।। মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা ।।
কোনো ইচ্ছা পূরণ না হলে বা কাজের আশানুরূপ ফল না পেলে যে মানসিক অবসাদের সৃষ্টি হয়, তা-ই হতাশা। লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব না হলে হাল ছেড়ে দেওয়ার প্রবণতা হতাশার লক্ষণ। মাঝেমধ্যে সম্পর্কের কারণেও মানুষ হতাশ হয়ে যায়। পরিবারের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়া, বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক, এমনকি সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো না হলে এক পর্যায়ে হতাশায় ডুবে যান অনেকে, যা একটি মানবীয় দুর্বলতা। মহান আল্লাহ এই দুর্বলতাকে প্রশ্রয় দিতে নিষেধ করেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা হীনবল হয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না; তোমরাই বিজয়ী যদি তোমরা মুমিন হও।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৯)
এই আয়াত একটি যুদ্ধের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছে। তবে এখানে মুসলমানদের সফলতার মূল ভিত্তি এবং তাদের শক্তির মূল উৎস বলে দেওয়া হয়েছে। আর তা হলো ঈমান। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে এবং সব বিষয়ে আল্লাহর ওপরই ভরসা করে, দুনিয়ার কোনো দুঃখ, বিপদ, রোগব্যাধি তাকে হীনবল করতে পারে না। সব পরিস্থিতিতে সে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে ধৈর্যধারণের শক্তি পাবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদাররা, তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৩)
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
এর এক আয়াত পর মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জীবন-সম্পদ ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। তারাই ধৈর্যশীল, বিপদাপদ গ্রাস করলে যারা বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের ওপর আছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত। আর তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৫৫-১৫৭)
অতএব, সাময়িক বিপদাপদ, দুঃখ-দুর্দশায় ভেঙে না পড়ে ধৈর্যের সঙ্গে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া উচিত। মহান আল্লাহ নিশ্চয়ই সব ঠিক করে দেবেন এবং সাময়িক কষ্টের বিনিময়ে তাঁর রহমত ও মাগফিরাতের কোলে স্থান দেবেন।
অনেকে নানা কারণে নিজেকে গুরুত্বহীন, দুর্বল ও অসহায় মনে করে হতাশ হয়ে পড়ে। অথচ গুরুত্বহীন, দুর্বল ও অসহায় মানুষের জন্য প্রিয় নবী (সা.)-এর সুসংবাদ আছে। হারিস ইবনে ওয়াহাব খুজায়ি (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘আমি কি তোমাদের জান্নাতি মানুষের পরিচয় বলব না? তারা দুর্বল ও অসহায়। কিন্তু তারা যদি কোনো ব্যাপারে আল্লাহর নামে কসম করে বসে, তাহলে আল্লাহ তা পূরণ করে দেন। আমি কি তোমাদের জাহান্নামি মানুষের পরিচয় বলব না? তারা রূঢ় স্বভাব, দুষ্ট প্রকৃতির এবং অহংকারী। এরাই জাহান্নামি।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৯১৮)
হতাশা একটি মানবিক অনুভূতি, যার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি কখনো মানসিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে। মানুষের মেজাজ খিটখিটে করে। একজনের রাগ অন্যের ওপর মেটায়। মন খারাপ করে বসে থাকে। মানুষ উদাসীন হয়ে পড়ে। কথা বলতে তাড়াহুড়া করে। এর সব কটি মানুষের দৈনন্দিন জীবনের পাশাপাশি ঈমান-আমলের জন্য ক্ষতিকর। তাই প্রিয় নবী (সা.) হতাশা ও হীনবলতা থেকে মুক্ত থাকার জন্য বেশি বেশি দোয়া করতেন। মহান আল্লাহ সবাইকে হতাশা ও দুশ্চিন্তামুক্ত থাকার তাওফিক দান করুন।
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ