।। মুফতি হুমায়ুন কবীর ।।
দারুল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার পৃষ্ঠপোষক মাওলানা শাহ জমীরুদ্দীন (রাহ.) বলতেন, “ ওহে আল্লাহ প্রেমিকেরা, তোমাদের অন্তর কতটুকু পবিত্র হয়েছে? আমি প্রভুর কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বলছি, রেঙ্গুনের কোন সুন্দরী তরুণী যদি নাফ নদী পার হওয়ার সময় নৌকাতে বসার স্থান না পেয়ে অধমের ঊরুর উপর বসে পড়ে, আমার এতটুকুও পার্থক্য মনে হবে না যে, সেটা কি কোন কাঠের টুকরো না কোন রূপসী মেয়ে। কারণ, আমার আত্মা তো থাকবে মহান প্রভুর ধ্যানে নিমগ্ন”। আল্লাহু আকবার।
আজকে আমরা কোথায়? এই মেহনাত-মুজাহাদার লক্ষ্য একমাত্র স্বীয় নফসকে কুরআন সুন্নাহ তথা শরীয়তের পরিপূর্ণ অনুগত বানানো। যাতে শয়তান তাকে ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণা দিয়ে সাহায্য করতে না পারে। বিপদগামী করতে সক্ষম না হয়। তাই, যদি অনেক যিকর-আযকারের পরেও অন্তরাত্মা শরীয়তের অনুসরণে অভ্যস্ত না হয়, তবে বুঝতে হবে লক্ষ্যর্জনে এখনো পথ অবশিষ্ট রয়ে গেছে। আরো বেশি মুজাহাদা করতে হবে। আর যদি লক্ষ্যার্জিত হয়, তবে তার অর্থ হবে পথ চলার লক্ষ্যে পৌঁছেছি। এখন নফসকে পাহারা দিয়ে রেখে সর্বক্ষণ আল্লাহর ইবাদাতে নিমগ্ন থাকতে হবে। এ ধারা মৃত্যুর দরজা পর্যন্ত চলতেই থাকবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّىٰ يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ
অর্থ- “এবং তুমি তোমার পালনকর্তার ইবাদত কর তোমার মৃত্যু পর্যন্ত”। (সূরা হিজর)।
এ আয়াতে الْيَقِينُ (ইয়াকীন) অর্থ মৃত্যু। অতএব, যারা বলে, আমার ইয়াকীন অর্জন হয়ে গেছে, আর ইবাদত করতে হবে না, তারা অপব্যাখ্যাকারী ও বিভ্রান্ত।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
মৃত্যু পর্যন্ত শিরকমুক্ত তৌহিদ নিয়ে, বিদআতমুক্ত সুন্নাত নিয়ে একমাত্র আল্লাহ তাআলার ইবাদাত, ইখলাস ও নিষ্ঠার সাথে জীবনের সর্বক্ষেত্রে পালন করে যেতে পারলেই পরকালে শান্তি ও মুক্তি। এটাই মানব জীবনের চূড়ান্ত সফলতা। দুনিয়ার সফলতা সংকীর্ণ ও সীমিত। পরকালের সফলতা অসীম ও চিরস্থায়ী।
“ফালাহ” বা সফলতা হচ্ছে- মুমিন পরকালে এমন পাঁচটি নিয়ামত নিয়ে চিরস্থায়ী জান্নাতে জীবন যাপন করবেন, যা এ পৃথিবীতে অর্জন করা কষ্মীনকালেও সম্ভব নয়।
যথা- ১. بقاء بلا فناء মৃত্যুবিহীন চিরজীবন। ২. صحۃ بلا سقم অসুস্থতাহীন তথা চির সুস্থ শরীর, ৩. غناء بلا فقر দরিদ্রতামুক্ত চির স্বচ্ছলতা। ৪. سرور بلا غموم চিন্তা ও পেরেশানী মুক্ত চিরসুখ ও আনন্দমুখর জীবন, ৫. رضاء بلا غضب অসন্তুষ্টির আশংকাহীন আল্লাহ তাআলার চিরস্থায়ী সন্তুষ্টি। যাকে কুরআনুল কারীমে ورضوان من اللہ اکبر “এবং আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সন্তুষ্টিই হল সর্বাপেক্ষা মহান” বলা হয়েছে। সঙ্গে থাকবে আল্লাহ তাআলার দীদার ও সাক্ষাৎ। এ নিয়ামতের কোন তুলনা হয় না। অথচ আমরা বোকারা ওই অতুলনীয় জীবনের উপর এ ক্ষণস্থায়ী সুখ-শান্তি ও জীবনকে প্রাধান্য দিচ্ছি। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
بَلْ تُؤْثِرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةُ خَيْرٌ وَأَبْقَىٰ
“বরং তোমরা ইহকালকে পরকালের উপর প্রাধান্য দিচ্ছ, অথচ পরকাল অনেক উত্তম ও স্থায়ী”। (সূরা- আ’লা)।
প্রয়োজনীয় দুনিয়া অর্জন হালাল ও বৈধ পন্থায়- এটা ইহকালকে প্রাধান্য দেয়া নয়, বরং দুনিয়ার জন্য পরকালের আমল বর্জন করা, বা অলসতা করাই হচ্ছে দুনিয়াকে প্রাধান্য দেয়া, যা কখনো কোন মুমিনের জন্য কাম্য নয়। অবশ্যই পরিত্যাগ করা জরুরী। তখনই সফলতা অর্জন হবে সহজ।
– মুফতি হুমায়ুন কবীর, উস্তাদ- আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ