।। মুহাম্মাদ হাবীব আনওয়ার ।।
গ্রীষ্মের ঝাঁঝালো দাবদাহের পরে বৃষ্টির হিম শীতল ঠাণ্ডা কার না ভালো লাগে। উত্তপ্ত ধরণীতে বুলিয়ে দেয় স্বস্তির পরশ। যৌবনে ভাটা পড়া খালবিলে ভরা যৌবন ফিরিয়ে দেওয়া সময়টার নাম হলো বর্ষাকাল বা বৃষ্টিকাল। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন, ‘তুমি পৃথিবীকে নিষ্প্রাণ দেখতে পাও। এরপর আমি যখন এর ওপর পানি বর্ষণ করি তখন তা সক্রিয় হয়ে ওঠে ও ফেঁপে ফুলে ওঠে এবং প্রত্যেক প্রকার উদ্ভিদের সবুজ শ্যামল শোভামণ্ডিত জোড়া উৎপন্ন করে’। (সূরা হজ, আয়াত- ৫)।
বর্ষা মানেই গুঁড়িগুঁড়ি কিংবা ঝুম বৃষ্টির রিমিঝিম আওয়াজ। আবার কখনো রাতদিন অবিরাম ঝড়ছে শ্রাবণ ধারা। বর্ষা কিংবা বৃষ্টির দিনে মানুষের মনে রোমাঞ্চ তৈরি হয়। কখনও বৃষ্টিতে ভিজে আনন্দে মেতে উঠা আবার কখনো বারান্দায় দাঁড়িয়ে টিনের চাল বেয়ে পড়া বৃষ্টিতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় সুখবোধ করে। জানালার পাশে বসে ঝালমুড়ি কিংবা ধোঁয়া উঠানো চা-কফি নিয়ে গল্পের বই অথবা উপন্যাসে ডুব দেওয়ার মজা অতুলনীয়। দহলিজে টুপটুপ করে পড়া বৃষ্টির ফোঁটাও অনেকের তনু মনে শিহরণ জাগায়।
খোলাসা কালাম হলো; বৃষ্টির রকম ও ধরন যেমন হোক, প্রায় সব মানুষের প্রিয় ও পছন্দের বৃষ্টি। পৃথিবীর শুরু থেকেই বৃষ্টির অবিরাম বর্ষণ চলে আসছে। কবির কবিতা, লেখকের গল্প, উপন্যাসিকের উপন্যাসে বৃষ্টিকে উপজীব্য করে প্রচুর লেখা আমাদের সামনে আছে। বৃষ্টির প্রভাব প্রতিটি হৃদয়ে পড়েছে কম আর বেশি। বৃষ্টি পেয়েছে আর কোন প্রাণ তার কোমলতায় সিঞ্চিত হয়নি এমনটা পাওয়া মুশকিল।
সীরাতের পাতায় চোখ বুলালে দেখতে পাই, আমাদের প্রিয় নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনেও রয়েছে বৃষ্টির প্রভাব। আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও বৃষ্টি বিলাস করেছেন। বৃষ্টিতে ভিজেছেন।
হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। তখন আমাদের বৃষ্টি পেল। তখন রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার গায়ের পোশাকের কিছু অংশ সরিয়ে নিলেন, যাতে করে গায়ে বৃষ্টি লাগে। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কেন এমনটি করলেন? তিনি বললেন, ‘কারণ বৃষ্টি তার প্রতিপালকের কাছ থেকে সদ্য আগত।’ (মুসলিম)।
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টির সময় কল্যাণ কামনা করতেন। হযরত আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বৃষ্টি দেখলে বলতেন, হে আল্লাহ্! মুষলধারায় কল্যাণকর বৃষ্টি দাও। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১০৩২)।
বৃষ্টির সময় আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশি বেশি দুআ করতেন। কারণ বৃষ্টির সময় আল্লাহ তাআলা দুআ কবুল করেন।হজরত সাহল বিন সাদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুই সময়ের দোয়া কখনো ফেরত দেয়া হয় না।
আজানের সময় যে দোয়া করা হয়। এবং বৃষ্টি চলাকালীন সময়ে যে দোয়া করা হয়। (আবু দাউদ- ২৫৪০)।
বর্ষার এই ভরা মৌসুমে আমরা আরেকটা কাজ করতে পারি। বৃষ্টিময় এসময়ে মাটি যেহুত উর্বর থাকে তাই বেশি বেশি গাছ লাগাতে পারি। গাছ লাগানোর মাধ্যমে যেমন দুনিয়াবি উপকার পাব তদ্রূপ আখেরাতের জন্য বড় পুঁজিও সংগ্রহ করতে পারবো। গাছ লাগানোকে আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাদকা বলে অবহিত করেছেন। ইসলাম গাছ লাগানোর প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছে। আল্লাহর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও গাছ লাগাতেন এবং সাহাবাদেরও গাছ লাগাতে উৎসাহ দিয়েছেন।
আল্লাহর নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গাছ লাগানোর প্রতি উৎসাহ দিতে গিয়ে বলেন, হযরত আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কোন মুসলমান ফলবান গাছ রোপণ করে কিংবা কোন ফসল ফলায় আর তা হতে পাখী কিংবা মানুষ বা চতুষ্পদ জন্তু খায় তবে তা তার পক্ষ হতে সদাকা বলে গণ্য হবে। (সহিহ বুখারী, হাদিস নং- ২৩২০)।
তাই আমরা এই সময়ে বেশি গাছ লাগাতে পারি। এছাড়াও বৃষ্টির সময়টাকে বড় গনিমত মনে করা দরকার। হাদিসে বর্ণিত পন্থায় বৃষ্টি বিলাসে মগ্ন হলে আমাদের আমলের পাল্লা ভাড়ি হবে। কিন্তু বর্তমান আধুনিকতার নাম করে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুম কিংবা টেলিভিশন, স্মার্টফোনে আমরা গুনাহের কাজে লিপ্ত হই। এগুলো পরিহার করা উচিত। বৃষ্টির সময় আল্লাহর কাছে নিজের জন্য দোয়া করা। অবশ্যই আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করবেন। আল্লাহ আমাদের বেশি বেশি দোয়া করার তাওফিক দান করুক। আমিন।
– মুহাম্মদ হাবীব আনওয়ার, তরুণ আলেম ও প্রাবন্ধিক।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ