্টা-তাচ্ছিল্য জঘন্য গুনাহ
সালফরা ফজরের পর ঘুমানোকে মাকরুহ মনে করেতেন। উরওয়া ইবনু যুবাইর রহ. বলেন, যুবাইর রা. তাঁর সন্তানদেরকে ভোরবেলা ঘুমানোর ব্যাপারে নিষেধ করতেন। উরওয়া রহ. বলেন-
‘আমি যখন কারো সম্পর্কে শুনি, সে ভোরবেলা ঘুমায় তখন তার প্রতি আমি আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।’ [মুসান্নাফ ইবনু আবি শাইবা, ৫/২২২]
আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস রা. তাঁর এক সন্তানকে ভোরবেলা ঘুমাতে দেখে বলেছিলেন-
‘ওঠো, তুমি কি এমন সময়ে ঘুমিয়ে আছ, যখন রিজিক বণ্টন করা হচ্ছে?’ (যাদুল মাআ’দ- ৪/২৪১)।
মা আরো বলেন, ‘আল্লাহ তা’য়ালা যখন বরকত দেন, সেই সময়টাতে তুমি ঘুমিয়ে থাকো। শোনো যদি জীবনে প্রাচুর্য আনতে চাও, তাহলে ফজরের পর আর ঘুমাবে না। আশা করি আমার স্নেহের পুত্র মায়ের কথা বুঝতে পেরেছে।’
বিছানা থেকে উঠে মাকে বললাম, ‘স্নেহের পুত্রটা এখন অনেক বড় হয়েছে এবং সে তার মায়ের কথা বুঝতে পেরেছে।’ মা মুচকি হেসে বললাম, ‘তা এখন কোথায় যাওয়া হচ্ছে?’ মাকে বললাম, ‘চাষের জমিতে’।
মহান আল্লাহ তা’য়ালা প্রত্যেককে এই বরকতময় সময়টাকে সুন্দরভাবে কাজে লাগানোর তাওফিক দিন ও আমাদেরকে রাসূল সা. এর প্রতিটি সুন্নাহ সঠিকভাবে আদায় করবার তাওফিক দিন। আমিন।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ