।। আল্লামা হাফেজ নাজমুল হাসান কাসেমী ।।
[রাজধানীর অন্যতম বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক, উত্তরা জামেয়াতুন নূর আল-কাসেমিয়ার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও উত্তরা ১২নং সেক্টর বায়তুন নূর জামে মসজিদের খতীব আল্লামা হাফেজ নাজমুল হাসান কাসেমী শুক্রবার (১৬ জুলাই) জুমায় মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে যে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেছেন, বিষয়বস্তুর গুরুত্ব বিবেচনা করে বয়ানের হুবহু অনুলিপি উম্মাহ পাঠক সমীপে উপস্থাপন করা হল -সম্পাদক]
হামদ ও সালাতের পর-
আমাদের ইসলাম ধর্ম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। কালিমা, নামায, রোযা, যাকাত ও হজ্জ। আমাদের প্রথমেই জানতে হবে ঈমান ও কুফর তথা মুমিন ও কাফিরের সংজ্ঞা কি? মুমিন হলো-
অর্থাৎ- রাসূল (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে যা যা হুকুম-আহকাম নিয়ে এসেছেন, তার সবগুলোর উপর সমানভাবে পূর্ণ বিশ্বাস রাখাকে ঈমান বলে এবং বিশ্বাস স্থাপনকারী ঐ ব্যক্তিকে মুমিন বলে। আর কাফির হলো-
অর্থাৎ- রাসূল (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সমস্ত হুকুম-আহকাম নিয়ে এসেছেন, তার যে কোন একটাকে অস্বীকার করার নাম কুফর। আর অস্বীকারকারী ব্যক্তি হলো কাফির।
ইসলামের শুরু যামানায় বেদুইন (গ্রাম্য) সাহাবায়ে কেরামগণ এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট আরজ করতেন- ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো অশিক্ষিত গ্রাম্য মানুষ। আমাদেরকে সংক্ষিপ্ত নসীহত করুন, যেনো মনে রাখতে পারি’। তখন রাসূল (সা.) তাদেরকে এই পঞ্চবেনার নসীহত করতেন। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নিয়ে এসেছেন সেগুলোর উপর পরিপূর্ণ ঈমান রেখে আমল করার নির্দেশ দিতেন। এই মূল পাঁচটি স্তম্ভ হিফাজত করার আদেশ দিতেন।
১. এই পাঁচটি স্তম্ভের মাঝে জীবনের শুরু থেকে নিয়ে শেষ পর্যন্ত পূর্ণ বিশ্বাস যেটার উপর প্রয়োজন সেটা হলো কালিমা বা ঈমান। সেই সাথে এই স্তম্ভ পাঁচটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভটিও কালিমা। মানুষ দুনিয়ায় আগমনের দিন থেকে শুরু করে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত এক সেকেন্ডের জন্যও যদি এই কালিমার উপরে তার আস্থা নড়বড়ে হয়ে যায়, এক সেকেন্ডের জন্যও যদি কালিমার উপর থেকে তার বিশ্বাস সরে যায়, তবে তার দুনিয়া-আখিরাত সব বরবাদ।
২. দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো নামায। আল্লাহ পাক কুরআনে কারীমের সূরা আলে-ইমরানের ১৯১নং আয়াতে ইরশাদ করেন-
‘যারা দাঁড়িয়ে, বসে, শুয়ে সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকির করে’ (এখানে যিকির দ্বারা নামায বোঝানো হয়েছে)।
নামাযকে দাঁড়িয়ে আদায় করা আমাদের উপর ফরয করা হয়েছে। যদি দাঁড়িয়ে আদায় করতে না পারো তো বসে আদায় করো। বসে না পারলে শুয়ে করো। মাথা উঠানোর শক্তি না থাকলে হাতের ইশারায় নামায আদায় করো, কিন্তু তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত হুঁশে থাকবে, তোমার নামায মাফ করা হবে না। নামায আদায় করার জন্য পূর্বশর্ত হলো, পবিত্রতা অর্জন করা। সেই পবিত্রতা অর্জন করার ক্ষেত্রে যদি পানি পাওয়া না যায়, অথবা নামাযী ব্যক্তি কোন অসুস্থতা বশতঃ অথবা অন্য কোন কারণে পানি ব্যবহারে অক্ষম হয়, তবে পবিত্র মাটিতে হাত মেরে তায়াম্মুমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করে হলেও নামায আদায় করার ব্যপারে কুরআনে কারীমের সূরা নিসা’র ৪৩নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-
কুরআন পাকে নামাযের এতোটাই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
শুধুমাত্র কোন মুসলমান অসুস্থতার প্রচন্ডতায় যদি ৬ ওয়াক্ত পরিমাণ বা তার বেশি সময় ধরে বেহুঁশ হয়ে থাকে, তবে তার ঐ বেহুঁশ হওয়ার সময়ের নামাযগুলো মাফ। আর যদি তার কম সময়ে হুঁশ ফিরে আসে, তাহলে নামাযগুলো কাযা আদায় করতে হবে।
একজন বালেগ মুসলমানের জন্য দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়েছে। এবং এই পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতের সাথে আদায় করার ব্যপারে কুরআন-হাদীসে জোর তাকীদ দেয়া হয়েছে। আমাদের উচিত, আমাদের নামাযের হিফাযত করা।
৩. ইসলামের তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো রোযা। বছরে একবার এক মাস নির্দিষ্ট সময় পানাহার থেকে বিরত থেকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার নাম রোযা। এ ব্যপারে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-
“যে ব্যক্তি রমযানে পূর্ণ বিশ্বাস ও ঈমানের সাথে রোযা রাখবে, তার আগে-পরের সমস্ত গুনাহ আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিবেন।”
৪. চতুর্থ স্তম্ভ হলো যাকাত। সাহেবে নিসাব তথা নেসাব পরিমাণ পুঞ্জিভূত মাল এক বছর অতিক্রম করেছে, এমন ব্যক্তির উপর তার মোট সম্পদের একটা নির্দিষ্ট অংশ হিসেব করে যাকাত আদায় করা ফরয। কুরআনে কারীমে অসংখ্যবার যাকাত দেয়ার ব্যপারে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
রাসূলে কারীম (সা.) যতদিন দুনিয়ায় জীবিত ছিলেন, ততদিন মক্কা নগরীর যাকাত তিনি নিজ হাতে আদায় করতেন। তিনি (সা.) দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার পর হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাযি.) খলিফাতুল মুসলিমীন নির্বাচিত হলেন। তখন একটি দল যাকাত দিতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলো। তারা যাকাত না দেয়ার পক্ষে দলীল হিসেবে সূরা তাওবার ১০৩ নং আয়াত পেশ করলো-
“হে নবী! আপনি তাদের থেকে যাকাতের সম্পদ আদায় করার মাধ্যমে তাদেরকে পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করুন, তাদের জন্য দোয়া করুন! নিশ্চয়ই আপনার দোয়া তাদের জন্য প্রশান্তির কারণ”।
এই আয়াতের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করলো যে, ‘যেহেতু রাসূল (সা.)এর ওফাত হয়ে গেছে, তিনি আর দোয়া করবেন না, তাই আমাদের শান্তিও হবে না। আর শান্তি না হলে যাকাত দিয়েও লাভ নেই’।
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাযি.) এর প্রতিউত্তরে বলেন- ‘যে ব্যক্তি রাসূলের (যামানায়) একটি উট যাকাত দিত সে যদি এখন সেই একটি উটের রশি দিতেও অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে তার বিরুদ্ধেও আমার তরবারী উত্তোলিত হবে’। তিনি তাদের বিরূদ্ধে জিহাদের ঘোষণা দিলেন।
সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন-
“হে খলিফাতুল মুসলিমীন! আমরা তাদের বিরূদ্ধে কীভাবে তলোয়ার উঠাবো, যারা কালিমা পড়ে, রোযা রাখে,
অথচ হাদীসে এসেছে: যে ব্যক্তি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বললো, সে জান্নাতী!
হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাযি.) তিনবার ক্বসম খেয়ে বললেন, “আমি অবশ্যই তাদের বিরূদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হবো, এমনকি আমি একা হলেও…”।
তখন সাহাবায়ে কেরাম (রাযি.) বুঝলেন, যেখানে আবু বকর (রাযি.) স্ব-প্রতিজ্ঞায় অনড় সেখানে আমাদের বিরোধিতা করে লাভ নেই।
পরবর্তীতে দেখা গেলো ঐ হাদীসের শেষে ছোট্ট করে লিখা আছে, ايمانا واحتسابا শব্দ দুটি। এটা এমনই এক সূক্ষ্ম বিষয়, যেটা সহজে কেউ ধরতে পারবে না। খালি চোখে দেখে মনে হয় যে, ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়লেই হলো, আর কিছু লাগে না।
না! বিষয়টি এমন নয়, অর্থাৎ শুধু মুখে মুখে মন্ত্রের মত কালিমা আওড়ালেই মুসলিম বা হাদীসের ভাষ্য অনুযায়ী জান্নাতী হয়ে যাবে না, বরং মনে-প্রাণে পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে যদি কেউ উক্ত কালিমা পড়ে তবেই সে মুমিন বলে সাব্যস্ত হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করবে।
বিশ্বের বড় বড় ভার্সিটিগুলোতে বিভিন্ন ধর্মের উপর আলাদা আলাদা ফ্যাকাল্টি আছে। অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সহ এরূপ প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ইসলামিক ফ্যাকাল্টিতে খ্রীস্টান, ইয়াহুদীরা ইসলাম ধর্মের উপর ক্লাস করায়। সেখানে তারা শতবার কালিমা পড়ে, এর উপর রিসার্চ করে, এর ব্যখ্যা-বিশ্লেষণ করে, কুরআন পড়ে। তাই বলে তারা কেউ মুসলিম হয়ে যায়নি, বরং মুসলিম তো সে, যে পূর্ণ বিশ্বাস ও ঈমানের সাথে কালিমা পাঠ করবে।
বর্তমান অনেকেই কুরআন-হাদীস এর বাংলা অনুবাদ পড়ে বা বিভিন্ন জায়গার বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য শোনে। অনেক অপব্যখ্যা করেন। আসলে কুরআন-হাদীস এমন জিনিস নয়, যেটা আমি/আপনি অনুবাদ পড়েই এর খুঁটিনাটি বুঝে ফেলতে পারবো। বরং এর জন্য একাডেমিক অধ্যাবসায়ের প্রয়োজন। ইনাবাত ইলাল্লাহ প্রয়োজন। সর্বোপরি নিজের সর্বাত্মক চেষ্টা এবং আল্লাহর মদদ প্রয়োজন। আর নয়তো আমি/আপনিও একদিন কোন মুনাফিকের কথায় বিভ্রান্ত হয়ে ইসলামের কোন একটা বিধানকে অস্বীকার করে বসবো। ঈমান নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে পারবো না! নাউজুবিল্লাহ! আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন।
অনেক আগে একবার এক খ্রীস্টান পাদ্রী যে এই উত্তরা আবাদ হওয়ার আগে এখানে সে তার ধর্মের দাওয়াতে নিয়োজিত ছিলো, আমার সাথে দেখা হলো। আমি তাকে আমার বাসায় দাওয়াত দিলাম। তাকে বাহাসের জন্য বললাম। সে নির্ধারিত দিনে আসলো, বাহাস হলো। সে কুরআনে কারীমের ৩০টি আয়াতের অর্থ বিকৃত করে আমার সামনে এমনভাবে উপাস্থাপন করলো, যাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, ‘খ্রীস্টান ধর্মই হলো সত্য ধর্ম’! নাউজুবিল্লাহ!
আমি তাকে এক এক করে সবগুলো প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দিলাম। সে আমার উত্তরের কোন প্রতিউত্তর করতে পারলো না। আমার মত করে আমি বুঝালাম। সে বুঝলো, আমি তাকে ঈমানের দাওয়াত দিলাম, সে আমার কাছ থেকে সময় চাইলো।
তো বাহাসের পর তার অবস্থা এমন ছিলো যে, না আমাকে অবিশ্বাস করতে পারতেছে, না তাদের ধর্মযাজকদের কথা সম্পূর্ণ বিশ্বাস করতে পারতেছে। তাকে বোঝানোই হয়েছে ওরকম ভাবে, তার ব্রেইন ওয়াশ করা হয়েছে।
এজন্যই বলি, কুরআন-হাদীস এতো সহজ কিছু নয় যে, এটা যে কেউ বাংলা তরজমা পড়েই বুঝে ফেলতে পারবে, এর জন্যে প্রয়োজন নিয়মতান্ত্রিকভাবে এর উপর একাডেমিক পড়াশোনা। অন্যথায় গোমরাহ্ হওয়ার সমূহ আশংকা থেকে যায়।
৫. ইসলামের পঞ্চ বেনার পঞ্চমটি হলো ‘হজ্জ’।
সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য জীবনে একবার হলেও হজ্জ করা ফরয। হজ্জ একটি ফুল প্যাকেজ ইবাদাত। এর মাঝে যেমনিভাবে অর্থ ব্যয় হয়, তেমনিভাবে কায়িক পরিশ্রমেরও প্রয়োজন পড়ে। হজ্ব ইবাদাতসমূহের মাঝে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ব্যপ্তি একটি ইবাদাত।
আলহামদুলিল্লাহ! ইতোমধ্যেই হজ্জের মাস যিলহজের ৬ তারিখ আজ অতিক্রম হতে চললো। এই মাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত হলো- ১ তারিখ থেকে ৯ তারিখ পর্যন্ত রোযা রাখা এবং দশম দিন তথা ঈদের দিন আল্লাহর মেহমানদারী গ্রহণ করা। আরেকটি আমল হলো- এই ৯ দিন নখ বা চুলে কাঁচি না লাগানো, বেশি বেশি যিকির করা, আরাফার দিন তথা ৯ই যিলহজ্জ ফজর থেকে ১২ই যিলহজ্জ আসর পর্যন্ত প্রতি নামাযের পর জোরে জোরে তাকবীরে তাশরীক্ব পড়া সকল মুসমানের উপর ওয়াজিব।
তাকবীরে তাশরীক্ব হলো-
এই আমলের ইহতেমাম করা, ঈদের দিনের সুন্নাতগুলো গুরুত্বের সাথে আদায় করা।
গরু, মহিষ এবং উটের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সাত শরীকে কুরবানী জায়েয আছে এবং ছাগলের জন্য সর্বোচ্চ এক শরীক। কুরবানির দিন সকালে কিছু না খেয়ে নামাযে যাওয়া এবং নামায শেষে নিজ কুরবানির গোশত দ্বারা দিনের আহার শুরু করা সুন্নাত। নিজ হাতে কুরবানী করা। কারো কথায় বিভ্রান্ত না হওয়া।
দেখুন, আল্লাহ তায়ালা এমনিতেই আমাদের জন্য আমলের সুযোগ/পরিধি কমিয়ে দিয়েছেন। জমীন আমাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে আসছে। নামাযে স্বাভাবিকতা নেই, মানুষ আত্মার প্রশান্তি নিয়ে নামায আদায় করতে পারছে না।
আগে ট্রাভেলসে ফোন দিয়ে বলে দিতাম, অমুক তারিখে হজ্জে/উমরায় যাবো, যথাসময়ে টিকিট বুঝে নিয়ে বিমানে চড়তাম। কিন্তু এখন দুই বছর থেকে টোকেন জমা দিয়ে বসে আছি, আজও পর্যন্ত কোন খোঁজ খবর নেই৷
ভাই! আমল আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাচ্ছে! যেই কা’বা চত্বর (মাত্বাফ) ১৪শত বৎসর থেকে কোন দিন এক সেকেন্ডের জন্যও খালি থাকেনি- হাজীদের তাওয়াফ, হাজীদের নামাযসহ আনুষাঙ্গিক বিষয়ে হাজীদের পদচারণায় সর্বদা মুখরিত ছিলো, সেই কা’বা চত্বর আজ খা খা করছে। যেই মসজিদে নববীতে আজানের এক ঘন্টা আগে না গেলে মসজিদের ভেতর জায়গা পাওয়া কঠিন হয়ে যেতো, লক্ষাধিক মানুষ একত্রে নামায আদায় করতো, সেই মসজিদে নববীতে এখন মাত্র চার/পাঁচশত লোক নামায আদায় করে।
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
হাদীসে এসেছে, যখন কোন উম্মতের মাঝে অশ্লীলতা/নাফরমানী অধিক হারে বেড়ে যায়, সেই উম্মতকে আল্লাহ তায়ালা এমন বিপর্যয়ে ফেলেন যেই বিপর্যয় পূর্বে পৃথিবী দেখেনি। আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করছেন এই ‘করোনা’ নামক ছোট্ট এক সৃষ্টি দিয়ে।
অস্তিত্বের মোকাবিলা করা যায়, কিন্তু যার অস্তিত্বই নেই তাকে কীভাবে মোকাবিলা করবেন? বহু গবেষণা করে যখন কোন ভ্যারিয়েন্ট আবিস্কার করা হয় এবং তার প্রতিশেধক বানানো হয়, পরক্ষণেই দেখা যায় সে তার রূপ চেঞ্জ করে ফেলেছে! এ এক আজিব জিনিস! আল্লাহর কাছে দোয়া ছাড়া আর কোন উপায় নেই বাঁচার! আসুন! আল্লাহর কাছে দোয়া করি আমলের মাধ্যমে, আল্লাহর ফরজ হুকুম বেশির থেকে বেশি বাস্তবায়নের মাধ্যমে।
আমরা তো জানিনা, আজ আমাদের সামনে যে আমলের সুযোগ আছে কাল তা থাকবে কি-না? আমাদের পাশ্ববর্তী দেশে তাকিয়ে দেখুন, সেখানের মেজরিটি পার্সেন্ট মানুষ প্রকাশ্যে কুরবানি করার সুযোগ পায় না! আমাদের তো আল্লাহর রহমতে সেই সুযোগ আছে। ইউরোপীয় রোল মডেল ইংল্যান্ডে তাকিয়ে দেখুন, সেখানে সামর্থ্যবান মুসলামগণ কুরবানীর পশু ক্রয় করতে পারতেছেন, কিন্তু নিজের হাতে জবাই করতে পারতেছেন না! বরং গভর্মেন্ট কর্তৃক অনুমোদিত ব্যক্তির মাধ্যমেই যবাই করাতে হয়। এটা সে দেশের বাধ্যতামূলক আইন! চাই সেই যবাইকারী ব্যক্তি মুসলিম হোক চাই অমুসলিম। কিছুই করার নেই! কিন্তু আমাদের তো ছুম্মা আলহামদুলিল্লাহ সেই সুযোগটাও আছে। সুতরাং আশপাশের উড়ো কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে আল্লাহর ফরয হুকুম কুরবানী করুন।
রাসূল (সা.) বিদায়ী হজ্জে ১০০টি উট কুরবানী দিয়েছেন। তার মধ্যে ৬৩টি কুরবানী তিনি নিজ হাতে যবাই করেছেন! বাকী ৪৩টি করেছেন হযরত আলী (রাযি.)। সুতরাং আমরা যথাসাধ্য নিজ হাতে কুরবানী করার ব্যপারে সচেষ্ট থাকবো। কুরবানী করার পূর্বে যবাই করার ছুরি ভালো করে ধার দিয়ে নেবো।
কুরবানী করার পর নিজের অংশ থেকে গরীব-দুঃখীদের মাঝে কিছু গোশত বিলি করবো শুকরিয়াতান যে, আল্লাহ আমাকে কুরবানী করার তাওফীক দিয়েছেন। এছাড়া নিজ আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজ নিবো।
কুরবানী ঈদ সম্পর্ক স্থাপনের একটি মোক্ষম সুযোগ। আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে যাদের সাথে একটু মনোমালিন্য আছে (মাঝে মাঝে এমন হয়েই থাকে), তাদের বাড়িতে কুরবানির গোশত পাঠিয়ে সম্পর্ক পুনরুদ্ধার করে নিবো। সুন্নাত জিন্দা হবে।
হৃদয় প্রশান্তিতে ভরে যায় রাসূল (সা.)এর এই বাণী সামনে আসলে-
অর্থাৎ- “যে তোমার সাথে অন্যায় করে, তুমি তাকে ক্ষমা করো। যে তোমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে, তুমি তার জন্যা প্রার্থনা করো। যে তোমাকে অসন্তুষ্ট করেছে, তুমি তা সাথে সদাচরণ করো। এবং সত্য কথা যদি নিজের বিরুদ্ধেও যায়, তবুও তুমি সত্য প্রকাশ করো”। (সহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব)।
আল্লাহ আমাদের বেশির থেকে বেশি কুরআন ও হাদীসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন, আমিন!
ইসলামের এই পঞ্চ স্তম্ভের সবগুলো পরিপূর্ণ রূপে বিশ্বাস করার নাম ঈমান। আর এর যে কোন একটাকে কোনভাবে না মানলে বা অস্বীকার করলে সেটার নাম কুফর।
চেঙ্গিস খান, হালাকু খান এদের নাম ইতিহাস ঘৃণাভরে স্বরণ করে। এদের নিষ্ঠুরতম আচরণের বিস্তর আলোচনা ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ আছে। ইতিহাস আমাদের বলে যে, চেঙ্গিস খান যখন কোন এলাকা জয় করতো তখন ঐ এলাকায় ৩-৪ দিন পর্যন্ত গণহত্যা চলতো। অতঃপর খন্ডিত সকল মস্তক একত্রিত করে একটি স্টেজ বানানো হতো এবং সে এলাকার বেঁচে যাওয়া লোকদের সেই স্টেজের সামনে উপস্থিত করা হতো। চেঙ্গিস খান সেই মানব মস্তক সৃষ্ট স্টেজে দাঁড়িয়ে সেই লোকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতেন, সেই লোকদের মনে ভীতি সঞ্চার করতেন! এমন নিষ্ঠুর একটা লোকের মনে হঠাৎ একবার ইসলামের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হলো। সে তার যুগের ইসলামী স্কলারদের ডেকে নিয়ে ইসলাম সম্পর্কে জানার আগ্রহ প্রকাশ করলো। সে যুগের স্কলারগণ তাকে ইসলাম এক এক করে বোঝাতে লাগলেন। চেঙ্গিস খান সবকিছু বোঝলেও, সবকিছু স্বীকার করলেও অস্বীকার করে বসলো হজ্জ কে! এটা তার মাথায় ধরলো না। ‘সারা পৃথিবীর সবাই একটাই ঘরে এসে জমা হবে কেন? বরং বিভিন্ন জায়গায় এই আদলে ঘর বানিয়ে ইবাদত করলেই তো হয়!’
সে বললো, সব মানি, কিন্তু এটা মানতে পারলাম না।
এখন বলুন, সে-কি মুসলমান নাকি কাফের?
সে নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করতে পারবে কি-না, তা নিয়ে তৎকালীন ইসলামিক স্কলারগণ পরামর্শে বসলেন। কেউ কেউ বললেন যে, তাকে মুসলিম বলা হোক। আপাতত অন্য আমলগুলো সে নিয়মানুযায়ী করুক, আশা করা যায় আস্তে আস্তে এটাও বুঝে আসবে।
কিন্তু বিজ্ঞ আলেমগণ বললেন, না, কখনওই না। ইসলাম কারো মুখাপেক্ষী নয়। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয় অমুখাপেক্ষী এক সত্ত্বার নাম। পৃথিবীর সকল কিছুই তাঁর মুখাপেক্ষী, কিন্তু তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন।
সুতরাং আমাদেরকে ‘আল্লাহর রাসূল (সা.) আল্লাহর পক্ষ থেকে যা কিছু নিয়ে এসেছেন এর সবগুলোর উপর পরিপূর্ণরূপে আমল করতে হবে। বুঝে আসুক চাই না আসুক! অন্যথায় ঈমান হারা হয়ে যাবো! আল্লাহ আমাদের সকলকে হিফাজত করুন, আমিন।
অনুলিখনে- মাহমূদ হাসান নাহিয়ান
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ