।। আল্লামা মুফতি জসিমুদ্দীন ।।
প্রতিটি সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন প্রাপ্তবয়স্ক, মুক্বীম, নেসাব পরিমাণ সম্পদের আধিকারী নারী-পুরুষের উপর কুরবানী ওয়াজিব। যদি কোন ব্যক্তি ঈদের দিন সকাল থেকে ১২ই যিলহজ্বের সূর্যাস্ত পর্যন্ত কোন সময় নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হয়, তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।
* নেসাব হল- সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা অথবা তার সমমূল্য টাকা কিংবা ধনসম্পদ। নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ, আসবাবপত্র এবং আয়ের মাধ্যম, যেমন- যন্ত্রপাতি ইত্যাদি ব্যতিত।
* রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি প্রয়োজনীয় আসবাব নয়। সুতরাং এসব যন্ত্রপাতির মূল্য নেসাবের মধ্যে গণ্য হবে।
* বসতঘর ব্যতীত আতিরিক্ত ঘরের মূল্য বা তার ভাড়া নেসাবের মধ্যে গণ্য হবে।
* স্ত্রী লোক যদি নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হয় (নিজস্ব গয়না ইত্যাদির মাধ্যমে), তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব ।
* কোন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে যদি নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হয়, তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব।
* যদি চার-পাঁচজন মিলে একসাথে ব্যবসা ইত্যাদি করে, তাহলে সম্পদ বণ্টন করলে যদি প্রত্যেকের ভাগে নেসাব পরিমাণ মাল আসে, তাহলে প্রত্যেকের উপর পৃথকভাবে কুরবানী ওয়াজিব হবে।
* যদি কেউ কুরবানীর মান্নত করে তাহলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব (চাই সে ধনী হোক বা গরীব হোক)। এবং উক্ত কুরবানীর গোস্ত সে এবং তার সন্তান-সন্ততি, পিতা-মাতা (ঊর্ধ্বতন ও অধিনস্ত ) কেউ খেতে পারবে না।
* মান্নত যদি কোন নির্দিষ্ট পশুর উপর করা হয়, তাহলে উক্ত পশুটিই কুরবানী করতে হবে। আর যদি চায় কুরবানী না করে কোন গরীবকে দিয়ে দিবে, তাহলে তা করতে পারবে। যদি উক্ত পশুটি মারা যায়, তাহলে নতুন পশু দ্বারা কুরবানী করা ওয়াজিব নয়।
* পাগল ও মুসাফিরের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়; যদিও সে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়। তবে মুসাফিরের উপর কুরবানী করা মুস্তাহাব।
* ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি ঋণের পরিমাণ থেকে অধিক সম্পদের মালিক হয় এবং তা নেসাব পরিমাণ হয়, তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। যদি নেসাব থেকে কম হয়, তাহলে ওয়াজিব হবে না।
* নাবালেগ নেসাব পরিমাণ মালের মালিক হলেও (নির্ভরযোগ্য মতানুসারে) তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়।
* ছেলে-মেয়ে, পিতা-মাতা, স্ত্রী কারো পক্ষ থেকে কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। তবে বিবাহের সময় স্ত্রীর পক্ষ থেকে কুরবানী করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকলে (স্ত্রীর পক্ষ থেকে) কুরবানী করা ওয়াজিব হবে।
* গ্রহণযোগ্য মতানুসারে জমির মূল্য নেসাবের মধ্যে গণ্য হবে না। কিন্তু তার (প্রয়োজনাতিরিক্ত) উৎপাদন নেসাবের মধ্যে গণ্য হবে।
* অন্য কারো পক্ষ থেকে কুরবানী করলে তা আদায় হয়ে যাবে। তবে ওয়াজিব কুরবানীর ক্ষেত্রে যার পক্ষ থেকে কুরবানী করা হবে, তার অনুমতি আবশ্যক। অনুমতি ছাড়া ওয়াজিব আদায় হবে না।
– মুফতি জসীমুদ্দীন, মুফতি, মুহাদ্দিস ও মুফাসসির এবং সহযোগী পরিচালক- আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ