আজকে আমরা বিশ্বের প্রথম সেলেব্রিটি শেফ নুরোল্লাহের বিখ্যাত ইয়াখনি পোলাওয়ের রেসিপি আপনাদের সামনে তুলে ধরব। পবিত্র রমযান মাসে সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারের সময় সকলেরই ভাল কিছু খেতে ইচ্ছে করে। এদিকে করোনা পরিস্থিতির কারণে বাইরে বেরনোও ঠিক নয়। তাই বাড়িতেই ভাল খাবার বানিয়ে নিচ্ছেন সকলে। ইয়াখনি পোলাও রান্নায় খুব একটা ঝামেলা নেই। তার উপর মাংস ও মশলার মিশেলে এই পদটি খেতেও সুস্বাদু। কিন্তু তার আগে আপনাদের জানাব কে ছিলেন এই নুরোল্লাহ।
বিশ্বের প্রথম সেলেব্রিটি শেফ নুরোল্লাহ
নুরোল্লাহ ছিলেন সাফাভিদ বংশের রাজপরিবারের খাস বাবুর্চি। পারস্যের ইসলামি ঐতিহ্য ও তার খানাপিনার ইতিহাসকে গড়ে তুলতে সাফাভিদ বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান শাহ আব্বাসের খাস বাবুর্চিখানার প্রধান এই বাবুর্চির অবদান অসীম।
১৫০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৭৩৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত পারস্যে বিখ্যাত সাফাভিদ বংশের শাসন চলে। বর্তমানের ইরান, অ্যাজারবাইজান, আরমেনিয়া, বাহরিন, পূর্ব জর্জিয়া, আফগানিস্তানের বিস্তীর্ণ অঞ্চল, কুয়েত, ইরাক ও ককেশাসের উত্তরাংশ, তুরস্ক, সিরিয়া, পাকিস্তান, উজবেকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান জুড়ে ছিল সাফাভিদ সুলতানদের রাজত্ব। সাফাভিদ বংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান শাহ আব্বাসের আমলে শিল্পকলা, জ্ঞানবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে স্বর্ণযুগের সূচনা হয়।
আরও পড়তে পারেন-
- আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে ইসলামের ভূমিকা
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন হুমকির মুখে না পড়ে
- সমৃদ্ধ জাতি নির্মাণে দরকার বুদ্ধিবৃত্তিক জাগরণ ও আলেমদের এগিয়ে আসা
- সালাম-কালামের আদব-কায়দা
- বিবি খাদিজা (রাযি.): ইসলাম ধর্মের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ নারী
বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থ থেকে জানা যায়, সেই সময় সাফাভিদ সুলতানদের রাজধানী ইস্ফাহানের রমরমা এতই বেশি ছিল যে তা বিশ্বের দরবারে ‘নেসফ-এ-জাহান’ বা অর্ধেক পৃথিবী বলে পরিচিত ছিল। এইসময়েই শাহ আব্বাসের খাস বাবুর্চি নুরোল্লাহের তত্ত্বাবধানে বাদশাহি হেঁশেলে চলত নানারকম পদ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
খানদানি সাফাভিদ রান্নার কারিগর নুরোল্লাহ
আজও নুরোল্লাহের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব একটা বেশি কিছু জানা না গেলেও, নুরোল্লাহের লেখা ‘মোদ্দাৎ ওল-হায়াৎ: রেসালাহ দার এলম-এ-তাব্বাখি’ নামক গ্রন্থ থেকে তাঁর রান্না করা সে যুগের বেশ কিছু বিখ্যাত রেসিপির সন্ধান পেলে। মজার ব্যাপার, সে যুগের অন্য অনেক গ্রন্থ ধ্বংস হয়ে গেলেও ১৫৯৪ সালে লেখা এই বইটি টিকে গিয়েছিল! ‘মোদ্দাৎ ওল-হায়াৎ: রেসালাহ দার এলম-এ-তাব্বাখি’, এর বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘জীবনের সারমর্ম: রন্ধনশিল্প বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ’। সাফাভিদ সুলতানরা যা খেতেন, তারই কিছু রেসিপি সংরক্ষিত রয়েছে পাতলা এই বইটির দু’মলাটের মধ্যে। ছ’টি অধ্যায়ে ভাগ করা এই বইটির বেশ কিছু রেসিপি নুরোল্লাহ বাদশাহের জন্য নিজে হাতে আবিষ্কার করেছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে নানারকম সুপ, কারি, স্টু, পালাভ (মশলাদার ভাত, যা ভারতীয় উপমহাদেশে পোলাও, তুরস্কে পিলাফ ও স্পেনে পায়েলা নামে পরিচিত), পোরিজ পেস্ট্রি ইত্যাদি। বইটি ভাল করে খুঁটিয়ে পড়লেই দেখা যায়, অটোমান সাম্রাজ্য ও মুঘল সাম্রাজ্যের শাহি বাবুর্চিখানার খানাপিনার উপরেও নুরোল্লাহের ‘মোদ্দাৎ ওল-হায়াৎ: রেসালাহ দার এলম-এ-তাব্বাখি’-র প্রভাব ছিল গভীর।
নুরোল্লাহের পছন্দের ইয়াখনি পোলাও-য়ের রেসিপি
আজকে সেই ‘মোদ্দাৎ ওল-হায়াৎ: রেসালাহ দার এলম-এ-তাব্বাখি’ থেকেই আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম সাফাভিদ সুলতানি শাসনকালের খাস বাবুর্চি নুরোল্লাহের পছন্দের বিখ্যাত ইয়াখনি পোলাও বানানোর তরিকা।
উপকরণ
ভেড়ার কাঁধের অংশের মাংস ৩ পাউন্ড বা ১ কেজি ৪০০ গ্রাম মতো
পেঁয়াজ ১টা বড়
লবণ দেড় চা চামচ
শাহি জিরা ১/২ চা চামচ
দারচিনি ১ চা চামচ
গোলমরিচ ১/২ চা চামচ
আদা ১/২ চা চামচ
লবঙ্গ ১/২ চা চামচ
কাবুলিচানা ১ কাপ
চাল ২ কাপ
মাখন ১/৪ কাপ
কীভাবে বানাবেন ইয়াখনি পোলাও?
১. একটি পাত্রে ৬ কাপ পানি নিয়ে তাতে শাহি জিরা, দারচিনি, গোলমরিচ, আদা, লবঙ্গ দিন। ওতে মাংস ও পেঁয়াজ দিয়ে মিনিট ২০ ধরে হালকা আঁচে ফুটিয়ে নিন।
২. এবার ওর মধ্যে কাবুলিচানা দিয়ে আরও ২০-৩০ মিনিট ফুটিয়ে নিন। মাংস ও কাবুলিচানা নরম হয়ে গেলে সেগুলিকে ঝোল থেকে সরিয়ে নিন। অন্য একটি পাত্রে রাখুন, খেয়াল রাখবেন, মাংস ও কাবুলিচানা যেন ঠান্ডা না হয়ে যায়।
৩. ওই ইয়াখনির মধ্যে চাল ও মাখন দিয়ে ফুটিয়ে নিন। একবার ফুটে উঠলে ৩০ মিনিট ঢিমে আঁচে বসিয়ে রাখুন। চাল নরম হয়ে না যাওয়া পর্যন্ত ঢিমে আঁচে চুলায় বসিয়ে রাখুন।
৪. এরপর এককাপ ভাত ছাড়া বাকি চালের সবটুকুই একটি থালায় সাজান। ওর উপরে মাংসের টুকরোগুলো ও সিদ্ধ করে রাখা কাবুলিচানা সাজিয়ে দিন। বাকি চাল তার উপরে দিয়ে দিন। তাহলেই তৈরি সুস্বাদু ইয়াখনি পোলাও।
তাহলে দেখতেই পাচ্চেন খানদানি ইয়াখনি পোলাও বানানো কী সহজ! এবার ইফতারের সময় গরম গরম পরিবেশন করুন নুরোল্লাহের প্রিয় এই পোলাও। দেখবেন একসঙ্গে বসে ইফতারের আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যাবে।
(রেসিপি: ‘ডাইনিং অ্যাট দ্য সাফাভিদ কোর্ট। মোদ্দাৎ ওল-হায়াৎ। এম.আর. ঘানুনপারভার দ্বারা অনুবাদিত। মাজদা পাবলিকেশন, ক্যালিফোর্নিয়া।)
উম্মাহ২৪ডটকম: এসএএ