মানুষ এখন ফ্যাশনপ্রেমী। নিজেকে একটু ফুটিয়ে তোলার জন্য মানুষ কত কিছুই না করে! দুনিয়ার এই মিথ্যা মোহ মানুষকে ভুলিয়ে দেয় ধর্মীয় বিধি-নিষেধগুলোও। কেউ কেউ আবার নিজের ঠুনকো চিন্তাধারাকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে কোরআন-হাদিস অবমাননা করে বসে। ইসলামী রীতিনীতিকে ভাবতে থাকে পুরনো ভাবধারা, যা সেই অহংকারী লোকদের দ্রুত এগিয়ে নেয় ধ্বংসের পথে। তারা শুধু আখিরাতেই ক্ষতিগ্রস্ত নয়, দুনিয়াতেও নিজের অজান্তে তারা হারায় অনেক কিছু।
তেমনই একটি ট্রেন্ড টাখনুর নিচে কাপড় পরা, যা শরিয়তে কঠিকভাবে নিষিদ্ধ। দুঃখের বিষয় হলো, বেশির ভাগ মানুষই এই কঠিন গুনাহে লিপ্ত। পার্থক্য হলো, কেউ গুনাহ জেনে লজ্জিত, কেউ জেনেও এটিকে পুরনো চিন্তাধারা ভাবছেন, আবার কেউ জানেনই না। অথচ অতিমাত্রায় ফ্যাশন কখনো কখনো ধ্বংসের কারণও হয়।
মুসলিম পুরুষদের জন্য টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরা নিষিদ্ধ। যারা লুঙ্গি বা পাজামা টাখনুর নিচে পরবে তাদের ভয়াবহ পরিণতির কথা বলেছেন স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। টাখনুর নিচে কাপড় পরা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ ও পরিণতি কী? এ সম্পর্কে হাদিসের দিকনির্দেশনাই বা কী?
পুরুষদের জন্য টাখনুর নিচে কাপড় পরা হারাম, কবিরা গুনাহ এবং জাহান্নামে যাওয়ার কারণ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ হলো টাখনুর নিচে কাপড় পরা যাবে না। তা নিষিদ্ধ হওয়ার জন্য এ নির্দেশনাই যথেষ্ট। তারপরও টাখনুর নিচে কাপড় পরা বিষয়ে নিষিদ্ধের কারণ, সতর্কতা ও শাস্তির বিষয়টি হাদিসের একাধিক বর্ণনায় উঠে এসেছে। তাহলো-
১. গোড়ালির নিচের অংশ জাহান্নামে যাবে
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ইজার (লুঙ্গি/পাজামা) বা পরিধেয় কাপড়ের যে অংশ পায়ের গোড়ালির নিচে থাকবে; সে অংশ জাহান্নামে যাবে।’ (বুখারি, হাদিস- ৫৭৮৭)।
২. আল্লাহ রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহ কেয়ামতের দিন সেই ব্যক্তির দিকে (দয়ার) দৃষ্টি দেবেন না, যে ব্যক্তি অহংকার করে ইযার (লুঙ্গি/পাজামা) বা পরিধেয় বস্ত্র ঝুলিয়ে (টাখনুর নিচে) পরেছে।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)।
আরও পড়তে পারেন-
- উলামায়ে কেরামের প্রতি মুফতি শফী (রাহ.)এর দরদমাখা নসিহত
- কম্পিউটার চিপ শিল্প: জলবায়ুর উপর ফেলছে ভয়ঙ্কর প্রভাব
- ইরানি বিজ্ঞানীকে যেভাবে হত্যা করে ইসরায়েল
- ব্যতিক্রমী এক ইসলামী আইন গবেষক
- ইবাদতের গুরুত্ব নিয়ে ঠাট্টা-তাচ্ছিল্য জঘন্য গুনাহ
হযরত আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তিন ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলবেন না, তাদের দিকে ফিরে তাকাবেন না। এমনকি তাদের গুনাহ থেকেও পবিত্র করবেন না। বরং তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথাটি তিনবার বলেছেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, তারা কারা? যাদের মুক্তির কোনো পথ নেই। তিনি বললেন, তারা হলো-
যে ব্যক্তি পায়ের গোড়ালির নিচে কাপড় (লুঙ্গি/প্যান্ট/পাজামা) ঝুলিয়ে পরে।
যে ব্যক্তি মিথ্যা কসম/শপথ করে ব্যাবসার পণ্য বিক্রয় করে।
যে ব্যক্তি উপকার করার পর আবার খোঁটা দেয়।’ (মুসলিম, তিরমিজি, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ)।
৩. মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দেবেন
হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন অথবা আবুল কাসিম বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি আকর্ষণীয় জোড়া কাপড় পরতো আর চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে পথ অতিক্রম করতো; হঠাৎ আল্লাহ তাকে মাটির নিচে ধ্বসিয়ে দেন। কেয়ামত পর্যন্ত সে এভাবে ধ্বসে যেতে থাকবে।’ (বুখারি, হাদিস নং- ৫৭৮৯)।
আমাদের উঠতি বয়সী ছেলেদের মধ্যে এ ধরনের অভ্যাস খুব বেশি দেখা যায়। সাধারণত তারা বিভিন্ন সিনেমার হিরোদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এমনটি করে। এ ব্যাপারে তাদের সচেতন করা মা-বাবা, ভাই-বোনসহ সব আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবেরই দায়িত্ব।
অনেকের ধারণা, শুধু নামাজের সময়ই টাখনুর ওপর কাপড় উঠাতে হয়, অন্য সময় টাখনুর নিচেও পরা যায়। এটাও ভুল ধারণা। কারণ রাসুল (সা.) বলেছেন, ইজারের (লুঙ্গি) বা পরিধেয় বস্ত্রের যে অংশ পায়ের গোড়ালির নিচে থাকবে, সেই অংশ জাহান্নামে যাবে। (বুখারি, হাদিস- ৫৭৮৭)
আমাদের অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, আমরা টাখনুর নিচে কাপড় পরলে ধর্মের কী অসুবিধা? তার সরল উত্তর হলো, অসুবিধা ধর্মের নয়, অসুবিধা আমাদের নিজেদের। কারণ দুনিয়াতেও টাখনুর নিচে কাপড় পরার অপকারিতা কম নয়। পুরুষের পায়ের টাখনুতে থাকে টেস্টোস্টেরন নামক যৌন হরমোন, যা সঠিকভাবে কাজ করার জন্য প্রাকৃতিক আলো-বাতাসের প্রয়োজন। টাখনুকে ঢেকে রাখলে টেস্টোস্টেরন হরমোন শুকিয়ে যায়। যার প্রভাবে শরীরে অনেক রকম সমস্যা দেখা দেয়। শুক্রাণু কমে যায়। ফলে সহজে বাচ্চা হয় না। এ সমস্যাটি আমাদের সমাজে মহামারি আকার ধারণ করছে। তা ছাড়া টেস্টোস্টেরনের অভাব মস্তিষ্ক ‘ঘোলাটে’ করে দেয়। এতে মনোযোগ নষ্ট হয়। স্মৃতিশক্তিও কমে আসে ধীরে ধীরে।
হয়তো এ কারণেই রাসুল (সা.) বিভিন্ন হাদিসে টাখনুর নিচে কাপড় পরাকে নিষিদ্ধ করেছেন।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ
উম্মাহ পড়তে ক্লিক করুন-
https://www.ummah24.com