অটোমান সাম্রাজ্যের হাত ধরে ইসলাম পা রাখে ক্রোয়েশিয়ায়, তার অন্যতম প্রমাণ এই দেশের অনুপম রিজেকা মসজিদ। রিজেকা মসজিদ বা ইসলামিক সেন্টার ক্রোয়েশিয়ার উপকূল শহর রিজেকায় অবস্থিত। মসজিদটির বয়স খুব বেশি না হলেও আকার, আয়তন ও নকশায় এটি বিশ্বে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে।
ক্রোয়েশিয়ায় ইসলামের ভিত
এই দেশে ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের পরেই মুসলমানদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ২০১১ এর জনগণনায় দেখা গিয়েছে, দেশের ১.৪৭ শতাংশ জনসংখ্যা ইসলাম ধর্ম পালন করে। পঞ্চদশ শতকের শেষ থেকে ষোড়শ শতকের শুরুর সময়, ক্রোয়েশিয়া ও অটোমান তূর্কীদের মধ্যে যুদ্ধের ফলেই ইসলাম প্রথম পা রাখে এই দেশে।
সেই সময় অটোমান তূর্কীদের দখলীকৃত অঞ্চলের মানুষ ইসলামের শান্তির বানীর প্রতি আকৃষ্ট হয়। ক্রমাগত যুদ্ধ তখন সাধারণ ক্রোয়েশীয় মানুষকে ক্লান্ত করে দিয়েছিল। ইসলামের শান্তি ও গঠনমূলক বাণী তাদের মনে দাগ কাটে। অটোমান তূর্কীদের উন্নত জীবনযাত্রা তাদের অন্যভাবে ভাবতে শেখায়।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
ফলে, ইসলামের ভিত আস্তে আস্তে শক্ত হতে থাকে। এছাড়া, যে সমস্ত ক্রোয়েশীয় সৈন্য যুদ্ধে অটোমানদের হাতে বন্দি হয়েছিল, তারাও ইসলাম গ্রহণ করে প্রিয় নবী রাসুল (সাঃ)-এর ছায়াতলে আসেন।
রিজেকা মসজিদ-এর ইতিহাস
ষোড়শ শতকে ইসলাম ক্রোয়েশিয়ায় পা রাখলেও এ দেশে মসজিদ স্থাপন শুরু হয়েছে অনেক পরে। ১৯৬৯ গুঞ্জা শহরে প্রথম আধুনিক মসজিদ স্থাপন করে ক্রোয়েশিয়ার মুসলমানরা। বর্তমানে এ দেশে চারটি মসজিদ ও দুটি ইসলামিক সেন্টার রয়েছে। এগুলির মধ্যে আধুনিকতম হল রিজেকা মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টার।
রিজেকা শহরের কথা উঠলেই সবার আগে মনে পড়বে গভীর নীল অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের ঢেউ।তারপরে? শহরটির বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের পরিবেশ। নানা দেশ নানা ভাষার মানুষ এখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে। বহু সংস্কৃতির ধারক এই শহরে ২০১৩ সালে তৈরি হয় বিখ্যাত রিজেকা মসজিদ। কোনও কোনও স্থপতির মতে ইউরোপের অন্যতম নিখুঁত কারুকাজ ও অনুপম সৌন্দর্যের মসজিদগুলির মধ্যে এটি পড়বে। রিজেকা শহরের গোরনজি জামেট এলাকায় অবস্থিত এই মসজিদ থেকে কাভারনার উপসাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।
মসজিদের সূত্রপাত ও নকশা
ক্রোয়েশিয়ার বিখ্যাত অযাবস্ট্রাক্ট মূর্তিশিল্পী ও স্থপতি ছিলেন ডুসান জামোনজা। ১৯৯২ সালে তিনি নিজের নৈপুণ্যে একটি মসজিদের মিনিয়েচার তৈরি করেন। তাঁর জীবনর অন্যতম স্বপ্ন ছিল এই মিনিয়েচারের আকারে সত্যিকারের এক মসজিদ স্থাপন। জামোনজার গুণমুগ্ধ ভক্ত ছিলেন ব্রাঙ্কো ভুইয়িনোভি ও ডার্কো ভ্লাহোভি নামক দুই স্থপতি। তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, ডুসানের মিনিয়েচারের মত করেই বাস্তবে মসজিদ স্থাপিত হবে। ফলে, আজ রিজেকা শহর আলো করে দাঁড়িয়ে রয়েছে এই বিখ্যাত মসজিদ।
রিজেকা মসজিদ ও তার সৌন্দর্য
রিজেকা মসজিদের বৈশিষ্ট্য হল এটি পুরো পুরি গম্বুজ দিয়ে তৈরি। আর “ওভারল্যাপিং” স্থাপত্যের এত সুন্দর উদাহরণ বিশ্বের খুব কম জায়গাতেই রয়েছে। এতে একটি গম্বুজ অপর একটি গম্বুজের উপর স্থাপিত, দেখে মনে হয় তিনটি গম্বুজ আসলে একটিরই অংশ।
মসজিদে রয়েছে একটি একক স্পাইরাল মিনার। এই অনন্য সংযোজন দেখতে দেখতে মনে হয় যেন বেহেস্তে আল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করছে ২৩ মিটার সুউচ্চ এই মিনারটি। ১০ হাজার ৮০০ মিটার জায়গা জুড়ে অবস্থিত মসজিদটির ভিতরের নকশা দেখলে নামাজিদের চোখ জুড়িয়ে যায়। মূল নমাজ আদায়ের জায়গাটিতে প্রায় ১৪০০ মানুষ একসঙ্গে নমাজ পড়তে পারেন।
মসজিদে রয়েছে তিন খানি জলের ফোয়ারা, যা ইসলামে পবিত্রতার ইঙ্গিত। মসজিদটির এক তলায় রয়েছে এক লম্বা হলঘর, মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারের অফিস ও বারান্দা। ইসলামিক সেন্টারটিতে কিন্ডারগার্টেন থেকে পরিসকুল পর্যন্ত কচিকাঁচাদের ইসলাম সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হয়।
১৯৬৮ সাল থেকে রিজেকার মুসলমানরা একটি মসজিদ চেয়েছিলেন শান্তিতে নিজেদের ধর্ম পালন করার জন্য। ২০১৩ সালে তাঁদের হাতে সেই সুযোগ তুলে দিল এ শহরের শান্তির প্রতীক রিজেকা মসজিদ।
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ