সাধারণত মনে করা হয়ে থাকে যে সমস্ত প্রাণীদের শরীরের আকার যত বড়, তাদের মস্তিস্ক ততটাই বড়। আর এক্ষেত্রে বড় মস্তিস্ক মানে উন্নত এবং জটিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সম্প্রতি স্টোনি ব্রুক বিশ্ববিদ্যালয় এবং ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক প্রাণী আচরণ গবেষণা কেন্দ্রের একদল বিজ্ঞানী মস্তিষ্কের আকারের বিবর্তন নিয়ে গবেষণা করেছেন।
আন্তর্জাতিক সেই ২২ জন বিজ্ঞানীর দলে জীববিদ্যা থেকে শুরু করে রাশিবিজ্ঞান, নৃতত্ত্ববিদ্যা বিভাগের গবেষকরাও ছিলেন। জীবিত এবং অবলুপ্ত মিলিয়ে ১৪০০ স্তন্যপায়ী প্রাণীর তথ্য নিয়ে এই গবেষণা করা হয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে এরপর মস্তিষ্কের আকারের সাথে সেই প্রাণীদের দেহের আকারের তুলনামূলক বিচার করা হয়। সেই সাথে তাদের বুদ্ধিমত্তারও বিচার করা হয়। তাদের এই গবেষণা সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে Science Advances জার্নালে।
কীভাবে করা হয়েছে এই মস্তিকের আকারের গবেষণা?
এই গবেষণায় দেখার চেষ্টা করা হয়েছে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ক্ষেত্রে মস্তিস্ক এবং দেহের আকারের কিরূপ পরিবর্তন হয়েছে। আর এই কাজে ব্যবহার করা হয়েছে ১৫ কোটি বছর পুরোনো বিবর্তনের ইতিহাসও। ১০৭টি জীবাশ্ম থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে পৃথিবীর সব থেকে পুরোনো তিমি এবং বাঁদরের জীবাশ্মও রয়েছে। এই গবেষণা করতে গিয়ে দেখা গেছে, বড় মস্তিষ্কের প্রাণী সমূহ যেমন মানুষ, ডলফিন বা হাতি বিবর্তনের বিভিন্ন ধাপে বিভিন্ন অনুপাতে দেহ এবং মস্তিষ্কের আকার পরিবর্তন করেছে।
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
হাতির ক্ষেত্রে দেহের আকার বাড়ার সাথে সাথে মস্তিষ্কের আকার বেড়েছে। অপরদিকে ডলফিন নিজের দেহের আকার কমিয়েছে কিন্তু মস্তিস্ক আরও বড় এবং উন্নত হয়েছে। অন্যদিকে মানুষের পূর্বপুরুষ বাঁদর ক্রমে মস্তিষ্কের আকার বাড়িয়েছে, সাথে বিভিন্নভাবে দেহের আকার পরিবর্তন করেছে। মানুষের পূর্বপুরুষদের তুলনায় আধুনিক মানুষের শরীরের আকার কমেছে কিন্তু মস্তিষ্কের আকার অনেকটা বেড়েছে। এই গবেষণায় এইসমস্ত তথ্যের বিচারে স্তন্যপায়ী প্রাণীদের বিবর্তনের সময়রেখাতে দেহের ও মস্তিষ্কের আকারের অনুপাতের তুলনামূলক বিচার করা হয়েছে।
কী কী জানা গেছে এই গবেষণায়?
বিবর্তনের ইতিহাসে বহু পুরোনো একটি মতবাদ অনুসারে প্রাণীর দেহের আকারের সাথে মস্তিষ্কের আকারের সম্পর্ক আছে এবং তা সেই প্রাণীর বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেয়। এই গবেষণায় প্রধানত এই মতবাদটিকে প্রশ্ন করা হয়েছে। দেখা গেছে এই মতবাদটি মোটেই এতটা সোজাসুজি বা সহজ সরল নয়। গবেষণায় প্রকাশ যে ক্যালিফোর্নিয়া সি লায়ন এর ক্ষেত্রে দেহের উপর চাপের প্রভাবে তাদের মস্তিষ্ক এবং দেহের আকারের অনুপাত কমের দিকে।
আর এর কারণ হল, বিবর্তনের ক্ষেত্রে তাদের শুধু দেহের আকার বেড়েছে, কিন্তু মস্তিস্ক সেই হারে বাড়েনি। এই গবেষণার সাথে যুক্ত বিজ্ঞানী কামরান সাফি জানালেন, “এই গবেষণা এতদিন ধরে চলে আসা মস্তিষ্কের আপেক্ষিক আকারের সাথে বুদ্ধিমত্তাকে সমার্থক হিসেবে দেখার ধারণা বদলে দিয়েছে। দেখা গেছে অনেক ক্ষেত্রে বড় মস্তিষ্কের কারণ হল বিবর্তনের কোনো ধাপে তাদের দেহের আকার ছোট হয়ে যাওয়া। এর সাথে বেশি বুদ্ধিমত্তার কোনো সংযোগ নেই। ”
এই গবেষণাতে আরও একটি তথ্য উঠে এসেছে। দেখা গেছে স্তন্যপায়ীদের ক্ষেত্রে মস্তিষ্কের আকার উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে পৃথিবীর বিবর্তনের ইতিহাসে ঘটা দুটি বিপর্যয়কর ঘটনার পর। তার মধ্যে একটি হল ৬.৬ কোটি বছর আগের গণবিলুপ্তি এবং প্রায় ৩ কোটি বছর আগের আবহাওয়ার বিপুল পরিবর্তন। ক্রিটেসিয়াস যুগের শেষে ঘটা গণবিলুপ্তিতে ডাইনোসরের অবলুপ্তির পর ইঁদুর, বাদুড় এবং বিভিন্ন মাংসাশী প্রাণীদের দেহ এবং মস্তিষ্কের আকারের অনুপাতের ব্যাপক পরিবর্তন হয়।
তার ৩ কোটি বছর পর আবহাওয়ার আমূল পরিবর্তন হয়ে অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা আবহাওয়াতে সীল, তিমি, ভালুক ইত্যাদি প্রাণীদের দেহ এবং মস্তিষ্কের আকারের অনুপাতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। বিজ্ঞানীদের মতে দেহ এবং মস্তিষ্কের আকারের অনুপাতের সাথে বুদ্ধিমত্তার বিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে। তবে তা সঠিকভাবে বুঝতে গেলে আরও গভীরভাবে স্নায়ু-শারীরবৃত্তীয় কার্যকলাপ নিয়ে গবেষণা প্রয়োজন। সূত্র: সালামওয়েবটুডে।
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ