তিউনিসিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোরআন ও তাফসির বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. হিন্দ শিবলি মারা গিয়েছেন। গত (বৃহস্পতিবার) ২৪ জুন তিনি ইন্তেকাল করেন। হিজাব পরিধানে তিউনিসিয়া সরকারের শত বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি নিয়মিত হিজাব পরতেন।
ড. হিন্দ শালবি তিউনিসিয়ার জায়তুনার ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান ছিলেন। তাঁর বাবা শায়খ আহমদ শালবি একজন প্রশিদ্ধ আলেম ও জনপ্রিয় শিক্ষক। শৈশবে তিনি পবিত্র কোরআন হেফজ করেন। তিনি ছিলেন জায়তুনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা প্রথম সারির তিউনিসিয়ান নারী। ১৯৬৮ সালে ড. হিন্দ শিলবি উসুলুদ্দিন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। ১৯৮১ সালে তিনি একই বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণ করেন। অতঃপর ১৯৮১ সালে উলুমুল কোরআন বিষয়ে তিনি জাইতুনাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন।
১৯৭৫ সালে একটি জাতীয় সম্মেলনে ড. হিন্দ শালবি ‘ইসলামে নারীর মর্যাদা’ শীর্ষক আলোচনা প্রদান করেন। সেখানে তিউনিসিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাবিব বরগুইবা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু আলোচনার মধ্যে কোরআন ও সুন্নাহর সঙ্গে সাংঘর্ষিক সরকারের নারী বিষয়ক নীতিমালার তীব্র সমালোচনা করেন।
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
১৯৮১ সালে তিউনিসিয়া রাষ্ট্রপ্রধান বুরগুইবা সরকারি অফিসে হিজাব পরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। পরবর্তী রাষ্ট্রপতি বেন আলির সময়েও এ নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে। কিন্তু ড. হিন্দ কখনো ইসলামের বিধান পালনে কখনো ছাড় দিতেন না। বরং সরকারি বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে সর্বদা তিনি হিজাব পরে চলাফেরা করেছেন। পুরো শরীর ঢেকে রাখতে তিউনিসিয়ান নারীদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক ‘সেফসারি’ পরতেন তিনি। এর মাধ্যমে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীর ঢাকা পড়ে।
জায়তুনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিআহ ও আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. ইলিয়াস দারদুর জানান, ‘ড. হিন্দ শালবির মৃত্যু শুধুমাত্র তিউনিসিয়া নয়, বরং মুসিলম বিশ্বে শূণ্যতা তৈরি করেছে। তিনি অত্যন্ত চমৎকারভাবে পবিত্র কোরআনের তাফসির পাঠদান করতেন। তিউনিসিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকেই প্রথম হিজাবি শিক্ষার্থী মনে করা হয়।’
তিনি আরো জানান, ‘পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট হাবিব বরগুইবা ও জয়নাল আবেদিন বেন আলীর চাপের মুখে তিনি তিউনিসিয়ার ঐতিহ্যবাহী পোশাক ‘সেফসারি’ পরা শুরু করেন। ৮০-এর দশকে আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলাম। তিনি এই পোশাকের মাধ্যমে মাথা থেকে পা পর্যন্ত পুরো শরীর আবৃত রাখতেন। এর মাধ্যমে সরকারি বিধি-নিষেধ লঙ্ঘন থেকে যেমন রেহাই পেয়েছিলেন, তেমনি শরয়ি পোশাক পরার বিধানও পালন করেন।’সূত্র : আল জাজিরা নেট।
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ