উলামায়ে কেরাম নিয়াবতে রাসূলের কারণে উম্মতের দ্বীনি অভিভাবক। প্রত্যেক যুগে সমসাময়িক সময়ের বিদ্যমান উলামায়ে কেরাম উম্মতকে তিলাওয়াতে কুরআনের তা’লিম সহ প্রয়োজনীয় দ্বীনি শিক্ষা দেওয়া তাদের দ্বীনি দায়িত্ব মনে করেছেন। তাছাড়া এটা খতমে নবুওয়াতের চাহিদা। কিয়ামত পর্যন্ত দ্বীন বিদ্যমান থাকার মাধ্যম হলো তা’লিম, দা’ওয়াত, সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা।
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে কখনো পরিবেশ পক্ষে হবে কখনো বিপক্ষে। তাতে দ্বীনি দায়িত্বে কোন স্থবিরতা আসতে পারবে না। যেভাবে গরম ও শীতের মৌসুমে জীবন যাত্রা চলতে থাকে ঠিক সেভাবে দা’ওয়াত, তা’লিম এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধও চলতে থাকবে। আল্লাহ তাআ’লা রাসূল (সা.)কে ইরশাদ করেন- فاصدع بما تؤمر واعرض عن المشركين انا كفيناك المستهزئين অর্থাৎ- অতএব, আপনি প্রকাশ্যে শুনিয়ে দিন যা আপনাকে আদেশ করা হয় এবং মুশরিকদের পরোওয়া করবেন না। বিদ্রুপকারীদের জন্য আমি আপনার পক্ষ হতে যথেষ্ট।
বর্তমান পৃথিবীতে দু-এক দেশ ব্যতিত সব দেশে তিলাওয়াতে কুরআন, নামায, রোযা অযু, গোসল সহ প্রয়োজনীয় দ্বীনি তা’লিম ও দ্বীনের দিকে দা’ওয়াত দেওয়া এবং ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজের নিষেধে কোন বাঁধা নেই। এই সুযোগ থাকার পরও যদি উলামা ও দ্বীনদার মুসলমান অজ্ঞ মুসলমানকে দ্বীন শিখানোর কাজে অমনোযোগী হন, তবে নিশ্চয়ই তারা আল্লাহর নিকট মুজরিম হবেন এবং কিয়ামতের দিন প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন।
বর্তমানে আমাদের দেশে মাদরাসা বন্ধ রাখার জন্য চলছে বেহুদা লকডাউন। অপরদিকে উলামা নিপিড়নের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব আদায়ে প্রশাসনের অস্থিরতা। আল্লাহ তাআ’লা তাদেরকে ক্ষমা করুক এবং সেবামূলক কাজ করার তৌফিক দান করুক। আমিন।
আরও পড়তে পারেন-
- প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষের বিবাহ্ সম্পর্কে শরয়ী বিধান
- ইসলামের আলোকে নারীর কর্মপরিধি
- সালাম: উম্মাহর ঐক্য ও সংহতি রক্ষার অন্যতম বাহন
- বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ: বাস্তবতা ও অপপ্রচার
- সকালের ঘুম যেভাবে জীবনের বরকত নষ্ট করে
অন্যদিকে কেউ কেউ বিক্রির জন্য পার্টিকে বাজারজাত করার কাজে ব্যস্ত। আবার কেউ কেউ রেযায়ে ইলাহির স্থলে রেযায়ে সরকারের জন্য ইসলামি রাজনীতিকে শহীদ করতে তীর তলোয়ার সংগ্রহের কাজে লিপ্ত। বাকিরা নিরাপদে থাকার জন্য কিবলা পরিবর্তন করে বায়তুল মুক্বাদ্দাসকে কিবলা বানিয়ে নিয়েছেন। এসবের মূল হলো- ইস্তেকামাতের দুর্বলতা। আমরা এই সেই চিন্তা না করে ইস্তেকামাতের রাস্তা অবলম্বন করি। আল্লাহ তাআ’লা আমাদের সহায় হবেন, ইনশাআল্লাহ।
আমরা উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ তাআ’লার ইরশাদকে লক্ষ্য করি- واعرض عن المشركين দ্বীনের কাজে গাইরে মুনাসিব পরিবেশে যেন কেউ স্থবির হয়ে না যায়। انا كفيناك المستهزئين
গাইরে মুনাসিব পরিবেশ ও শত্রুদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।
বর্তমানে আমরা রাজনৈতিক প্রোগ্রাম করতে পারবো না। কিন্তু দাওয়াত, তাবলীগ ও আমর বিল মারুফ-নাহি আনিল মুনকার এবং জনসেবা মূলক প্রোগ্রাম করতে তো কোন বাঁধা নেই। তাই ওলামায়ে কেরামের খেদমতে আমার দরখাস্ত যে, মাদরাসা বন্ধের এই সুযোগে আমরা-
- কুরআন মাজীদের তরজমা হাশিয়ায়ে উসমানী অথবা মা’আরিফুল কুরআন ধারাবাহিক মুতালাআ আরম্ভ করি।
- মহল্লার মসজিদে বয়ষ্ক শিক্ষা চালু করি।
- সাপ্তাহে একদিন বয়ষ্ক মহিলাদের হায়েয-নেফাস, পবিত্রতা ও নামায সহ দ্বীনের জরুরি মাসায়েলের তা’লিম চালু করি।
- দৈনন্দিন রুটিন মাফিক তিলাওয়াতে সচেষ্ট হই এবং নফল নামাযে কিছু সময় অতিবাহিত করি।
- কোন বুজুর্গের হাতে বায়আত হয়ে এই সুবর্ণ সুযোগে যিকিরের মেহনত করি।
আমার প্রিয় ছাত্র ভাইদের প্রতি পরামর্শ
- এই সময়ে সরফ, নাহু, আদব এবং কম্পিউটার নিজের পূর্ণ আয়ত্তে আনি।
- যাদের তিলাওয়াত শুদ্ধ নয় তারা মশকে কিরাতে মনোযোগী হই।
- বয়ষ্ক নারী-পুরুষের দ্বীনি শিক্ষার্জনে সহযোগিতা করি।
- যাদের হাতের লেখা সুন্দর নয়, তারা লেখা সুন্দর করার চেষ্টা করি।
- দৈনিক তিলাওয়াতের পাবন্দি করি।
- নিজের জীবনের মূল্যবান সময় কাজে লাগাই, উদাসীন ও গাফলতের জীবন পরিহার করি।
সকল মুসলমান ভাইদের উদ্দেশ্যে বলছি, আমাদের যে সমস্ত মাজলুম ভাইয়েরা জেলে আছেন, তাদের পরিবারের খোঁজ-খবর নিয়ে এবং তাদের দিকে আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিবেন।
রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন- والله في عون العبد ماكان العبد في عون اخيه অর্থাৎ- বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সহযোগিতায় থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ তাআ’লা তার সহযোগিতা করেন। রাসূল (সা.) আরো বলেন- ارحموا من في الارض يرحمكم من في السماء আপনারা পৃথিবীবাসীর উপর দয়া করুন, আল্লাহ তাআ’লা আপনাদের উপর দয়া করবেন।
যারা আত্মগোপনে কারো মেহমান হয়েছেন, তাঁদের আমরা আল্লাহর মেহমান মনে করবো এবং মন খুলে তাদের মেহমানদারি করবো। আমরা ইনশাআল্লাহ মদিনার আনসারদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআ’লা আমাদের পরিবারে বরকত নাযিল করবেন।
উম্মাহ২৪ডটকম: এমএ